a
ছবি সংগৃহীত
বাংলাদেশে বিরোধী দলের হাজার হাজার নেতা-কর্মী আটক ও হেফাজতে বেশ কয়েকজনের মৃত্যুর খবরে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক। সেই সঙ্গে এসব ঘটনা দ্রুত পর্যালোচনার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
সোমবার (৪ মার্চ) সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের ৫৫তম অধিবেশনে এমন প্রতিক্রিয়া জানান তিনি। পরে বিজ্ঞপ্তি আকারে তার কথা বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়।
ভলকার তুর্ক বলেছেন, বাংলাদেশ নিয়ে আমি উদ্বিগ্ন এই কারণে, বিরোধী দলের হাজার হাজার নেতা-কর্মী আটক রয়েছেন। গত অক্টোবর থেকে হেফাজতে বেশ কয়েকজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। আমি যে কোনো ধরনের রাজনৈতিক সহিংসতার নিন্দা করলেও রাজনৈতিক সংলাপ ও সমঝোতাকে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে এই সমস্ত ঘটনার দ্রুত পর্যালোচনার আহ্বান জানাচ্ছি।
জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার আরও বলেন, বিচারব্যবস্থাকে ব্যবহার করে মানবাধিকারকর্মী, সাংবাদিক ও সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দকে হয়রানি করার অভিযোগে আমি এখনো উদ্বিগ্ন। আমি আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কথিত গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের তদন্তকে উৎসাহিত করছি। সূত্র: ইত্তেফাক
ছবি: মুক্তসংবাদ প্রতিদিন
নিউজ ডেস্ক: সন্ধিক্ষণ বা ক্রসরোড ব্যক্তি জীবনের পাশাপাশি জাতীয় জীবনের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। এটি আমাদের জীবনের যে কোনো সময়েই আসতে পারে। "ইতিহাসের ক্রসরোড" বলতে একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তের কথা বোঝানো হয়, যেখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে হয়। উদাহরণস্বরূপ, "আমরা বাংলাদেশের ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্রসরোডে দাঁড়িয়ে আছি।"
ক্রসরোড ছিল এমন একটি স্থান যেখানে দুটি পথ বা সীমারেখা মিলে যেত—একটি জায়গা, "না এখানে, না সেখানে।" বিভিন্ন সংস্কৃতি ও পৌরাণিক কাহিনিতে, ক্রসরোডের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতীকী এবং জাদুকরি অর্থ রয়েছে। এটি সাধারণত এমন একটি স্থান হিসেবে চিহ্নিত করা হয় যেখানে সিদ্ধান্ত গ্রহণ, পরিবর্তন এবং রূপান্তর ঘটে, কারণ এটি জীবনগত এবং রূপকভাবে সমসাময়িক জীবনের আন্তঃসংযোগ।
ইতিহাসের ছাত্র হিসেবে, আমরা ইতিহাসকে একটি সামগ্রিক দৃষ্টিকোণ থেকে পর্যবেক্ষণ করার চেষ্টা করি, সব দিক থেকে বিশ্লেষণ করি এবং সকল দৃষ্টিভঙ্গি পর্যালোচনা করি। আমরা প্রায়ই ইতিহাসের পাঠকে বর্তমান ও ভবিষ্যতের সমঝোতার জন্য আহ্বান করি।
যেমন পূর্বে ইতিহাস ছিল বিজয়ীদের গল্প, তেমনটি নয়, আমরা ইতিহাসকে নিরপেক্ষভাবে উপস্থাপন করতে চেষ্টা করি, যেখানে আগের সময়ের নিদর্শনগুলোকে ভবিষ্যতের সিদ্ধান্তগুলির জন্য অবজেকটিভভাবে উপস্থাপন করা হয়।
এটি আমাদের কর্তব্য, আমাদের ব্যাপক দক্ষতা এবং জ্ঞানকে সঠিক দিকের জন্য ব্যবহার করা, যাতে আমরা বাংলাদেশকে সেই অবস্থায় পুনর্গঠন করতে পারি, যেখানে এটি ১৯৭১ সালে শুরু হওয়া উচিত ছিল। তবে দুর্ভাগ্যবশত, আমরা একটি সঠিক পথ খুঁজে পেতে ব্যর্থ হয়েছি।
২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের বিপ্লবের মধ্যে ছাত্ররা একটি অনন্য এবং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে এবং আমাদের জন্য পরিবর্তনের একটি সুযোগ সৃষ্টি করেছে। এটি একটি ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ক্রসরোড ছিল—রাজনীতি, সংস্কৃতি, অর্থনীতি, ধর্ম এবং আরও অনেক ক্ষেত্রের ক্রসরোড।
