a
ফাইল ছবি
আইন প্রয়োগকারী সংস্থার অভিযানে সম্প্রতি গ্রেফতার হওয়া নায়িকা, প্রযোজক ও মডেলদের আসরে যাতায়াতকারীদের লম্বা তালিকা তৈরি করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি। তালিকায় মোট কতটি নাম আছে এবং কাদের নাম আছে সে বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু বলেনি সিআইডি। তারা বলছেন- অনেক নাম পেয়েছেন। এদের মধ্যে বিত্তশালী ও পদস্থ ব্যক্তিদের নামও আছে। যাচাই-বাছাই না করে এসব নাম প্রকাশ করবে না সিআইডি। কারণ এতে অনেক নিরীহ মানুষও বিপদে পড়তে পারেন।
সিআইডির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তা জানান, আলোচিত নায়িকা পরীমণি, মডেল ফারিয়া মাহাবুব পিয়াসা, মরিয়ম আক্তার মৌ, প্রযোজক ও অভিনেতা নজরুল ইসলাম ওরফে নজরুল রাজসহ ১০-১২ জনের একটি সিন্ডিকেট অভিজাত এলাকায় নিয়মিত আসর বসাত। আসরগুলোতে মদ পান, ডিজে পার্টিসহ নানা অনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হতো। গ্রেফতার ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ, মোবাইল ফোন, কললিস্ট, মেসেঞ্জার ও হোয়াটসঅ্যাপসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অ্যাপস থেকে সিন্ডিকেটভুক্তদের আসরে যাতায়াত করা প্রায় ৩০০ জনের নাম পাওয়া গেছে। জিজ্ঞাসাবাদে তাদের বিষয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে গ্রেফতার হওয়ার পর রিমান্ডে থাকা ব্যক্তিরা। প্রাপ্ত নামের অনেকগুলোই ছদ্মনাম বা সাংকেতিক নাম। সিআইডি তাদের জিজ্ঞাসাবাদ ও প্রযুক্তিগত তদন্তের সহায়তায় প্রকৃত নাম ঠিকানা, পেশা, আয়ের উৎস ইত্যাদি সম্পর্কে জানার চেষ্টা করছে। বিশাল এই তালিকা থেকে যাছাই-বাছাই শেষে তালিকাটি ছোট ও নির্ভুল করে আনার কাজ করে যাচ্ছে সিআইডি। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের উপকমিটি থেকে অব্যাহতি পাওয়া হেলেনা জাহাঙ্গীর, শরিফুল হাসান মিশু ও মাসুদুল ইসলাম ওরফে জিসানের চাঁদাবাজি, অস্ত্র ও মাদক ব্যবসা এবং তাদের ঘনিষ্ঠজনদের বিষয়েও খোঁজখবর নিচ্ছে সিআইডি।
গত শনিবার সিআইডি হেলেনা জাহাঙ্গীর, পরীমণি, পিয়াসা, মৌ, নজরুল ইসলাম রাজ, মিশু হাসানের বাসায় তল্লাশি অভিযান চালায়। এসব বাসা থেকে সিসিটিভি ফুটেজ, বিভিন্ন আলামত ও ডিভাইস উদ্ধার করা হয়েছে। ল্যাপটপ, ডেস্কটপ পাসপোর্ট, মোবাইল, হার্ডডিস্ক ও ফেরারি গাড়ি জব্দ করা হয়। তদন্তের অংশ হিসেবে এই তল্লাশি অভিযান পরিচালনা করা হয় বলে জানিয়েছে সিআইডি।
রবিবার দুপুরে রাজধানীর মালিবাগে প্রধান কার্যালয়ে সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি শেখ ওমর ফারুক বলেন, ‘দায়ের হওয়া সাত মামলার ডকেট ও আসামি বুঝে পেয়েছি। আসামিরা আমাদের হেফাজতে আসার পর ধারাবাহিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করে যাচ্ছি। তারা অনেক তথ্য দিয়েছে। তদন্তের স্বার্থে সেগুলো প্রকাশ করা যাবে না। আমরা প্রাপ্ত তথ্যগুলো যাচাই-বাছাই করছি।’ শেখ ওমর ফারুক আরও বলেন, ‘নজরুল রাজ, পরীমণি ও পিয়াসাদের সঙ্গে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের যোগাযোগ ও সম্পৃক্ততার তথ্য আমরা পেয়েছি। যাদের অনেকেই তাদের আড্ডা ও ডিজে পার্টিতে যেতেন।
