a
ফাইল ছবি
ব্যাংক-কোম্পানি (সংশোধন) বিল-২০২৩ এর ওপর আনা সংশোধনী প্রস্তাব নিয়ে দ্বিমত পোষণ করে বুধবার সংসদ অধিবেশন থেকে ওয়াকআউট করেন জাতীয় পার্টির সদস্যরা। এ সময় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করছিলেন।
এর আগে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল ব্যাংক-কোম্পানি (সংশোধন) বিল-২০২৩ সংসদে উত্থাপন করেন। এই বিলের ওপর জনমত যাচাই-বাছাইয়ের প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে জাতীয় পার্টির সদস্যরা ব্যাংকের পরিচালকের পদে থাকার মেয়াদ ৩ বছর বাড়িয়ে ১২ বছর করার বিরোধিতা করেন। তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ব্যাংক লুটপাটের মূল হোতা পরিচালকরা। তাদের সুবিধা দেওয়ার জন্য এই আইন সংশোধন করা হচ্ছে। বিল সংসদে উত্থাপন ও সংসদীয় কমিটির সুপারিশে ছিল না-এমন বিধান যুক্ত করা হয়েছে।
তবে অর্থমন্ত্রী এসব সমালোচনা আমলে নেয়নি। তিনি বিলটি পাসের প্রস্তাব করেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ওয়াকআউট করেন জাতীয় পার্টির সদস্যরা। দলটির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুর নেতৃত্বে সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশীদ, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, প্রেসিডিয়াম সদস্য ফখরুল ইমামসহ উপস্থিত সদস্যরা একযোগে অধিবেশন কক্ষ থেকে বেরিয়ে যান। পরে তাদের অনুপস্থিতিতে বিলটি পাশ হয়। বিল পাশের কার্যক্রম শেষ হওয়ার পর অবশ্য প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নেন জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যরা।
ওয়াকআউটের আগে জাতীয় পার্টির সদস্যরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। দলটির সদস্য ফখরুল ইমাম বলেন, পরিচালক পদের মেয়াদ ১২ বছর করার জন্য সরকারি দলের একজন সদস্য সংশোধনী প্রস্তাব দিয়েছেন। এটা বিল উত্থাপনের সময় ছিল না। যেহেতু সরকারি দলের সংসদ-সদস্য এই প্রস্তাব দিয়েছেন তাই মনে হচ্ছে এটা গ্রহণ করা হবে।
তিনি প্রশ্ন রাখেন, যে বিষয়টি সংসদে উত্থাপনই হয়নি সেটা চাওয়া হয় কী করে? ব্যাংকগুলোতে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে হবে। ব্যবসায়িক গোষ্ঠীর হাত থেকে মুক্ত করতে হবে।
জাতীয় পার্টির আরেক সংসদ সদস্য ও দলটির মহাসচিব মো.মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, পরিচালকরা হচ্ছেন ব্যাংক লুটপাটের মূল হোতা। কোনো পরিচালক সুপারিশ না করলে আমার মতো লোক গেলে ব্যাংক ঋণ মিলবে না। চেয়ারম্যান-পরিচালকের কারণে ন্যাশনাল ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক শেষ। যে আইনের কোনো ধারা অর্থমন্ত্রী সংশোধনীতে তা আনেননি। যে ধারা সংশোধনের জন্য সংশোধনী কমিটি কোনো সুপারিশ করেনি, সেখানে একজন সরকারি দলের সদস্য কোন আইনে এই সংশোধনী আনলেন? তিনি এটা পারেন কি না-এটা জানা দরকার। অভিভাবক হিসাবে স্পিকার এটা বলবেন বলে আশা করি। তিনি আরও বলেন, মনে হচ্ছে অর্থমন্ত্রীকে কনভিন্স করে সরকারি দল করে এমন অনেক ব্যাংকের পরিচালকদের সুপারিশে এটা আনা হয়েছে পাশ করার জন্য। সেটা হলে আমরা আমাদের সব সংশোধনী প্রত্যাহার করলাম। কারণ এর থেকে বড় অন্যায় আর হতে পারে না। যেখানে ব্যাংক লুটপাট করা হচ্ছে। বিদেশে টাকা পাচার হচ্ছে। আর বাংলাদেশ ব্যাংক বসে বসে তামাক খায়। ব্যাংকের চেয়ারম্যান-পরিচালক হাজার কোটি টাকা নিয়ে বিদেশে চলে যায়। আপনারা দেখছেন না। আপনারা আছেন কাউকে ফেভার করার জন্য। পরিচালকের মেয়াদ ১২ বছর করার এই প্রস্তাবকে আমরা তীব্র প্রতিবাদ জানাই।