যেহেতু আমরা ইতিহাসের ক্রসরোডে দাঁড়িয়ে আছি এবং আমাদের উপরে সাইনপোস্টগুলো দেখতে পাচ্ছি, একটি সাইনপোস্ট আমাদের পেছনে, একটি ভয়াবহ এবং অপ্রত্যাশিত রাস্তা নির্দেশ করছে। অন্যটি একটি ভালো ভবিষ্যতের দিকে, তবে সে পথ মসৃণ নয়। এটি একটি পথ যার বাঁক এবং কণ্টকপূর্ণ মোড় রয়েছে।
এটি কখনো কখনো আমাদের অগ্রগতি ধীর করে দেবে এবং পিছনে ফিরিয়ে নেবে। তবুও, আমাদের সেই পথটি নিতে হবে, ইতিহাসের সত্য ব্যবহার করে, অবশেষে, একটি রুটম্যাপ হিসেবে, যা আমাদের আগের সময়ের কষ্ট ও সমস্যার পাশাপাশি সামনে আসা নতুন চ্যালেঞ্জগুলোকে মোকাবিলা করতে সহায়তা করবে।
আমরা এক ধরনের ক্রসরোডে রয়েছি, কোনো না কোনো কারণে, যেখানে আপনিই থাকার জন্য নির্ধারিত ছিলেন, তাই সেখানে পথ খুঁজুন। এই ইতিহাসের মুহূর্তে আমাদের প্রয়োজন এমন একজন নেতা, যিনি বাংলাদেশে ঐতিহাসিক এবং সাহসী সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম।
লেখক: কর্নেল আকরাম, সম্পাদক: মিলিটারি হিস্ট্রি জার্নাল এবং আইন ও ইতিহাসের অধ্যাপক
ছবি সংগৃহীত
সাইফুল আলম , ঢাকা: দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা প্রত্যেকটি নাগরিকের কর্তব্য হলেও দীর্ঘদিন ধরে এই দায়িত্ব পালন করে আসছে সার্বভৌমত্ব সুরক্ষা পরিষদ। জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। এরপর থেকেই স্বার্থান্বেষী মহল নানা অঘটন ঘটানোর চেষ্টা করে আসছে। এরই অংশ হিসেবে দেশের ভেতরে ও সীমান্তে উদ্দেশ্য মূলক ভাবে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করা হচ্ছে। দেশের স্থিতিশীলতা বিনষ্টের দিকে ধাবিত করা হচ্ছে সুপরিকল্পিত ভাবে। দেশের অভ্যন্তরে সাম্প্রতিক সময়ে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি ঘটেছে। মানুষ আজ চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। নাগরিকদের জানমালের কোনো নিরাপত্তা নেই।
এরই প্রেক্ষিতে সার্বভৌমত্ব সুরক্ষা পরিষদ -এর উদ্যোগে আজ শুক্রবার ১৫ মার্চ ২০২৫ তারিখ বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্টের ১নং হলে "সার্বভৌমত্বের সুরক্ষায় জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা" শীর্ষক আলোচনা সভা ও ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।
সংগঠনের প্রধান সমন্বয়ক মোঃ মোস্তফা আল ইহযায-এর সঞ্চালনা ও সমন্বয়ক মো: সাইফুল আলম সরকারের সার্বিক তত্ত্বাবধানে এবং সংগঠনের প্রধান উপদেষ্টা আব্দুস সালাম মামুন এর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা মো: হাবিবুর রহমান হাবিব।
প্রধান আলোচক হিসাবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব এডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ, বিজিপি'র ভাইস চেয়ারম্যান মতিন, ক্যান্সার গবেষক ডা. সরওয়ার, মেজর জেনারেল আমছা আমিন, পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ এর চেয়ারম্যান কাজী মজিবর রহমান, লেঃ কর্ণেল ফরিদ আকবর (অব), বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মফিজুর রহমান, ড. আরিফ শাকি, ফয়েজ আহম্মেদ, প্রফেসর শাহজাহান সাজু, বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্টের সিনিয়র এডভোকেট মহসিন রশিদ, ডক্টর মালেক ফরাজি, এড. নূর মোহাম্মদ কীরণসহ জাতীয় রাজনীতিবিদ ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক, সাবেক সেনা কর্মকর্তা, পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রতিনিধি, ছাত্রপ্রতিনিধিসহ বিভিন্ন পেশাজীবিবৃন্দ।
