a
ছবি সংগৃহীত
ভারত আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং তাদের উপেক্ষা করা সম্ভব নয়। আমরা সবাই জানি, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে ভারত আমাদের সর্বাত্মক সহায়তা দিয়েছিল। এটি একটি ঐতিহাসিক সত্য যে, তাদের প্রত্যক্ষ সমর্থনের কারণে মাত্র নয় মাসের মধ্যেই আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি। অনেকেই মনে করেন, ভারত আমাদের পাশে না থাকলে বাংলাদেশ কখনোই সৃষ্টি হতো না।
তবে আমরা কি কখনো ভেবেছি, ভারত কেন আমাদের সাহায্য করেছিল? অনেকেই বলবেন, ভারত একটি দুর্বল পাকিস্তান দেখতে চেয়েছিল। যখন সুযোগ তাদের হাতে আসে, তখন তারা তা লুফে নিতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা করেনি। এটি ভারতীয় স্বার্থের একটি সাধারণ উপলব্ধি। যখন মুক্তিযোদ্ধারা ভালো অবস্থানে ছিল, তখন ভারত পাকিস্তানের সাথে সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে এবং কয়েক দিনের মধ্যে বিজয় অর্জন করে। বলা হয়ে থাকে, ভারত আমাদের বিজয় ছিনিয়ে নিয়ে সেটিকে তাদের বিজয় হিসেবে ঘোষণা করেছিল। এটি আমাদের ভাগ্যের নির্মম পরিহাস।
১৬ই ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর লে. জেনারেল নিয়াজি ভারতীয় সেনাবাহিনীর লে. জেনারেল অরোরার কাছে আত্মসমর্পণের চুক্তিতে সই করেন এবং আনুষ্ঠানিকভাবে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ভারতীয় সেনাবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের জন্ম হয়। কিন্তু বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর প্রধান জেনারেল ওসমানীকে আত্মসমর্পণের অনুষ্ঠানে অংশ নিতে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। বলা হয়ে থাকে, পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ভারতীয় বিজয় দেখানোর জন্য বাংলাদেশকে ইচ্ছাকৃতভাবে বাদ দেওয়া হয়েছিল।
গত ৫৩ বছর ধরে ভারতীয় মিডিয়া, বুদ্ধিজীবী এবং ভারত সরকার এই ঘটনাকে তাদের ইতিহাসের এক মহান বিজয় হিসেবে তুলে ধরেছে। কিন্তু আমরা একটি স্বাধীন-সার্বভৌম দেশ হিসেবে কখনোই এই দাবির বিরোধিতা করতে পারিনি। বরং, আমরা তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতাবোধ করে নিজেদের জাতীয় স্বার্থ বিসর্জন দিয়েও তাদের সন্তুষ্ট রাখার চেষ্টা করেছি।
শুধুমাত্র জিয়াউর রহমানের সময়েই বাংলাদেশ সফলভাবে ভারতীয় আধিপত্যবাদী রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছিল। তবে এজন্য তাকে নিজের জীবন দিতে হয়েছিল। পূর্ব পাকিস্তানের মুসলিম লীগ, জামায়াতে ইসলামী এবং চীনপন্থী কিছু রাজনৈতিক দল, যেমন ভাসানীর ন্যাপ, ভারতীয় সমর্থনের আসল উদ্দেশ্য সম্পর্কে সচেতন ছিল।
ভারত ১৯৪৭ সালের বিভাজন মেনে নিতে পারেনি এবং পাকিস্তানের জন্মের প্রথম দিন থেকেই তারা এর বিরুদ্ধে কাজ করে এসেছে। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, যার সত্যতা শেখ মুজিব স্বাধীনতার পরে স্বীকার করেছিলেন, এর একটি স্পষ্ট প্রমাণ।
ভারত পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের ভালো বন্ধু হিসেবে ভান করেছিল শুধুমাত্র পাকিস্তানকে ভেঙে ফেলার এবং একটি উপনিবেশ রাষ্ট্র সৃষ্টি করার জন্য। তাদের উদ্দেশ্য ছিল এক সময়ে এটি ভারতীয় ইউনিয়নের সাথে একীভূত করা।
আজ এটি আরও স্পষ্ট হয়ে গেছে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বক্তব্য থেকে। তিনি প্রকাশ্যে বলেছেন, ১৬ই ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারত এক ঐতিহাসিক বিজয় অর্জন করেছিল। মোদি আরও বলেন, এটি ছিল ভারতের যুদ্ধ, যেখানে ভারতীয় সেনারা সাহসিকতা এবং বীরত্ব প্রদর্শন করেছিল এবং ভারতের জন্য এক গৌরবময় বিজয় এনেছিল। এটি বাংলাদেশের প্রতি ভারতের প্রকৃত অবস্থান প্রকাশ করে।