একই দলের কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, ব্যাংক মালিকদের সুবিধা দেওয়ার জন্য আইনটি আনা হয়েছে। তারা জনগণের টাকা অপব্যবহার করেন। সর্দিকাশি হলেই ব্যাংকের টাকায় সিঙ্গাপুর যান। স্বতন্ত্র পরিচালক কারা এই প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, আমরা তার লিস্ট চাই। আমরা এই ভাগ্যবানদের সংসদে দেখতে চাই। সব দলীয় কর্মী ও আত্মীয়স্বজনকে স্বতন্ত্র পরিচালক করা হয়। তারা ব্যাংকে যায় শুধু লোন দেওয়ার জন্য। ১০ কোটি টাকা ঋণ দিয়ে দুই কোটি নিজে নিয়ে নেন। একদিনে ধনী হয়ে গেল। যেন আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপ। এখানে হরিলুট চলছে। আমরা কমানোর প্রস্তাব করছি না। এদের মেয়াদ আজীবন করে দেন। আমি এখন প্রস্তাব আনলাম। এই পরিচালকরা আজীবন থাকবে। আল্লাহ যতদিন হায়াত রাখছেন আপনারা খাইতে থাকেন। আমরা দেখতে থাকি।
কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, এই আইনে সংশোধন আনা হচ্ছে শুধু ব্যাংক মালিকদের সুবিধা দেওয়ার জন্য। বেসরকারি ব্যাংকগুলো এখন বাংলাদেশ ব্যাংকের ওপর খবরদারি করে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর কে হবেন, ডেপুটি গভর্নর কে হবেন-এগুলো তারা নির্ধারণ করে দেন। ব্যাংকারদের কাছে সরকার জিম্মি হয়ে গেছে। জাতীয় পার্টির সদস্য পীর ফজলুর রহমান বলেন, ‘সরকার তাদের প্রিয় পরিচালকদের কীভাবে পদে রাখবেন সেটা ভুলে গিয়েছিলেন। এ কারণে পরবর্তী সময়ে এই সংশোধনী আনা হয়েছে। যে প্রক্রিয়ায় আইনে সংশোধনী আনা হচ্ছে তা সঠিক প্রক্রিয়া নয়।’
বিরোধী দলের সংসদ-সদস্যদের সমালোচনার জবাবে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ‘খলাপি ঋণ ১৪ বছরে ১৩ দশমিক ২ শতাংশ থেকে ৮ দশমিক ৬ শতাংশে নেমেছে। সরকারি ব্যাংকের শাখা দ্বিগুণ বেড়েছে। ব্যাংকের আমানত ৭ গুণ বেড়েছে। বছরওয়ারি মুনাফা বেড়েছে ৮ গুণ। তিনি বলেন, আমার এই বক্তব্যে ভুল বোঝাবুঝির কিছুটা অবসান হবে।’
জাতীয় পার্টির ফখরুল ইমাম এ সময়ে আবারও হাত তুললে জবাবে স্পিকার বলেন, আপনাকে সুযোগ দেওয়ার কোনো বিধান নেই। এটি বলার সঙ্গে সঙ্গে বিরোধী দলের সংসদ-সদস্যরা হইচই শুরু করেন। মাইক ছাড়াই কথা বলতে থাকেন মুজিবুল হক চুন্নু। তার পাশাপাশি কাজী ফিরোজ রশীদও দাঁড়িয়ে কথা বলতে শুরু করেন। এক পর্যায়ে কাজী ফিরোজ রশীদকে মাইক দেওয়া হয়। তিনি অর্থমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘আমরা যে আজীবনের কথা বললাম আপনি কি সেটা গ্রহণ করলেন? এই একজন পরিচালক আমৃত্যু থাকবে। সেটা গ্রহণ করছেন? না ১২ বছর করছেন? কোনটা সেটা আমাদের স্পষ্ট বলতে হবে।’
মুজিবুল হক চুন্নুও একই ধরনের বক্তব্য দেন। এ সময় বিরোধী দলের সদস্যরা হইচই করতে থাকেন। কিছু সময়ের জন্য সংসদে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়। পরে স্পিকার অর্থমন্ত্রীকে আবারও মাইক দেন। তবে তিনি কথা বলেননি। এ পর্যায় স্পিকার সংশোধনী ভোটে দেন। দফাভিত্তিক সব সংশোধনী ভোটে দেওয়া হয়। আহসানুল ইসলামের সংশোধনী প্রস্তাব গ্রহণ করেন অর্থমন্ত্রী। এ সময় জাতীয় পার্টির সদস্যরা ওয়াকআউট করে সংসদ কক্ষ থেকে বেরিয়ে যান।
গণমাধ্যমকে দেওয়া এক প্রতিক্রিয়ায় জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ‘ব্যাংকের পরিচালকদের মেয়াদ ৯ বছর থেকে বাড়িয়ে ১২ বছর করার সংশোধনী প্রস্তাব গ্রহণ করার প্রতিবাদে আমরা ওয়াকআউট করেছি। বিল উত্থাপনের সময় ছিল না এমন সংশোধনী প্রস্তাব নজিরবিহীনভাবে গ্রহণ করা হয়েছে।’
পরে পরিচালক পদে একটানা বারো বছর থাকার বিধান যুক্ত করে ব্যাংক কোম্পানি আইনের সংশোধনী জাতীয় সংসদে পাস হয়। এতে খেলাপি ঋণগ্রহীতার ঋণ সুবিধা পাওয়ার বিষয়ে কিছুটা পরিবর্তন আনা হয়েছে। অবশ্য এসব সংশোধনী সংসদে উপস্থাপিত বিলে বা স্থায়ী কমিটির প্রতিবেদনে ছিল না। এ নিয়ে প্রবল আপত্তি জানান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যরা।