আলোচনায় বক্তারা বলেন, আমরা ইতিপূর্বে দেখেছিলাম, জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি লক্ষ্যে অন্তর্বর্তী সরকার জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছিলো। কিন্তু চলমান পরিস্থিতি উপলব্ধি করলে তা কার্যকর হয়েছে বলা যাবেনা। আছিয়ার করুণ পরিণতি আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল আমাদের এ জনপদ শিশুদের জন্যেও অনিরাপদ। এমন ঘটনা প্রমাণ করে আমাদের সমাজে ও মস্তিষ্কে পচন ধরেছে। অবক্ষয় হয়েছে সামাজিক মূল্যবোধের। এমন পরিস্থিতিতে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলা একান্ত প্রয়োজন।
এই সময় বক্তাগণ আরও বলেন, এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় প্রয়োজন জাতীয় ঐক্য। পার্বত্য অঞ্চল নিয়ে বিভিন্নভাবে ষড়যন্ত্রের বীজবপন করছে ভারত, ছড়ানো হচ্ছে প্রতিহিংসা। ভারতীয়রা পার্বত্য চট্টগ্রামের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দিয়ে রাষ্ট্র বিরোধী ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে এবং ঐ অঞ্চলে অস্ত্র ও গোলাবারুদ দিয়ে একটি প্রক্সি যুদ্ধ লাগানোর অপচেষ্টা চালাচ্ছে। যা গত কিছুদিন যাবৎ দেশের সীমান্তবর্তী এলাকা সমূহে ভারতীয় আগ্রাসন থেকে দৃশ্যমান হয়। পার্বত্য চট্টগ্রামের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সাথে আরাকান আর্মির সুসম্পর্ক থাকায় আরাকান আর্মির মাধ্যমেও বাংলাদেশের সাথে প্রক্সি যুদ্ধ করানোর ষড়যন্ত্র করছে ভারত। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সকল ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় প্রস্তুত থাকতে আহবান জানান। পার্বত্য চট্টগ্রামে বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীদের নির্মূলে একটি সামরিক কমিশন গঠন ও বিশেষ অভিযান পরিচালনা করার আহবান জানান। এসময় পার্বত্য চট্টগ্রামের স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠায় সাত দফা দাবি উপস্থাপন করেন।
পার্বত্য চট্টগ্রামের সাত দফা দাবি সমূহ:
১. পার্বত্য চট্টগ্রামের ব্রিটিশ কোম্পানি ১৯০০ শাসনবিধি বাতিল করে, পার্বত্যাঞ্চলে স্বাধীন সাংবিধানিক শাসন প্রতিষ্ঠা করা। পার্বত্য অঞ্চলের সকল জাতির স্ব-স্ব সংস্কৃতি ও স্বকীয়তা রক্ষায় আলাদা কমিশন গঠন করা।
২. বৈষম্যমুক্ত দেশ গঠনের লক্ষ্যে অনতিবিলম্বে পার্বত্যাঞ্চলে ভূমি জরিপ চালু করে ভূমিহীন ও ক্ষতিগ্রস্ত পাহাড়ি/বাঙালিদের পার্বত্যাঞ্চলে স্থায়ীভাবে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা গ্রহণ।
৩. বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে সকল জাতিসত্তাকে সাংবিধানিক স্বীকৃতি তথা বাংলাদেশী বাঙালি/চাকমা/ত্রিপুরা/মারমা/ অন্যান্য হিসাবে সংবিধানে অন্তর্ভুক্তিকরণ।
৪. "শান্তি চুক্তি" নামক কালো চুক্তি বাতিল করে সংখানুপাতিক ভিত্তিতে সকল জাতিসত্তার সম-অধিকার নিশ্চিতকরণে সম্প্রীতি কমিশন গঠন।
৫. ১৯৮৯ সালে প্রবর্তিত পার্বত্য জেলা স্থানীয় সরকার পরিষদ আইন বাতিল করে নির্বাচনের মাধ্যমে পার্বত্য জেলা পরিষদ পুনর্গঠন করা।
৬. পার্বত্য অঞ্চলের বিচ্ছিন্নতাবাদ নির্মূলে সামরিক কমিশন গঠন এবং স্বাধীনতা পরবর্তী হতে অদ্যাবধি গণহত্যা সমূহের বিচার কার্য বিশেষ ট্রাইবুনাল গঠন করে সম্পন্ন করা।
৭. ২০১৮ সালের আদিবাসী শব্দ ব্যবহার বন্ধে জারিকৃত প্রজ্ঞাপনের পূর্ণ বাস্তবায়ন ও আদিবাসী স্বীকৃতির ষড়যন্ত্র স্থায়ীভাবে বন্ধ ঘোষণা।