a আজ ২০৪ ইউনিয়নে ভোট গ্রহণ শুরু
ঢাকা মঙ্গলবার, ১ পৌষ ১৪৩২, ১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫
https://www.msprotidin.com website logo

আজ ২০৪ ইউনিয়নে ভোট গ্রহণ শুরু


এমএস.প্রতিদিন ডেস্ক:
সোমবার, ২১ জুন, ২০২১, ০৯:২০
আজ ২০৪ ইউনিয়নে ভোট গ্রহণ শুরু

ফাইল ছবি

প্রথম ধাপের ২০৪টি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ভোট শুরু হয়েছে। আজ (সোমবার) সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত একটানা চলবে ভোটগ্রহণ। প্রথম ধাপে মাত্র ২০টি ইউপিতে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট নেয়া হবে একং বাকি ১৮৪টি কেন্দ্রে ভোট নেয়া হচ্ছে ব্যালট পদ্ধতিতে।

প্রথমে ইসি ৩৬৭টি ইউপিতে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করলেও করোনা ঝুঁকি প্রবন এলাকার ১৬৩টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন স্থগিত ঘোষণা করে। এছাড়া লক্ষ্মীপুর-২ আসনের উপ-নির্বাচন ও দু’টি পৌরসভা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ একই সাথে শুরু হয়েছে।

নির্বাচনে মোবাইল পুলিশের সদস্য থাকবেন ২০৪ জন, স্ট্রাইকিং পুলিশ ৭৪ জন। র‌্যাবের ১২৪টি টিম, বিজিবি ১২৩টি প্লাটুনসহ মোট ৫০৮৮টি ফোর্স মোতায়েন থাকবে। অন্যদিকে, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ৩৯৩ জন এবং ৪১ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মাঠে থাকবেন। প্রিজাইডিং ও সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারের সংখ্যা ১২ হাজার ২০৭ জন। আর পোলিং অফিসারের সংখ্যা ২০ হাজার ৫২০ জন।

এই ভোটের দিন নির্বাচনী এলাকায় কোনো সাধারণ ছুটি থাকবে না। তবে ভোটকেন্দ্রসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও কর্মকর্তারা সাধারণ ছুটিতে থাকবেন। 

মুক্তসংবাদ প্রতিদিন / কে. আলম

আরও পড়ুন

কোন ‘স্ট্যাটাসে’ ভারতে রাখা হয়েছে শেখ হাসিনাকে: বিবিসি বাংলা


মুক্তসংবাদ প্রতিদিন ডেস্ক
মঙ্গলবার, ২০ আগষ্ট, ২০২৪, ০১:৫০
কোন ‘স্ট্যাটাসে’ ভারতে রাখা হয়েছে শেখ হাসিনাকে: বিবিসি বাংলা

ফাইল ছবি: শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা


ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি বিমান শেখ হাসিনা ও তার ছোট বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে নিয়ে দিল্লির কাছে গাজিয়াবাদের হিন্ডন বিমানঘাঁটিতে অবতরণ করে। সেদিন সন্ধ্যায় ওই বিমানঘাঁটিতে তাদের স্বাগত জানান ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল।

তার পরদিন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর দেশের পার্লামেন্টে জানান, ভারত সরকারের কাছে শেখ হাসিনা ‘সাময়িকভাবে’এ দেশে আসার অনুমোদন চেয়েছিলেন এবং তা মঞ্জুর হওয়ার পরই তিনি ভারতের মাটিতে পা রেখেছেন।

সেই থেকে শেখ হাসিনা এখনও পর্যন্ত ভারতেই আছেন। যতদূর জানা যাচ্ছে দিল্লির উপকণ্ঠে একটি আধাসামরিক বাহিনীর অতিথিনিবাস বা ‘সেফ হাউসে’ই দুই বোনকে একসঙ্গে রাখা হয়েছে। তবে এই মুহূর্তে তাদের ঠিকানা কী, সেটা সরকারিভাবে কখনওই প্রকাশ করা হয়নি।

শেখ হাসিনা ঠিক কোন ‘ইমিগ্রেশন স্ট্যাটাসে’ ভারতে রয়েছেন, সে ব্যাপারেও এখনও পর্যন্ত ভারত সরকার সম্পূর্ণ নীরব রয়েছে।

অর্থাৎ তিনি কোনও বিশেষ ভিসায় ভারতে অবস্থান করছেন, না কি তাকে রাজনৈতিক আশ্রয় (পলিটিক্যাল অ্যাসাইলাম) দেওয়া হয়েছে – এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিকভাবে ভারত সরকার আজ পর্যন্ত একটি শব্দও খরচ করেনি।

এই কারণেই প্রশ্ন উঠছে, ভারতে এই মুহূর্তে তার অবস্থানের ইমিগ্রেশন (অভিবাসন)-গত বৈধতাটা ঠিক কী এবং সেই স্ট্যাটাস কতদিন পর্যন্ত বৈধ থাকতে পারে?