যাতায়াতকারীদের মধ্যে ব্যাংকার, বিত্তশালী ও পদস্থ ব্যক্তিদের নামও রয়েছে।’ পরীমণির সঙ্গে ব্যাংকের কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সখ্য বিষয়ে সিআইডি কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন পেশার অনেকেরই নাম পাচ্ছি কিন্তু সেগুলো এখনই বলা যাবে না। যেহেতু অনেকগুলো মামলা এবং অনেক তথ্যের ছড়াছড়ি সেজন্য অনেক নিরপরাধ মানুষ ফেঁসে যেতে পারেন। সেটি যেন না হয় সেজন্য আমরা কোনো ধরনের তাড়াহুড়া করছি না। ধারাবাহিকভাবে আমরা তদন্ত কাজ এগিয়ে নেব।’
সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি বলেন, ‘আমরা দেখছি কিছু গণমাধ্যম বিভিন্ন ব্যাংক কর্মকর্তার নাম-পরিচয় প্রকাশ করে সংবাদ প্রচার করছে। সেখানে সিআইডির বরাত দিয়ে কয়েকজন ব্যাংক কর্মকর্তার নাম প্রকাশিত হয়েছে। আমরা নিশ্চিত করে বলতে চাই সিআইডির কোনো কর্মকর্তা এসব তথ্য দেননি।’ এই সিন্ডিকেটের হাতে ব্ল্যাকমেলের শিকার কোনো ভিকটিম অভিযোগ করেছেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে ওমর ফারুক বলেন, ‘এখন পর্যন্ত কোনো ভিকটিম অভিযোগ করেননি। তবে কিছু তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। সে অনুযায়ী তদন্ত চলছে। আসামিদের পর্যায়ক্রমে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। আরও তথ্যের প্রয়োজন হলে আমরা আসামিদের ফের রিমান্ডে নেব।’
সিআইডি কর্মকর্তা বলেন, ‘পুলিশের হেফাজতে থাকা একটি ফেরারি গাড়ি আমরা নিয়ে এসেছি। এটি র্যাব জব্দ করেছিল মিশু হাসানের বাসা থেকে। আমরা গাড়িটির বিষয়ে খোঁজখবর নিচ্ছি। এ ছাড়া মিশু হাসানের বাসায় অভিযান চালিয়ে আরও বেশ কিছু আলামত জব্দ করা হয়েছে। আমরা তদন্তের স্বার্থে সেসব বিষয় প্রকাশ করছি না।’
সিআইডির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, ‘এই সিন্ডিকেট বিভিন্ন ব্যাংকে চাকরি ও বড় অংকের ঋণ পাওয়ার বিষয়ে তদবির করত। বিশেষ করে দুটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের নামও প্রকাশ করেছে তারা। কয়েকটি রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী নেতা, এমপির ভাই ও ছেলের নামও পাওয়া গেছে। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘অভিজাত এলাকার এই ভয়াবহ সিন্ডিকেট প্রশাসনের বিভিন্ন দফতরে নিয়োগ, পদোন্নতি ও বদলির তদবির করত বলে তথ্য পাওয়া গেছে। এরা নিজের কাজ বাগিয়ে নিতে যাকে যেভাবে খুশি করা সম্ভব সে পদ্ধতি অনুসরণ করত। এমনকি সিন্ডিকেটভুক্ত তরুণীদের সঙ্গে দেশে-বিদেশে স্পেশাল প্লোজার্স ট্যুরে পাঠাত এই চক্র।’