গত ৮ জুন ব্যাংক কোম্পানি (সংশোধন) বিল-২০২৩ জাতীয় সংসদে তুলেছিলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। সংশোধনীর মূল প্রস্তাবে পরিচালক পদের মেয়াদ বাড়ানো-কমানোর বিষয়ে কোনো প্রস্তাব ছিল না। পরে সেটি পরীক্ষা করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়েছিল। কমিটিও পরিচালক পদের মেয়াদ নিয়ে কোনো সংশোধনী আনেনি।
বিলটি পাশের আগে সরকারদলীয় সংসদ-সদস্য আহসানুল ইসলাম টিটু পরিচালকদের মেয়াদ বাড়ানো ও খেলাপি ঋণগ্রহীতার ঋণ সুবিধা বিষয়ক সংশোধনী দুটি প্রস্তাব করেন।
পাশ হওয়া বিলে হয়েছে, ‘কোনো ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে একটি একক পরিবারের সদস্যের বাইরে তার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বা নিয়ন্ত্রণাধীন সর্বোচ্চ দুটি প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানির পক্ষে প্রতিনিধি পরিচালক থাকতে পারবে। তবে কোনো ব্যাংকের পর্ষদে কোনো প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানির পক্ষে একজনের অধিক ব্যক্তি প্রতিনিধি পরিচালক নিযুক্ত হতে পারবে না।’
আইনের খসড়ায় বলা হয়েছে, ‘কোনো ব্যাংকের পর্ষদে প্রাকৃতিক ব্যক্তিসত্তা বিশিষ্ট ব্যক্তি শেয়ারহোল্ডারের পক্ষে অপর কোনো ব্যক্তি প্রতিনিধি পরিচালক হিসাবে নিযুক্ত হতে পারবে না। অর্থাৎ কোনো ব্যক্তি ব্যাংকের শেয়ারের মালিক হলে তার প্রতিনিধি হিসাবে অন্য কোনো ব্যক্তিকে পরিচালক হিসাবে নিয়োগ দেওয়া যাবে না।’ বিদ্যমান আইনে কোনো ব্যাংক পরিচালক একই সময়ে অন্য কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালক থাকতে পারবেন না। তবে এই আইন কার্যকর হওয়ার পর সর্বোচ্চ দুই মেয়াদে বিমা কোম্পানির পরিচালক হওয়ার সুযোগ রয়েছে। যদিও ২০১০ সালে প্রণীত বিমা আইন অনুযায়ী কোনো বিমা কোম্পানির পরিচালক ব্যাংক কোম্পানির পরিচালক হতে পারেন না। সংশোধনী খসড়ায় কোনো ব্যাংক পরিচালকের একই সঙ্গে বিমা কোম্পানির পরিচালক পদে থাকার সুযোগ বাতিল করা হয়েছে।
এছাড়া কোনো পরিচালক ব্যাংকের সাবসিডিয়ারি কোম্পানির পরিচালক হতে পারবেন কি না, সে বিষয়ে বিদ্যমান আইনে কিছু বলা নেই। কিন্তু একজন পরিচালক আরও কোন কোন কোম্পানিতে পরিচালক থাকতে পারবেন না বলে বিলে বলা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি ব্যাংকের পরিচালক হলে একই সময়ে তিনি অন্য কোনো ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বিমা কোম্পানি বা এসব কোম্পানির কোনো সাবসিডিয়ারি কোম্পানির পরিচালক থাকতে পারবেন না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের বিবেচনায় এমন কোনো কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠান যা ওই ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা বিমা কোম্পানির ওপর নিয়ন্ত্রণ বা যৌথ নিয়ন্ত্রণ বা প্রভাব বিস্তার করে-এমন কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানের পরিচালক থাকবে না বলেও বিলে উল্লেখ করা হয়েছে।
বিদ্যমান আইনে বিকল্প পরিচালক নিয়োগের সুযোগ থাকলেও তার মেয়াদকাল এবং বিকল্প পরিচালকদের যোগ্যতা সম্পর্কে কিছু বলা নেই। নতুন আইনে এসব বিষয় সুনির্দিষ্ট করা হচ্ছে। খসড়া আইনে বলা হয়েছে, কোনও পরিচালক কমপক্ষে নিরবচ্ছিন্নভাবে তিন মাস বিদেশে অবস্থান করলে তার অনুপস্থিতির কারণে পর্ষদ চাইলে মূল পরিচালকের বিপরীতে বছরে সর্বোচ্চ একবার একজন বিকল্প পরিচালক নিযুক্ত করতে পারবে। পরিচালক নিয়োগের যেসব শর্ত রয়েছে, সেগুলো বিকল্প পরিচালক নিয়োগের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে।