দিল্লিতে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে বিবিসি বাংলা এই প্রশ্নের যে জবাব পেয়েছে তা এরকম- বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনার যে ‘ডিপ্লোম্যাটিক/অফিশিয়াল’ পাসপোর্ট ছিল তা এখনও বৈধ এবং সেই পাসপোর্টের সুবাদে তিনি অন্তত দেড় মাস কোনও ভিসা ছাড়াই অনায়াসে ভারতে অবস্থান করতে পারেন।

ফলে যদি-না এর মধ্যে সেই পাসপোর্ট ‘রিভোকড’ বা প্রত্যাহৃত হয়, তাহলে এই সময়সীমার মধ্যে অন্তত ভারতে তার বর্তমান অবস্থান সম্পূর্ণ আইনসম্মত, ভারতের এ ক্ষেত্রে আলাদা করে কোনও ব্যবস্থা নেওয়ারও প্রয়োজনও নেই।”

ভারতীয় কর্মকর্তারা বলছেন, শেখ রেহানার ক্ষেত্রে অবশ্য এই জটিলতাটুকুও নেই, কারণ তিনি ব্রিটেন বা যুক্তরাজ্যের পাসপোর্টধারী – ফলে সাধারণ ‘ভিসা অন অ্যারাইভালে’ই (ভারতের মাটিতে পা রাখার পর ব্রিটিশ নাগরিকদের যে ভিসা মঞ্জুর করা হয়, তিনি কার্যত যতদিন খুশি ভারতে থাকতে পারেন।

শেখ হাসিনার ভারতে বর্তমানের অবস্থানের ইমিগ্রেশন সংক্রান্ত বিষয়টিকেই এই প্রতিবেদনে ব্যাখ্যা করা হয়েছে।

ভারত সরকার যা বলছে-
গত ১৬ অগাস্ট (শুক্রবার) বিকেলে দিল্লিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিয়মিত সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে ঠিক এই বিষয়টি নিয়েই মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়ালকে নির্দিষ্ট প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছিল।

সে দিন তার কাছে জানতে চাওয়া হয়, “প্রায় দু’সপ্তাহ হল বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিল্লিতে অবতরণ করেছেন। আপনি কি আমাদের বলতে পারেন তার এই অবস্থানের (ইমিগ্রেশন-গত) স্ট্যাটাসটা কী ... অর্থাৎ তিনি কি নিয়মিত ভিসায় এ দেশে আছেন? না কি তিনি রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করেছেন? না কি তাকে কোনও ধরনের গৃহবন্দি বা অন্তরীণ অবস্থায় (ডিটেনশনে) রাখা হয়েছে?”

“প্রশ্নটা এই কারণেই করা, যে আমরা নানা ধরনের পরস্পরবিরোধী সংকেত পাচ্ছি। তার কন্যা (সাইমা ওয়াজেদ পুতুল) টুইট করেছেন যে তিনি মা-র সঙ্গে দেখা করতে পারেননি। আবার এর পাশাপাশি, আমেরিকায় অবস্থানরত তার ছেলের (সজীব ওয়াজেদ জয়) মাধ্যমে শেখ হাসিনা বিবৃতিও জারি করেছেন। ফলে শেখ হাসিনার ভারতে অবস্থানের প্রকৃত স্ট্যাটাস নিয়ে যে বিভ্রান্তি তৈরির অবকাশ হচ্ছে, তার বদলে ভাল হয় যদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আমাদের জানায় ঠিক কোন শর্তের অধীনে তিনি এ দেশে রয়েছেন।”

যে সাংবাদিক এই প্রশ্নটি করেছিলেন, তিনি শেখ হাসিনাকে ‘বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী’ বলে উল্লেখ করেছিলেন। মুখপাত্র কিন্তু তার জবাব দেওয়ার সময় প্রথমেই স্পষ্ট করে দেন, তিনি ‘সাবেক প্রধানমন্ত্রী’কে নিয়ে কথা বলছেন!

