a
ফাইল ছবি
গত ১৫ আগস্ট আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল দখল করে নেয় তালেবান। এর মধ্য দিয়ে দীর্ঘ ২০ বছর পর দেশটির পুরো নিয়ন্ত্রণ নেয় বিদ্রোহী গোষ্ঠী তালেবান।
আর তালেবান কাবুল দখলের আগেই আফগানিস্তান ছেড়ে পালায় মার্কিন মদতপুষ্ট দেশটির প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি। এরপর হঠাৎ করেই দেশটির পরিস্থিতি পুরোপুরি পাল্টে যায়। আফগানিস্তানের মাটি ছেড়ে পালাতে থাকে বিদেশি সব সৈন্য ও নাগরিকরা।
আফগানিস্তানের এই পরিস্থিতিকে নিম্নোক্তভাবে মূল্যায়ন করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
তিনি বলেছেন, আমেরিকা গত ২০ বছর ধরে নিজের মূল্যবোধগুলোকে আফগানিস্তানের জনগণের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছে কিন্তু ওয়াশিংটনের কপালে পরাজয় ও বিপর্যয় ছাড়া আর কিছুই জোটেনি।
বুধবার রাশিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় ভ্লাদিভস্তকে স্কুলের নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরুর একটি অনুষ্ঠানে তিনি এসব মন্তব্য করেন।
পুতিন বলেন, এই যুদ্ধের মধ্য দিয়ে এটা প্রমাণিত হলো- কোনও মূল্যবোধ অন্য কোনও জাতির ওপর চাপিয়ে দেওয়া যায় না। আফগানিস্তানে আমেরিকার হস্তক্ষেপ ত্রুটিপূর্ণ ছিল বলেও মন্তব্য করেন।
রুশ প্রেসিডেন্ট বলেন, মার্কিন বাহিনী গত ২০ বছরে আফগানিস্তানের জনগণের জীবন-যাপনে পরিবর্তন আনার চেষ্টা করেছে। মার্কিনিরা আফগানদের ওপর নিজেদের নিয়মকানুন ও জীবনযাপনের আদর্শ জোর করে চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছে।
তিনি বলেন, এর ফলাফল হিসেবে এসেছে বিপর্যয়। আর আমেরিকার হয়ে যারা কাজ করেছেন তারা প্রাণ হারিয়েছেন। আর এই যুদ্ধে আমেরিকার অর্জন শূন্য।
পুতিন আফগানিস্তান ইস্যুতে এর আগেও বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কথা বলেছেন। তিনি বলেছিলেন, আফগানদের মতো কোনও জাতির সঙ্গে কাজ করতে গেলে তাদের ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং দর্শন আমলে নেওয়া অবশ্যই জরুরি।
সংগৃহীত ছবি
আফগানিস্তান থেকে আমেরিকান সেনা পুরোপুরি প্রত্যাহারের পর ঝড়ের গতিতে একের পর এক অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিচ্ছে তালেবান। তালেবান আবারও আফগানিস্তান নিয়ন্ত্রণ করবে এসব সম্ভাবনায় অপরাপর অনেক দেশই উদ্বিগ্ন। তবে সবচেয়ে বেশি উৎকন্ঠায় আছে ভারত। খবর বিবিসি বাংলা।
এ প্রসঙ্গে দিল্লির জওহারলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক ড. সঞ্জয় ভরদোয়াজ বলেন, অনেক দেশই আফগানিস্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে উৎকন্ঠায়, কিন্তু অন্য যে কোনো দেশের চেয়ে আফগানিস্তানে সবচেয়ে বেশি স্বার্থ এখন ভারতের। তালেবান আবার ক্ষমতা নিলে ভারতের ক্ষতি হবে সবচেয়ে বেশি।
তিনি বলেন, ভারতের নিরাপত্তা এবং অর্থনৈতিক ও ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থের জন্য আফগানিস্তানের গুরুত্ব অপরিসীম। ফলে ভারত এখন জটিল এক সংকটে পড়েছে।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবর অনুসারে, আফগানিস্তানে প্রভাব বিস্তারে ভারত গত দুই দশকে চার শতাধিক সামাজিক-অর্থনৈতিক এবং বড় বড় অবকাঠামো প্রকল্পে ৩০০ কোটি ডলারেও বেশি বিনিয়োগ করেছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ক্রীড়া, সাংস্কৃতিক উন্নয়নে ডজন ডজন প্রকল্প ছাড়াও, দিলারাম-জারাঞ্জ মহাসড়ক নামে ২১৮ কিমি দীর্ঘ গুরুত্বপূর্ণ একটি সড়ক তৈরি করে দিয়েছে ভারত। কাবুলে নতুন আফগান পার্লামেন্ট ভবনটিও তৈরি করেছে তারা।
চলমান শত শত প্রকল্পের কাজও এখন মুখ থুবড়ে পড়বে। যে উদ্দেশ্যে এসব বিনিয়োগ, তার ভবিষ্যৎ কী? এগুলো কি পানিতে যাবে? ভারতের নীতি-নির্ধারকরা এখন সে চিন্তায় অস্থির।
তবে শুধু ৩০০ কোটি ডলার বিনিয়োগের বিষয় নয়, বরং আরও অনেক কারণে ভারতের জন্য আফগানিস্তানের গুরুত্ব রয়েছে। মধ্য এশিয়ার বাজারে ঢোকার জন্য ভারতের জন্য আফগানিস্তান খুবই জরুরি। তবে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ এসবের চেয়েও বেশি।
নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. ভরদোয়াজ বলেন, কাশ্মীর নিয়ে পাকিস্তানের সঙ্গে এবং লাদাখ নিয়ে চীনের সঙ্গে ভারতের বিপজ্জনক দ্বন্দ্ব চলছে। এখন আফগানিস্তান শত্রু রাষ্ট্রে পরিণত হলে ভারতের জন্য তা এক বড় রকম মাথাব্যথা তৈরি হবে। সূত্র: বিবিসি বাংলা
ছবি সংগৃহীত
নিউজ ডেস্ক: জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বিতীয় পর্যায়ের সপ্তম দিনের বৈঠক আজ আবারও শুরু হয়েছে। বৈঠকের আলোচ্যসূচি নির্বাচনি এলাকা নির্ধারণ, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও রাষ্ট্রপতির ক্ষমা প্রদর্শন।
আজ বুধবার (২ জুলাই) বেলা ১১টা ৮ মিনিটে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এই বৈঠকে বিএনপি-জামায়াতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা অংশ নিয়েছেন।
বৈঠকে সভাপতিত্ব করছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। এ ছাড়া কমিশনের সদস্য সফর রাজ হোসেন, বিচারপতি এমদাদুল হক, ড. বদিউল আলম মজুমদার ও ড. আইয়ুব মিয়াও উপস্থিত রয়েছেন।
সংস্কার প্রশ্নে ঐকমত্য তৈরির লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় পর্বে বিষয়ভিত্তিক আলোচনা করছে ঐকমত্য কমিশন। এই পর্বে মৌলিক সংস্কারের ২০টির মতো প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে। এখন পর্যন্ত আলোচনা হয়েছে ৯টি বিষয়ে। ঐকমত্য হয়েছে মাত্র দুটি বিষয়ে। আর কিছু ক্ষেত্রে আংশিক ঐকমত্য হয়েছে। তবে কোনো বিষয় এখনো আলোচনার টেবিল থেকে বাদ দেওয়া হয়নি।
যেসব সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে ইতোমধ্যে আলোচনা হয়েছে সেগুলো হচ্ছে, সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদে পরিবর্তন, বিরোধী দল থেকে সংসদীয় কমিটির সভাপতি করা, ১০০ নারী আসনে সরাসরি ভোট, দ্বি-কক্ষবিশিষ্ট সংসদ, প্রধান বিচারপতি নিয়োগ, জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) গঠন, রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচন, প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদকাল (এক ব্যক্তি সর্বোচ্চ কত সময় প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারবেন) এবং সংবিধানে রাষ্ট্রের মূলনীতি। এর মধ্যে এনসিসির পরিবর্তে ‘সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ কমিটি’ গঠনের নতুন প্রস্তাব আনা হয়।
এই প্রস্তাবগুলোর মধ্যে ৭০ অনুচ্ছেদ ও বিরোধী দলগুলোকে আসনের অনুপাতে সংসদীয় কমিটির সভাপতি পদ দেওয়ার বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে। পাশাপাশি এক ব্যক্তি জীবনে সর্বোচ্চ ১০ বছর প্রধানমন্ত্রী পদে থাকতে পারবেন—এমন প্রস্তাব নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো মোটামুটি একমত হলেও এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
বিএনপি বলেছে, সংবিধানে এনসিসি বা এ ধরনের কোনো কমিটি গঠনের বিধান রাখা হবে না। এই শর্ত পূরণ হলে তারা প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদকালের বিষয়টি মেনে নেবে।
এ ছাড়া নির্বাচনি এলাকার সীমানা নির্ধারণ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রূপরেখা, সংবিধান সংশোধন পদ্ধতি, জরুরি অবস্থা ঘোষণার প্রক্রিয়া, স্থানীয় সরকারে নারী প্রতিনিধিত্ব, উচ্চকক্ষের নির্বাচন পদ্ধতি, জেলা সমন্বয় কাউন্সিল গঠন ইত্যাদি বিষয়ে এখনো আলোচনা শুরু হয়নি।
এর আগে গত ২৯ জুনের বৈঠকের শুরুতে আলী রীয়াজ বলেন, ‘আমরা স্বপ্ন দেখেছিলাম আবু সাঈদের শাহাদাত বার্ষিকীতে (১৬ জুলাই) সবাই মিলে জুলাই সনদে স্বাক্ষর করব। কিন্তু বাস্তবে সেটি কতটা সম্ভব হবে, তা নির্ভর করছে রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর। এ বিষয়ে আমাদের এখন খানিকটা শঙ্কাও রয়েছে।’
সূত্র: ইউএনবি।