খসড়া আইনে বলা হয়েছে, কোনো ব্যাংক-কোম্পানির সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনার স্বার্থে তার পর্ষদ এবং পর্ষদ কমিটিগুলোর কর্মপরিধি বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক সময় সময় নির্দেশনা জারি করতে পারবে।
নতুন আইনে ব্যাংকের সাবসিডিয়ারি কোম্পানিগুলোর ওপর বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা পাবে। এতে নতুন ধারা যোগ করে বলা হয়েছে, যে উদ্দেশ্যেই ব্যাংক কোনো সাবসিডিয়ারি কোম্পানি গঠন করুক না কেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্ধারিত হার বা পরিমাণের বেশি সাবসিডিয়ারি কোম্পানির মূলধন হিসাবে বিনিয়োগ করতে পারবে না। নতুন আইনের আওতায় সাবসিডিয়ারি কোম্পানির পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার যোগ্যতা ও উপযুক্ততার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক সার্কুলার জারি করবে।
এছাড়াও ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের বিদেশ যাওয়া, বাড়ি-গাড়ি ও কোম্পানি নিবন্ধনে নিষেধাজ্ঞা আরোপসহ তাদের রাজনৈতিক দলের কমিটিতে না রাখার বিধান রেখে ব্যাংক কোম্পানি আইন-১৯৯১ অধিকতর সংশোধন করতে একটি বিল সংশোধন আনা হয়েছে। এই বিলে এক পরিবার থেকে তিন জনের বেশি ব্যাংকের পরিচালক হওয়া যাবে না-এ রকম বিধান রয়েছে।
সংসদে পাশ হওয়া বিলে বলা হয়েছে, ইচ্ছাকৃত খেলাপি ঋণগ্রহীতা শনাক্ত ও চূড়ান্ত করার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো দুটি পৃথক কমিটি গঠন করবে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো সময়ে সময়ে ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপির তালিকা বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠাবে। তালিকা চূড়ান্ত হওয়ার পর ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান চাইলে ৩০ দিনের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকে আপিল করতে পারবে এবং এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে। এছাড়া ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা, ট্রেড লাইসেন্স ইস্যুতে নিষেধাজ্ঞাসহ বেশকিছু ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে। সূত্র: যুগান্তর
ফাইল ছবি: সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান
বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির প্রধান ভূমিকায় ছিলেন সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান। তার নির্দেশনায় হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে ১০১ মিলিয়ন ডলার লুটের ঘটনা ঘটে। ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার ‘মাস্টারমাইন্ড’ রিজার্ভ থেকে ওই অর্থ সরানোর পর এ সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ ডাটা ও তথ্য মুছে ফেলার সব আয়োজন সম্পন্ন করা হয়। রিজার্ভ লুটের স্পর্শকাতর বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জেনে গেলে বোর্ডরুমে সবাইকে ডেকে সভা করে তাদের মুখ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন স্বয়ং ড. আতিউর।
রিজার্ভ থেকে অন্তত ২ বিলিয়ন ডলার লুট করার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে সুইফটের সঙ্গে হঠাৎ করেই আরটিজিএস (রিয়েল টাইম গ্রস সেটেলমেন্ট) কানেকশন স্থাপন করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের তৎকালীন ডেপুটি গভর্নর শুভংকর সাহার মধ্যস্থতায় হ্যাকিংয়ের প্রথম অধ্যায়ে আরটিজিএস প্রকল্প আনা হয়। হ্যাকারদের হাতে তুলে দেওয়া হয় সুইফটের এক্সেস।