রণধীর জয়সওয়াল তখন বলেন, “আমরা গত সপ্তাহেও এই বিষয়টি ব্যাখ্যা করেছিলাম যে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ভারতে আসার বিষয়টি অনুমোদন করা হয়েছিল খুব স্বল্প সময়ের নোটিশে।”

“এই পরিস্থিতি এখনও ক্রমাগত পাল্টাচ্ছে (‘ইভলভিং’)। এই মুহূর্তে অন্তত তার (শেখ হাসিনার) পরিকল্পনা নিয়ে আমাদের নতুন করে কিছু জানানোর নেই”, বলেন তিনি।

    পুলিশের ১২ কর্মকর্তাকে ডিএমপিতে বদলিপুলিশের ১২ কর্মকর্তাকে ডিএমপিতে বদলি

১৬ অগাস্ট মুখপাত্রের এই বক্তব্য ছিল ঠিক তার দশদিন আগে (৬ অগাস্ট) পার্লামেন্টে করা পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের বক্তব্যের হুবুহু প্রতিধ্বনি।

সে দিন মি জয়শঙ্কর সভায় জানিয়েছিলেন, শেখ হাসিনা ৫ই অগাস্ট পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর “খুব অল্প সময়ের নোটিশে তখনকার মতো (‘ফর দ্য মোমেন্ট’) ভারতে আসার জন্য অনুমোদন (‘অ্যাপ্রুভাল’) চান। একই সঙ্গে (শেখ হাসিনার বিমানের জন্য) ফ্লাইট ক্লিয়ারেন্সের অনুমতিও চাওয়া হয় বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের তরফে।”

বাংলাদেশের পরিস্থিতি বর্ণনা করার জন্য মি জয়শঙ্কর সে দিনও এই ‘ইভলভিং’ বা পরিবর্তনশীল শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন।

ভারতের সরকারি অবস্থানে যে মাঝের এই কয়েকদিনে এতটুকুও পরিবর্তন হয়নি, তা এই ধরনের বক্তব্য থেকেই স্পষ্ট।

এরপরও মূল প্রশ্নটা থেকেই যাচ্ছে, তাহলে শেখ হাসিনা ভারতে এই মুহুর্তে ঠিক কীসের ভিত্তিতে আছেন?

দিল্লিতে একাধিক শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা আভাস দিয়েছেন, ভারতে শেখ হাসিনার এই মুহুর্তে অবস্থানের ভিত্তিটা হলো ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত ‘সংশোধিত ট্র্যাভেল অ্যারেঞ্জমেন্ট’।

দুই দেশের শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদি সরকারের মধ্যে ঢাকাতে এই সমঝোতা স্বাক্ষরিত হয়েছিল ২০১৮ সালের ১৫ জুলাই।

ভারতের পক্ষে ওই সমঝোতাপত্রে সই করেছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন বিশেষ সচিব (বাংলাদেশ ও মিয়ানমার) ব্রজরাজ শর্মা। আর বাংলাদেশের পক্ষে স্বাক্ষরকারী ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিরাপত্তা পরিষেবা বিভাগের তখনকার সচিব ফরিদউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী।

প্রাথমিকভাবে পাঁচ বছর মেয়াদী এই সমঝোতাটি তারপর নিয়মিত ব্যবধানে নবায়ন করার কথা, যা এ বছরের গোড়ার দিকে করাও হয়েছে।

ওই সমঝোতাপত্রের ১(এ) ধারাতেই পরিষ্কার উল্লেখ করা আছে, উভয় দেশের ডিপ্লোম্যাটিক ও অফিশিয়াল পাসপোর্টধারীদের ৪৫ দিনের মেয়াদে ভিসা ছাড়াই বসবাসের জন্য (‘ভিসা ফ্রি রেজিম’) থাকতে দিতে দুই দেশ পারস্পরিকভাবে রাজি হয়েছে।

অর্থাৎ কি না, এই সমঝোতা অনুযায়ী বাংলাদেশের ডিপ্লোম্যাটিক/অফিশিয়াল পাসপোর্টধারীরা ভারতে ভিসা ছাড়াই ৪৫ দিন থাকতে পারবেন- আবার অন্যদিকে ভারতের ওই বিশেষ ধরনের পাসপোর্টধারীরা বাংলাদেশেও ঠিক একই সুবিধা পাবেন।