অপর এক কর্মকর্তা বলেন, ‘নায়িকা পরীমণিসহ সিন্ডিকেটের সদস্যরা নিজেদের স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে টার্গেট করা ব্যক্তিকে ‘হিপনোটাইজ’ করে ফেলত। তারা যে কোনো মূল্যে নিজেদের কাজ হাসিল করে নিত। এ রকম কয়েকজন ভিক্টিমের সঙ্গে তারা কথাও বলেছেন। কিন্তু তারা আইনগত ব্যবস্থা বা মামলা করতে রাজি হননি।’ প্রসঙ্গত, গত ১ আগস্ট বারিধারা থেকে মডেল পিয়াসা ও মোহাম্মদপুর থেকে মৌ, ৩ আগস্ট রাতে ভাটারা থানা এলাকা থেকে মিশু হাসান এবং তার সহযোগী জিসানকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরদিন ৪ আগস্ট বনানীর বাসা থেকে নায়িকা পরীমণি, প্রযোজক নজরুল রাজ, পরীমণির ম্যানেজার আশরাফুল ইসলাম দীপু ও রাজের ম্যানেজার সবুজ আলীকে গ্রেফতার করা হয়। ৬ আগস্ট গ্রেফতার করা হয় পরীমণির কস্টিউম ডিজাইনার জিমিকে। এসব ঘটনায় রাজধানীর বিভিন্ন থানায় সাতটি মামলা হয়েছে। মামলাগুলোর তদন্তভার পেয়েছে সিআইডি। গ্রেফতার আসামিদের সিআইডি হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
পরীমণি-সাকলায়েন কাণ্ডে পুলিশ সদর দফতরের তদন্ত কমিটি : পরীমণিকে বাসায় নিয়ে এডিসি গোলাম সাকলায়েন শিথিলের ১৮ ঘণ্টা সময় কাটানোর অভিযোগের তদন্তে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে পুলিশ সদর দফতর। গতকাল পুলিশ সদর দফতরের অতিরিক্ত ডিআইজি মিয়া মাসুদ করিমকে (ট্রেনিং) প্রধান করে এ কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অন্য দুজন হলেন ডিএমপির উইমেন সাপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন সেন্টারের উপ-কমিশনার (ডিসি) হামিদা পারভিন এবং সিআইডির ফরেনসিক বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার (এসএস) রুমানা আক্তার। সাকলায়েন যে মামলার তদারকি কর্মকর্তা সেই মামলার তথ্য, তার বাসায় পরীমণির আসা-যাওয়ায় মামলার তদন্তে কোনো প্রভাব পড়েছে কি না, সাকলায়েন পুলিশের আইন অনুযায়ী কোনো অপরাধ করেছেন কি না- তদন্ত প্রতিবেদনে এসব তুলে ধরতে বলা হয়েছে কমিটিকে। তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য কমিটিকে ১৫ কার্যদিবস সময় দেওয়া হয়েছে। সূত্র: বিডি প্রতিদিন
ছবিঃ সংগৃহীত/অ্যাডভোকেট আশরাফুল আলম
শেরপুর প্রতিনিধি: শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে আশরাফুল আলম নামে এক আইনজীবীর বাড়িতে গিয়ে প্রাণনাশের হুমকি, বাড়ি-ঘর ভাঙ্গার অভিযোগ পাওয়া গেছে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ধারালো দা, লোহার রড ও বাঁশের লাঠিসহ বেশ কিছু অস্ত্র উদ্ধার করেছে।
রোববার (৯ নভেম্বর) বিকেলে পৌরশহরের কালিনগর এলাকায় এসব সন্ত্রাসীমূলক ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী আইনজীবীর মা রাহিলা খাতুন নালিতাবাড়ী থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, অ্যাডভোকেট মোঃ আশরাফুল আলম শেরপুর জেলা জজ আদালতের একজন আইনজীবী। তিনি নালিতাবাড়ী থানার কালিনগর গ্রামে সংঘটিত একটি হত্যা মামলায় (জি.আর. নং ০৭/২০২৫, ধারা ১৪৩/৩২৬/৩০৭/৩০২/৫০৬/৩৪ দণ্ডবিধি) বাদীপক্ষের পক্ষে মামলা পরিচালনা করছেন। মামলার কয়েকজন আসামী জামিনে বের হয়ে আশরাফুল আলমকে মামলা থেকে সরে দাঁড়ানোর জন্য বারবার চাপ ও হুমকি দিয়ে আসছিল।