পরিকল্পনামতো আরটিজিএস সংযোগ স্থাপনের জন্য ভারতীয় নাগরিক নীলা ভান্নানকে ভাড়া করে বাংলাদেশ ব্যাংকে নিয়ে আসেন ড. আতিউর। তাকে এ কাজে সহায়তা করেন বেসরকারি দুটি ব্যাংকের এমডি। আরটিজিএস স্থাপনের পর নীলা ভান্নান বাংলাদেশ ব্যাংকের ইন্টারনেটের সঙ্গে সুইফটের সংযোগ স্থাপন করে দেন। এরপর ধাপে ধাপে শুরু হয় পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পর্ব। হ্যাকিংয়ের ঘটনার পরপর আতিউর রহমান বাংলাদেশ ব্যাংকের সুইফট সার্ভার রুমে এসে কর্মকর্তাদের শাসিয়ে বলেন, ‘যদি তোমরা কেউ বলো যে হ্যাক হয়েছে, তোমাদের কারও চাকরি থাকবে না। সবাইকে বরখাস্ত করা হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এবিডি শাখার (অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড বাজেটিং) কর্মকর্তা বদরুল হককে হুমকি দিয়ে আতিউর বলেন, এই ঘটনা চেপে যেতে হবে। তিনি চাকরি রক্ষায় চুপ হয়ে যান। তিনি হ্যাকিং ঘটনার পরবর্তী পর্বে আতিউরের অপরাধনামার একজন গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী। আরেকজন সাক্ষী হলেন-তৎকালীন ডেপুটি গভর্নর আবুল কাশেম। তিনি সুইফটের মাধ্যমে আরটিজিএস সংযোগ প্রদানের বিরোধিতা করেছিলেন। যে কারণে আরটিজিএস-এর ফাইল তার মাধ্যমে কানেকটিভিটিসংক্রান্ত অনুমোদন হওয়ার কথা থাকলেও গভর্নর আতিউর ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে সেই ফাইলে নিজেই সই করে চূড়ান্ত অনুমোদন দেন। অথচ ড. আতিউর এতদিন একজন সজ্জন ও সুশীল হিসাবে দেশের সবার কাছে সুপরিচিত ছিলেন-এমন মন্তব্য সংশ্লিষ্টদের।
অপরাধ তদন্ত সংস্থা, অনুসন্ধান ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে আরও জানা গেছে, ২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি রাতভর বাংলাদেশ ব্যাংকের ফেডারেল রিজার্ভ অ্যাকাউন্ট থেকে ৮ কোটি ১০ লাখ ১৬২৩ মার্কিন ডলার (১০১ মিলিয়ন) হ্যাক করে সরিয়ে নেওয়া হয়। এতে আতিউরের পক্ষে কাজ করেন তার বিশ্বস্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের গুরুত্বপূর্ণ দুটি বিভাগের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা।
হ্যাকিংয়ের ক্ষেত্র তৈরির প্রথম ধাপে গভর্নর আতিউরের পিএস আসাদুজ্জামান একটি মেইল আদান-প্রদানের সূত্রপাত করেন। সেটি সেন্ড ও রিসিভ করার পর তিনি হ্যাকারদের রিপ্লাই দেন। আর এর মধ্য দিয়েই পরিকল্পনার প্রথম ধাপের কাজটি সম্পন্ন হয়।
হ্যাকিংয়ের পর এ সংক্রান্ত আলামত ধ্বংস ও অপরাধ ধামাচাপা দিতে রাকেশ আস্তানা নামে ভারতীয় আরেক নাগরিককে ক্রাইম সিনের (সার্ভার কক্ষ) এক্সেস হাতে তুলে দেন। তদন্ত সংশ্লিষ্ট একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে বলেন, রাকেশ আস্তানাকে দিয়ে ৩৯ দিন পরীক্ষা-নিরীক্ষার নামে প্রকারান্তরে সব আলামত ডিলেট করান আতিউর। নিয়ম হচ্ছে, সরকারি প্রতিষ্ঠান যদি কাউকে এ ধরনের (মুছে ফেলা তথ্য পুনরুদ্ধার) কাজ দিতে চায় তাহলে টেন্ডার করে চুক্তিবদ্ধ হয়ে তাকে ভেতরে প্রবেশের অনুমতি দিতে হবে। তথ্য গোপনের অসৎ উদ্দেশ্যে এ ক্ষেত্রে তা করা হয়নি। ঘটনার পর মামলা কিংবা জিডি করতে দেননি আতিউর। জরুরি ভিত্তিতে ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে পুলিশের সহায়তা নেওয়া হয়নি বা তাদের অবহিত করা হয়নি। এমনকি সাবেক অর্থমন্ত্রীকেও কিছু জানানো হয়নি। এ অবস্থায় ‘আন-অথরাইজড’ ব্যক্তিকে সার্ভারের কর্তৃত্ব হাতে তুলে দেন আতাউর। যা বড় ধরনের জাল জালিয়াতি। গভর্নর ও তার ঘনিষ্ঠ আস্থাভাজন কর্মকর্তাদের সহায়তায় হ্যাকিংয়ের গুরুত্বপূর্ণ আলামত নষ্ট করে বেরিয়ে যান রাকেশ আস্তানা।