প্রসঙ্গত, রাষ্ট্র বা সরকারের যে পদাধিকারীদের কূটনৈতিক বা সরকারি কোনও প্রয়োজনে বিদেশে সফর করতে হয়, তাদেরই এই ‘ডিপ্লোম্যাটিক’ বা ‘অফিশিয়াল’ বা ‘সার্ভিস’ পাসপোর্ট ইস্যু করা হয়ে থাকে। - বিবিসি বাংলা

 

মুক্তসংবাদ প্রতিদিন / কে. আলম

চিন্তা ও মননে এক আধুনিক মানুষের নাম দুর্গেশ চন্দ্র পত্রনবীশ


এমএস.প্রতিদিন ডেস্ক:
সোমবার, ১২ এপ্রিল, ২০২১, ১০:১১
চিন্তা ও মননে এক আধুনিক মানুষের নাম দুর্গেশ চন্দ্র পত্রনবীশ

দুর্গেশ চন্দ্র পত্রনবীশ

দুর্গেশ চন্দ্র পত্রনবীশ! নেত্রকোণার মানুষের কাছে 'লালুবাবু' হিসেবেই অধিক পরিচিতি। ছিলেন ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম সংগঠক, অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব, সাহিত্যিক, নাট্যাভিনেতা, সাংবাদিক,  শিক্ষক এবং খ্যাতি অর্জন করেছিলেন আইনজীবী হিসেবে। জীবনকে ছড়িয়েছেন এবং জড়িয়েছেন নানা মাত্রায়, নানা আঙিনায়।

ছিমছাম একহারা গড়নের প্রখর ব্যক্তিত্বের মানুষ ছিলেন দুর্গেশ চন্দ্র পত্রনবীশ। ১৯২১ সালের ১২ই এপ্রিল ময়মনসিংহ শহরের গিরীশ চক্রবর্তী রোডে মাতামহ আইনজীবী শরৎচন্দ্র অধিকারীর বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন দুর্গেশ চন্দ্র পত্রনবীশ। মূল নিবাস নেত্রকোণা জেলার মদন উপজেলার কাইটাইল ইউনিয়নের বাড়রি গ্রামে। 

পিতা স্বর্গীয় রমেশচন্দ্র পত্রনবীশ, মাতা স্বর্গীয়া লাবন্য প্রভা দেবী। তাঁর পিতাও ছিলেন আইনজীবী এবং নেত্রকোণা শহরের নিউটাউনস্থ নিজ বাসভবনে থেকেই আইনপেশায় যুক্ত ছিলেন তিনি। পাঁচ ভাই (শৈলেশ চন্দ্র পত্রনবীশ, জিতেশ চন্দ্র পত্রনবীশ, দুর্গেশ চন্দ্র পত্রনবীশ, ভবেশ চন্দ্র পত্রনবীশ, জ্ঞানেন্দ্র চন্দ্র পত্রনবীশ) এবং দুই বোন (অতশী রায় ও নীলিমা চক্রবর্তী।) এর মধ্যে সন্তান হিসেবে চতুর্থ ও ভাইদের মধ্যে তৃতীয় দুর্গেশ চন্দ্র পত্রনবীশ।
 
মানুষের ভেতর একটি আহবান আছে। সেই আহ্বান রবীন্দ্রনাথের কথায়, 'দুর্গম পথের ভেতর দিয়ে পরিপূর্ণতার দিকে, অসত্যের থেকে সত্যের দিকে, অন্ধকার থেকে জ্যোতির দিকে, মৃত্যুর থেকে অমৃতের দিকে, দুখের মধ্যে দিয়ে, তপস্যার মধ্যে দিয়ে।' এই আহবান মানুষকে কোথায়ও থামতে দেয় না, 'চিরপথিক' করে রেখে দেয়।  দুর্গেশ পত্রনবীশ এই ডাক শুনতে পেয়েছিলেন। পেয়েছিলেন বলেই রয়ে গেলেন 'চিরপথিক' হয়ে। তাঁর জীবনাচরণ গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করলে এই সত্যটি সহজেই বুঝা যায়। 