সম্প্রতি জুলাই-আগস্ট বিপ্লব ২০২৪-এর মাধ্যমে বাংলাদেশ ভারতীয় আধিপত্য থেকে বেরিয়ে এসেছে। কিন্তু ভারত এই পরিবর্তন মেনে নিতে পারেনি এবং বাংলাদেশকে পুনরায় তাদের নিয়ন্ত্রণে আনতে মরিয়া। ভবিষ্যতে তারা বিভিন্ন কার্ড দেখাতে পারে, বিশেষত সংখ্যালঘু কার্ড, খেলার চেষ্টা করবে। এমনো হতে পারে যে কোন একটি ইস্যু ধরে বাংলাদেশের একটি অংশ দাবি করে আক্রমণ করতে পারে।
যদি বাংলাদেশের জনগণ ভারতের স্বার্থের এই সরল সমীকরণটি বুঝতে ব্যর্থ হয়, তবে তা হবে আমাদের জন্য দুর্ভাগ্য। দেশের রাজনৈতিক দলগুলোকে জাতীয়তাবাদী শক্তির পতাকার নিচে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আমাদের অবশ্যই ড. ইউনুস সরকারকে সফলতার সাথে কাজ করার জন্য সহযোগিতা করে যেতে হবে। বর্তমানের অর্ন্তবর্তী সরকারকেও সব দল ও মতকে বিবেচনা রেখে সবাইকে একসাথে ঐক্যমতের ভিত্তিতে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। নির্বাচনের পরও রাজনৈতিক সরকারগুলোকেও ঐক্যমতের ভিত্তিতে দেশ পরিচালনা করলে কোন বহি:শত্রু এদেশে হুমকি হিসেবে দাঁড়াতে পারবেনা।
আমাদের সামনে যে সুযোগ এসেছে, এটি কাজে লাগাতে হবে। আর আমরা যদি এসব সুযোগ কাজে লাগাতে ব্যর্থ হই, তাহলে সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশের আকাশে কালো মেঘ ঘনিয়ে আসার সম্ভাবনা অনেক বেশি।
লেখক: সম্পাদক, মিলিটারি হিস্ট্রি জার্নাল এবং আইন ও ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক।
ফাইল ছবি
বাংলাদেশ প্রেস ক্লাব হবিগঞ্জ জেলা কমিটির সাংবাদিকগণ ঈদ পরবর্তী পূণর্মিলনী ও করোনাকালীন জনকল্যাণে করনীয় শীর্ষক এক বৈঠক ২৩ জুলাই শুক্রবার হবিগঞ্জে অস্থায়ী কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠকে দৈনিক মুক্ত সংবাদ প্রতিদিন-এর সিলেট বিভাগীয় প্রতিনিধি ও বাংলাদেশ প্রেস ক্লাব হবিগঞ্জ জেলার আহ্বায়ক সাংবাদিক শেখ মোঃ আব্দুল কাদির কাজলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়।
সদস্য সচিব এম এ হান্নানের সঞ্চালনায় অন্যান্যদের মাঝে উপস্থিত ছিলেন সাংবাদিকবৃন্দ জনাব মুজিবুর রহমান খান, মীর দুলাল, আছাদুজ্জামান চৌধুরী, শাহেনা আক্তার, শেখ শামসুল ইসলাম, জমির আলী ও নজরুল ইসলাম প্রমুখ।
বৈঠকে করোনার এই দুর্যোগ পরিস্থিতিতে নিজেদের সুরক্ষা রেখে জনসচেতনতামূলক কর্মকান্ডে নিজেদের আরও নিবিড়ভাবে কিভাবে সম্পৃক্ত করা যায়, তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। সভায় সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত হয় নিজেদের সংগঠনগুলোর উদ্যোগে জনসচেতনতার পাশাপাশি মাস্ক ও সুরক্ষা সামগ্রী বিতরণ।
ফাইল ছবি
ইসরায়েল এবং পারস্য উপসাগরীয় কয়েকটি আরব দেশকে সাথে নিয়ে পারস্য উপসাগরে একটি যৌথ সমুদ্র ড্রোন টাস্কফোর্স গঠন করতে যাচ্ছে আমেরিকা।
বুধবার মধ্যপ্রাচ্য ভিত্তিক মার্কিন পঞ্চম নৌবহর এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
মার্কিন পঞ্চম নৌবহর ঘোষণা করেছে যে, তারা একটি নতুন টাস্কফোর্স গঠন করবে যার সঙ্গে এয়ারবোর্ন, নৌ জাহাজ ও আন্ডারওয়াটার ড্রোন যুক্ত থাকবে। সমুদ্রে জাহাজে হামলার ঘটনা নিয়ে যখন ইরোনের সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি আরব দেশ ও ইহুদিবাদী ইসরায়েলের মধ্যে উত্তেজনা চলছে তখন এই ধরণের খবর প্রকাশ পেল।
মার্কিন পঞ্চম নৌবহরের সদরদপ্তর এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। তবে তারা বলেছে আগামী কয়েক মাসের মধ্যে মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চল তাদের ড্রোন বহরের সক্ষমতা দেখবে।
দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে মধ্য এশিয়ায় মার্কিন সেনারা একের পর এক ব্যর্থতার পর নতুন কৌশল গ্রহণ করেছে। এর আওতায় লোকজনের মনোযোগ আকর্ষণ এবং মার্কিন সেনাদের উপস্থিতির বৈধতা দেয়ার লক্ষ্যে সমুদ্রভিত্তিক এই কথিত যৌথ টাস্ক ফোর্স গঠনের তৎপরতা চালাচ্ছে।