আরও জানা যায়, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ হ্যাকিংয়ের পর তা চাপা দেওয়াসহ পুরো বিষয়টি নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি না করতে হুকুম জারি করেন আতিউর। অপরাধে জড়িতদের শনাক্ত করার ক্ষেত্রেও বড় ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেন তিনি। হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে অর্থ লুটের পর তিনি ঘটনাটি আড়াল করতে কোনো দপ্তর যেমন-গোয়েন্দা সংস্থা, আইসিটি মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কিংবা রিজার্ভ হ্যাকিংয়ের বিষয়ে অপরাধীদের শনাক্ত করার ক্ষেত্রে সহায়তাকারী কোনো ব্যক্তি কিংবা প্রতিষ্ঠানেরও সহায়তা নেননি। ফিলিপিনসের একটি পত্রিকার মাধ্যমে খবর ছড়িয়ে পড়লে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ হ্যাকিংয়ের বিষয়টি সামনে আসে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলোর তথ্য, বাংলাদেশ ব্যাংকের এবিডি শাখার সার্ভারে আরটিজিএস প্রকল্প আনার পর অনুমোদিত লোকজনকে দিয়ে মেলওয়্যার বা ভাইরাস ঢোকানো হয়। এর প্রধান উদ্দেশ্য ছিল রিজার্ভ থেকে ২ মিলিয়ন অর্থ সরিয়ে অন্য কাউকে লাভবান করা কিংবা নিজেরা ভিন্ন কৌশলে লাভবান হওয়া। দক্ষিণ কুরিয়ার এক হ্যাকারের মাধ্যমে ৪ ফেব্রুয়ারি রাতে ফিলিপিনসের আরসিবি ব্যাংকের একটি শাখার ৪টি ভুয়া অ্যাকাউন্টে টার্গেটকৃত ২ বিলিয়নের মধ্যে ১০১ মিলিয়ন ডলার সরানো হয়। হ্যাকারের ভুলে বাকি আরও প্রায় ১ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি আর ট্রান্সফার করা সম্ভব হয়নি। যদি ওই সময় হ্যাকাররা ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার তাদের সহযোগীদের হিসাবে ট্রান্সফার করে ফেলত, সেই অর্থ পরিকল্পনায় যুক্ত সবার মাঝে ভাগবাঁটোয়ারা হতো। আর বাংলাদেশ বড় ধরনের আর্থিক ঝুঁকিতে পড়ত। যদিও রিজার্ভ থেকে ওই অর্থ লুটের পর থেকে তা ধীরে ধীরে নিম্নমুখী হতে থাকে। এখনো রিজার্ভ অনেকটাই নিম্নমুখী। আতিউর ও তার সিন্ডিকেটের কারণে বাংলাদেশের আর্থিক সক্ষমতার ওপর চরম আঘাত আসে।
ঘটনার পর মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই আংশিক (ছায়া) তদন্ত করেছিল। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা তখন জানিয়েছিলেন, রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় এত বড় হ্যাকিংয়ের ঘটনা ঘটেছে। এফবিআইয়ের তদন্ত সম্পর্কিত তথ্যের সত্যতা মেলে ২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের আগ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৮ বছরে তৎকালীন গভর্নর আতিউরসহ তার দোসরদের রক্ষার আলামত ও কর্মকাণ্ড থেকে। আওয়ামী সরকারের অন্তত দুজন সাবেক মন্ত্রী-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, স্বরাষ্ট্র সচিব কামাল, অর্থ বিভাগের সচিব আসাদ ও সিআইডি প্রধান মোহাম্মদ আলীসহ গণভবন ও প্রধানমন্ত্রীর বরাতে আতিউর ও তার সহযোগী বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের রক্ষায় সর্বাত্মক চেষ্টা চালানো হয়। এমনকি রিজার্ভ হ্যাকিংয়ের ঘটনা তদন্তে রাষ্ট্র কর্তৃক গঠিত ফরাসউদ্দিন তদন্ত কমিটির রিপোর্টও আলোর মুখ দেখতে দেওয়া হয়নি। তার দাপটে রিজার্ভ হ্যাকিংয়ের সঙ্গে জড়িতদের সবাইকে শনাক্ত করা গেলেও আদালতে তাদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দিতে পারেনি সিআইডি। আতিউর ও তার পক্ষ নিয়ে প্রভাবশালীরা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তৎকালীন এডিশানাল এসপি (বর্তমানে পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত ডিআইজি) রায়হান উদ্দিন খানকে চাপ দেন, যাতে আতিউর বা বাংলাদেশ ব্যাংকের কাউকে আসামি করা না হয়। তাদের বাদ দিয়ে শুধু হ্যাকার ও বিদেশি