দুর্গেশ চন্দ্র পত্রনবীশের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার শুরু নিজ গ্রামের বাড়রি স্কুলে (বর্তমানে বাড়রি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়)। সেখান থেকে প্রথম শ্রেণির পাঠ শেষ করে ১৯২৮ সালে নেত্রকোণা শহরের তৎকালীন খ্যাতনামা বিদ্যাপীঠ চন্দ্রনাথ উচ্চ বিদ্যালয়ে দ্বিতীয় শ্রেনীতে ভর্তি হয়ে এ বিদ্যালয় থকেই ১৯৩৭ সালে প্রথম বিভাগে মেট্রিকুলেশন পাশ করেন। এরপর ময়মনসিংহের আনন্দমোহন কলেজ থেকে ১৯৩৯ সালে প্রথম বিভাগে আইএ এবং ১৯৪১ সালে বিএ পাশ করেন। 

রাজনৈতিক কর্মকান্ডে সক্রিয় থাকায় মাঝখানে কয়েক বছর লেখাপড়ায় ছেদ পড়ে। '৪৭ এর দেশ বিভাগের পর রাজনৈতিক বন্দী হিসেবে কলকাতার দমদম কারাগারে বন্দি অবস্থাতেই পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে ১৯৫২ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় এমএ পাশ করেন দুর্গেশ পত্রনবীশ।
 
এর এক যুগ পর ১৯৬৪ সালে ঢাকা সিটি ল' কলেজ থেকে এলএলবি পাশ করে নেত্রকোণা বারে যোগ দিয়ে  আইনজীবি হিসেবে কাজ শুরু করেন এবং দীর্ঘ ৪৫ বছর আইন পেশায় যুক্ত থেকে আইনজ্ঞ হিসেবে নিজেকে উত্তীর্ণ করেছিলেন ব্যক্তি থেকে প্রতিষ্ঠানে। দুর্গেশ চন্দ্র পত্রনবীশ ১৯৬০ সালে বগুড়ার এক রাজনৈতিক ঐতিহ্যবাহী পরিবারের কন্যা মিনতি ভট্টাচার্যের (পরবর্তীতে পত্রনবীশ) সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। বৃটিশ খেদাও আন্দোলন, পাকিস্তান বিরোধী সংগ্রামে সেই পরিবারেরও সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল। এখনো প্রগতিশীল লড়াই সংগ্রামে সেই পরিবার বগুড়ায় অগ্রণী ভুমিকা পালন করে। 

মিনতি ভট্টাচার্যের বাবার নাম ঋষিকেশ ভট্টাচার্য, মা সুষমা ভট্টাচার্য। বাবা ছিলেন আইনজীবী। এগার ভাই বোনের মধ্যে (৫ বোন ৬ ভাই) চতুর্থ সন্তান মিনতি ভট্টাচার্য আই এ পাশ করে বগুড়া ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল বালিকা বিদ্যালয়ে এক যুগের অধিক সময় শিক্ষকতা করেন। 

দুর্গেশ চন্দ্র পত্রনবীশ কৈশোর ও যৌবন কাটিয়েছেন এমন একটি কালে যে সময়টিকে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম বলেছিলেন 'অসম্ভবের সম্ভাবনার যুগ'। একদিকে রাশিয়ায় সংঘটিত অক্টোবর সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের মাধ্যমে ইতিহাসে প্রথমবারের মত মানুষের উপর মানুষের শোষনের অবসান ঘটিয়ে মানবমুক্তির অপার সম্ভাবনার দুয়ার খুলে যায়, অন্যদিকে এর অভিঘাতে ঔপনিবেশিক শাসন ও শোষনের নিগড়ে আবদ্ধ দেশোগুলোতে স্বাধীনতার আকাঙ্খা অভাবনীয়ভাবে তীব্র গতি লাভ করে। আর এর প্রভাবে এই সব দেশের মানুষের চেতনাগত উৎকর্ষতা এক অন্যমাত্রায় উত্তীর্ণ হয়। 

যেকোনো ধরনের ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত হয়ে যায় তারা। ভারতীয় উপমহাদেশেও এর ঢেউ এসে লাগে ভালোভাবেই। অহিংস অসহযোগ, খেলাফত আন্দোলন, ভারত ছাড় আন্দোলনের পাশাপাশি বিপ্লবী লড়াই, চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন, নৌ বিদ্রোহ ইত্যাদির কারণে উপমহাদেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক পরিস্থিত তখন টালমাটাল।
 