শনিবার বিকেল আনুমানিক সাড়ে ৩টার দিকে আসামী রফিকুল ইসলাম (৪৪), নবাব আলী (২২), বাবু মিয়া (২৪), সাদ্দাম মিয়া (৩০) ও মাতাব মিয়াসহ (৪২) আরও কয়েকজন ধারালো দা, লোহার রড ও কিরিচ নিয়ে তার বাড়িতে হামলার চেষ্টা চালায়।
তারা আইনজীবি আশরাফুল আলমকে খুঁজে না পেয়ে বাড়ির টিনের বেড়া ভাঙচুর করে। এসময় আইনজীবীর স্ত্রী বাধা দিলে আসামিরা তাকে ধাওয়া করে। তিনি দৌড়ে ঘরের ভিতরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে রক্ষা পান। পরে তিনি মোবাইল ফোনে তার স্বামীকে খবর দিলে, আশরাফুল আলম তাৎক্ষণিকভাবে নালিতাবাড়ী থানা পুলিশকে জানান।
খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে আসামিরা পালানোর সময় কয়েকটি দেশীয় অস্ত্র ফেলে যায়। পুলিশ সেগুলো উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে।
এডভোকেট আশরাফুল আলমের দাবী, আইন অনুযায়ী যেকারো পক্ষে মামলা পরিচালনার অধিকার রয়েছে। যারা হামলা করেছেন তারা একাধিক হত্যা মামলার আসামী। হামলার পর আশরাফুল আলমের পরিবার নিরাপত্তাহীনতা ভুগছেন। প্রশাসনের কাছে দ্রুত আসামীদের গ্রেফতারের দাবী জানান তিনি।
নালিতাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোহেল রানা জানান, “ঘটনার বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। ঘটনাস্থল থেকে দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। তদন্ত চলছে, দোষীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে।” সূত্র: দি ফিনেন্সিয়াল পোষ্ট
ফাইল ছবি: শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক
অবিভক্ত বাংলার মুখ্যমন্ত্রী শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকের মৃত্যুবার্ষিকী আজ বৃহস্পতিবার (২৭ এপ্রিল)। ১৯৬২ সালের এইদিনে ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন তিনি। শিক্ষানুরাগী এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির জীবন্ত প্রতীক হিসেবেও ইতিহাসের পাতায় তার রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ স্থান।
শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক ১৮৭৩ সালের ২৬ অক্টোবর ঝালকাঠি জেলার রাজাপুরের সাতুরিয়া গ্রামের মামা বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনে তিনি অবিভক্ত বাংলার মুখ্যমন্ত্রী, পাকিস্তান কেন্দ্রীয় সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর, যুক্তফ্রন্ট সরকারের মুখ্যমন্ত্রী, কলকাতা সিটি করপোরেশনের প্রথম মুসলিম মেয়র এবং আইনসভার সদস্যসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন।
ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনেও এ কে ফজলুল হকের অবদান ছিলো। ১৯৪০ সালে তিনি ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাব উত্থাপন করেন। তিনি ২১ দফা দাবিরও প্রণেতা ছিলেন।
শেরে বাংলার মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে—মরহুমের কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও ফাতেহা পাঠ এবং আলোচনা সভা। সূত্র: ইত্তেফাক