কয়েকজনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দিতে চাপ প্রয়োগসহ নানাভাবে প্লট তৈরি করেন আতিউর। এক্ষেত্রে তিনি আরেকটি কূটকৌশলের আশ্রয় নেন, তা হলো- তদন্ত কর্মকর্তাকে বাদ দিয়ে সিআইডির প্রধান মোহাম্মদ আলীর ঘনিষ্ঠ কয়েকজন পরিদর্শককে দিয়ে চার্জশিট তৈরি করে তা আদালতে দাখিল করান। যাতে আতিউর বা বাংলাদেশ ব্যাংকের জড়িত কেউ আসামি থাকবে না। সেটি পরে বাস্তবায়ন হয়নি ৫ আগস্ট দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তন ও হাসিনা সরকারের পতনের কারণে।
সূত্রমতে, হ্যাক করে রিজার্ভ থেকে ১০১ মিলিয়ন ডলার লুটের ঘটনাটি প্রমাণের জন্য বিশেষ করে হ্যাক হয়েছিল কিনা বা এর জন্য হ্যাকাররা কোন ডিভাইস ব্যবহার করে, বাংলাদেশ ব্যাংকের কোন সার্ভার ও পিসির এক্সেস নেয় চক্রটি-সেটি নিশ্চিত হওয়ার জন্য সিআইডি সাড়ে আট বছর আগে ফরেনসিক ল্যাবে আলামত টেস্টের উদ্যোগ নেয়। কিন্তু আতিউরের হস্তক্ষেপে সেটিও সময়মতো করতে পারেনি সিআইডি। গত বছর ফরেনসিক পরীক্ষা করে সংস্থাটি। এতে হ্যাকিং প্রমাণিত মর্মে ৬৩৭ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন দেয় ফরেনসিক বিভাগ। সেটি হাতে পাওয়ার পর তদন্ত কর্মকর্তা আতিউর রহমানসহ তার দোসর হিসাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের অপর ১২ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিলের উদ্যোগ নিলে তাকে সিআইডি থেকে জয়পুরহাটে অসম্মানজনক বদলি করা হয়। এই বদলির আদেশ কার্যকর হয় ২৪ ঘণ্টার মধ্যে।
হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে রিজার্ভ লুটের ঘটনাটি সাবেক গভর্নর ও তার সহযোগীদের সহায়তায় ঘটলেও কারও নাম উল্লেখ না করে ঘটনার ৩৯ দিন পর ১৫ মার্চ মতিঝিল থানায় মামলা করে এবিডি শাখার যুগ্ম পরিচালক জোবায়ের বিন হুদা। ফৌজদারি দণ্ডবিধির ১৭৯ (চুরির অপরাধ) ধারাসহ ২০১২ সালের মানি লন্ডারিং আইনের ৪ ধারা এবং ২০০৬ সালের আইসিটি আইনের ৫৪ ধারায় মামলাটি করা হয়। যা ছিল হ্যাকিং ও রিজার্ভ লুটের ঘটনায় বড় ধরনের ঘাটতি। সংশ্লিষ্টরা জানান, গভর্নর আতিউর ও তার সহযোগীদের রক্ষায় মামলায়ও ছলচাতুরীর আশ্রয় নেওয়া হয়। তদন্ত করতে গিয়ে সিআইডি মামলার ত্রুটি-বিচ্যুতি লক্ষ করে। তারা দেখতে পান, আর্থিকভাবে সুবিধা পেতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের নেতৃত্বে সিন্ডিকেট সুইফটের সঙ্গে আরটিজিএস-এর সংযোগ স্থাপনের মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক দুর্বৃত্ত ও হ্যাকারদের সঙ্গে অনেক দিন ধরে যোগাযোগ স্থাপন করেছিলেন। এসব অপরাধ দুদকের তফশিলভুক্ত অপরাধ। ফলে দুদকের পক্ষ থেকে সম্প্রতি সিআইডির কাছে পুরো মামলার ‘কেস-ডকেট’ (ফাইল) চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়। এতে বলা হয়, দণ্ডবিধির ২১ ধারা, ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারা ও ব্যাংক কোম্পানি আইনের ‘প্রযোজ্য’ ধারায় সরকারি কর্মকর্তা (পাবলিক সার্ভেন্ট) হিসাবে দুদকের তফশিলভুক্ত অপরাধ হিসাবে তদন্ত করার বিষয়ে সিআইডির সহায়তা প্রয়োজন। মামলার নথি দুদকের কাছে হস্তান্তরের অনুরোধ করে দুদক।
সিআইডি সূত্রে জানা গেছে, তারা দুদকের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে মামলার নথি সরবরাহ করতে চান। কারণ এ মামলায় জড়িতদের অপরাধ দুদকের নিজস্ব আইনে তদন্তযোগ্য। দুদক যদি মনে করে সিআইডির কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে যারা এর তদন্তের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তাদেরও সম্পৃক্ত করতে পারে। এ ছাড়া আইসিটি আইনের ধারা ও মানি লন্ডারিং আইনের ধারার অপরাধ যদি দুদকের তফশিলে তদন্তের ক্ষেত্রে সমস্যা হয়, সেই