নেত্রকোণা শহরের নিউটাউনস্থ আইনজীবী পিতার বাসভবনে যাতায়াত ছিল তৎকালীন অনেক বিপ্লবীর। তাঁদের সংস্পর্শে এসে দেশপ্রেমের মন্ত্রে দীক্ষিত হন দুর্গেশ পত্রনবীশ এবং দেশমাতার মুক্তি ও শোষণের নিগড় থেকে মানুষকে মুক্ত করার সংগ্রামে যুক্ত করেন নিজেকে। দেশ তখন ঔপনিবেশিক শাসন থেকে মুক্তির জন্য প্রস্তুত হচ্ছিল ভালোভাবেই। এ সময় নিউটাউনের বাসায় বিপ্লবীদের আনাগোনায় তাঁর মধ্যে স্বদেশ চেতনার সাথে সাথে সমাজতান্ত্রিক ভাবধারারও উন্মেষ ঘটে। 

তিনি সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থাকেই মানুষের সার্বিক মুক্তির উপায় হিসেবে মনে করেন এবং যোগ দেন নিখিল ভারত ছাত্র ফেডারেশনে, যে সংগঠনটি ছিল রেভ্যুলেশনারী সোশালিস্ট পার্টির (আরএসপি) সহযোগী ছাত্র সংগঠন।

নেত্রকোণায় তিনি আরএসপি'র শাখা গঠন করেন এবং  তাঁর কর্ম দক্ষতায় খুব দ্রুতই আরএসপি একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে নেত্রকোণায়। কর্মনিষ্ঠার কারণে দুর্গেশ পত্রনবীশ ১৯৪২ সালে যুক্তবাংলা ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন তখন তুঙ্গে। কলকাতায় গ্রেফতার হলেন দুর্গেশ পত্রনবীশ। দীর্ঘ চার বছর কারাভোগের পর মুক্তি পান।
 
১৯৫৪ সালে পাকিস্তান জাতীয় কংগ্রেস মনোনীত প্রার্থী হিসেবে নেত্রকোণার দশটি এবং কিশোরগঞ্জের আটটি থানা নিয়ে গঠিত বর্ণ হিন্দুদের জন্যে সংরক্ষিত প্রাদেশিক পরিষদের একটি আসন থেকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা  করেছিলেন দুর্গেশ পত্রনবীশ। তখন পৃথক নির্বাচন পদ্ধতি প্রচলিত ছিল পাকিস্তানে। ১৯৫৬ সালে আবার তিনি গ্রেফতার হন।
 
আইনজীবী হিসেবে কাজ শুরু করার প্রাথমিক পর্যায়ে ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধের সময় পুনরায় তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। একদিকে অতিরিক্ত পরিশ্রম অন্যদিকে বারবার কারাবাসের ফলে স্বাস্থ্য ভেঙে পড়ে এবং মারাত্মকভাবে যক্ষায় আক্রান্ত হন তিনি। তখন যক্ষা রোগের তেমন কোনো চিকিৎসা ছিল না; বলা হতো 'যার হয় যক্ষা, তার নাই রক্ষা।' এ অবস্থায় চূড়ান্ত ঝুঁকি নিয়ে ফুসফুসে অস্ত্রোপচার করা হয় তাঁর এবং ফুসফুসের আক্রান্ত একটি অংশের পাশাপাশি পাঁজরের তিনটি হাড় কেটে বাদ দেওয়া হয়। এ ঘটনা দুর্গেশ পত্রনবীশের জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। এরপর সক্রিয় রাজনৈতিক  তৎপরতা থেকে গুটিয়ে নিয়েছিলেন নিজেকে।

আনন্দমোহন কলেজে অধ্যয়নকালীন ১৯৪০ সালে কলেজ ছাত্র সংসদের সাহিত্য সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। ১৯৪৮-৪৯ সালে বাংলা সাহিত্যের শিক্ষক ছিলেন কলকাতার সাউথ সুব্বার্ন হাইস্কুলে শিক্ষকতাও করেছেন দুর্গেশ পত্রনবীশ। এরপর আবার তাঁকে কারাবরণ করতে হয় এবং ১৯৫৪ সালে কারাগার থেকে বের হয়ে করাচি থেকে প্রকাশিত 'গুডউইল' পত্রিকার তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ঢাকাস্থ প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেন তিনি। ১৯৫৮ সালে তাঁর সম্পাদনায় ঢাকা থেকে  প্রকাশিত  হয় 'সাপ্তাহিক জনতা'।