অংশটুকু সিআইডি তদন্ত করতে পারে। এরই মধ্যে সিআইডি রিজার্ভ লুটে জড়িত দেশি-বিদেশি চক্রটিকে শনাক্ত করেছে। এর মধ্যে আতিউর রহমানসহ বাংলাদেশ ব্যাংকের রয়েছেন কমপক্ষে ১২-১৩ জন। দুজন ভারতীয় নাগরিক-নীলা ভান্নান ও রাকেশ আস্তানা, বেসরকারি দুটি ব্যাংকের দুজন ব্যবস্থাপনা পরিচালক। দুদক তদন্ত করলে এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে জানা গেছে। সেক্ষেত্রে, যেসব মন্ত্রী-সচিব এবং পুলিশ ও সিআইডির পদস্থ কর্মকর্তা আতিউরসহ বাংলাদেশ ব্যাংকের জড়িত কর্মকর্তাদের রক্ষায় সব ধরনের প্রভাব বিস্তার ও ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন তাদেরও তদন্তের আওতায় আনা হতে পারে বলে আভাস পাওয়া গেছে। দুদক চেয়ারম্যান ড. এমএ মোমেন জানান, তারা এ মামলাটি পুঙ্খানুপুঙ্খ দেখতে চান। রাষ্ট্রের এত বড় আর্থিক দুর্নীতির ঘটনায় কারা জড়িত-আইনানুগভাবে সেটিও দেখা দরকার।
সিআইডির বর্তমান তদন্ত কর্মকর্তা ইয়াসিনের কাছে আতিউর রহমানসহ জড়িত অপরাধীদের বিষয়ে তদন্তে বাধা প্রদানসহ সর্বশেষ অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, আমি আমার কাজটুকু করার চেষ্টা করেছি। এর বেশি কিছু বলতে চাননি তিনি।
রিজার্ভ লুটের নীলনকশার বিষয়ে জানার জন্য সাবেক গভর্নর আতিউর রহমানের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলেও সংযোগ পাওয়া যায়নি। পরে খোঁজ নিয়ে জানা গেল তিনি ৫ আগস্টের পরই দেশ ত্যাগ করে চলে যান। এখন তিনি কোন দেশে আছেন তা নিশ্চিত হতে খোঁজখবর নিচ্ছে তদন্ত সংস্থা। সূত্র: যুগান্তর
ফাইল ছবি
অনিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল বন্ধের প্রক্রিয়া আপাতত স্থগিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তফা জব্বার। মঙ্গলবার ( ২৮ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় গণমাধ্যমকে তিনি বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
মোস্তফা জব্বার বলেন, আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী আজকেই শেষ দিন ছিল অনিবন্ধিত নিউজ পোর্টালগুলো বন্ধের জন্য। তবে বিটিআরসি'র তালিকা ধরে নিউজ পোর্টালগুলো বন্ধের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিলো যেখানে বেশকিছু ত্রুটি আছে। তাই আপাতত অনিবন্ধিত নিউজপোর্টাল বন্ধের প্রক্রিয়া স্থগিত করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমরা তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় এর কাছে তালিকা চেয়েছি, তাদের দেওয়া তালিকা অনুযায়ী অনিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল গুলো বন্ধ করা হবে। এ জন্য আদালতের কাছেও নতুন করে সময় চাওয়া হয়েছে বলে জানান মন্ত্রী।
এরআগে, দুপুরের পর থেকে অনিবন্ধিত নিউজপোর্টালগুলো বন্ধের প্রক্রিয়া শুরু করে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। সে সময় বেশকিছু নিউজপোর্টাল বন্ধ দেখতে পাওয়া যায়।
উল্লেখ্য, গত ১৪ সেপ্টেম্বর দেশের সব অনিবন্ধিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। যা আগামী সাত দিনের মধ্যে বিটিআরসি চেয়ারম্যান ও প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যানকে এ নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে।
এ সংক্রান্ত এক রিটে সম্পূরক আবেদনের শুনানি নিয়ে মঙ্গলবার (১৪ সেপ্টেম্বর) হাইকোর্টের বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লার সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন দুই রিটকারী আইনজীবী জারিন রহমান ও রাশিদা চৌধুরী নীলু। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার নওরোজ মো. রাসেল (এম আর) চৌধুরী। সূত্র: ইত্তেফাক