সাহিত্য চর্চার সাথে ওতপ্রোতভাবে যুক্ত ছিলেন দুর্গেশ পত্রনবীশ। কলকাতা থেকে প্রকাশিত 'প্রবাসী' পত্রিকায় তাঁর লেখা গল্প, প্রবন্ধ 'দ,চ,প' ছদ্মনামে নিয়মিত প্রকাশিত হতো। সিদ্ধার্থ মৈত্র ছদ্মনামে লিখেন উপন্যাস 'মিরা মিত্র', যা ১৯৬১ সালে প্রকাশিত হয় এবং বিদগ্ধ মহলে সাড়া জাগিয়েছিল। নেত্রকোণা থেকে প্রকাশিত 'উত্তর আকাশ' এবং 'সৃজনী' পত্রিকার সাথে যুক্ত থেকে সাহিত্যে চর্চায় যুক্ত থাকেন আজীবন।
 
শান্তিনিকেতনের বাইরে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মদিন প্রথম পালন করা হয়েছিল নেত্রকোণায়, রবীন্দ্র-স্নেহধন্য সংগীতাচার্য শৈলাজারঞ্জনের উদ্যোগে এবং আরেক প্রাতঃস্মরণীয় ব্যক্তি সত্যকিরণ আদিত্যের নেতৃত্বে, ১৯৩২  সালে। সেই উদ্যোগে অংশগ্রহণ করেছিলেন শিশু দুর্গেশ পত্রনবীশ এবং পরবর্তী সময়ে নেত্রকোণায় রবীন্দ্রজয়ন্তী উদযাপনে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছিলেন তিনি।
 
১৯৭৩-১৯৭৪ সালে নেত্রকোণা সাধারণ গ্রন্থাগারের সম্পাদক ছিলেন। ২০০০ সালে নির্বাচিত হয়েছিলেন নেত্রকোণা জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি। বিশিষ্ট নাট্যশিল্পী হিসেবে ১৯৮৮ সালে নেত্রকোণা জেলা উদীচি শিল্পী গোষ্ঠী তাঁকে সম্মাননা প্রদান করে। নেত্রকোণা ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতির দায়িত্বও পালন করেছেন দুর্গেশ পত্রনবীশ।  

এছাড়াও রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, নেত্রকোণা শিল্পকলা একাডেমি, পাবলিক লাইব্রেরি ও ডায়াবেটিক সমিতির আজীবন সদস্য ছিলেন দুর্গেশ পত্রনবীশ। ছিলেন নেত্রকোণা 'ল' কলেজের খন্ডকালীন অধ্যাপক ও টিচার্স ট্রেনিং কলেজের আইন উপদেষ্টা। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে যুক্ত হয়েছিলেন ভিন্নধর্মী এক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কাটলির অন্বেষা বিদ্যালয়ের সাথে। আমৃত্যু তিনি এই প্রতিষ্ঠানের সাংগঠনিক কমিটির সভাপতি ছিলেন। ছিলেন প্রত্যাশা সাহিত্য গোষ্ঠীর উপদেষ্টা।

২০০৭ সালের ২৯ নভেম্বর ৮৬ বছর বয়সে রাত আনুমানিক ৯.৩৪ এ নেত্রকোণার নিউটাউনস্থ বড়পুকুর পাড়ের নিজ বাসভবনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন বর্ণাঢ্য জীবনের অধিকারী দুর্গেশ চন্দ্র পত্রনবীশ। মৃত্যুকালে স্ত্রী মিনতি পত্রনবীশ, দুই পুত্র শান্তনু পত্রনবীশ (আইনজীবী) এবং অতনু পত্রনবীশ(ব্যবসায়ী), দুই পুত্রবধূ এবং দুই নাতি ও এক নাতনিসহ অসংখ্য গুনগ্রাহী রেখে গিয়েছিলেন তিনি। গত ৩১ জানুয়ারি, ২০২১ দুপুর ৩টায় ৯১ বছর বয়সে না-ফেরার ভুবনে পাড়ি জমান স্ত্রী মিনতি পত্রনবীশ।

তিনি জীবনাচরণে, চিন্তা ও মননে ছিলেন আধুনিক, জীবন ঘনিষ্ঠ, দেশপ্রেমিক এবং আন্তর্জাতিকতাবাদী।


জন্মশতবার্ষিকীতে অপার শ্রদ্ধা---/স্বপন পাল

মুক্তসংবাদ প্রতিদিন / কে. আলম
Share on Facebook

মুক্তসংবাদ প্রতিদিন এর সর্বশেষ

সর্বশেষ - জাতীয়