a
ফাইল ছবি: জো বাইডেন ও জেলনস্কি
ইউক্রেনকে রক্ষা করতে বা রাশিয়ার আক্রমণ ঠেকাতে আমেরিকা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ন্যাটোসহ অন্যান্য দেশ যখন একাট্টা হয়ে কূটনৈতিক, অর্থনৈতিক অবরোধ ও প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে সামরিক সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে ইউক্রেনকে। তখন হঠাৎ আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কয়েকটি মন্তব্যে বিশ্বের নজর যুদ্ধের ময়দান থেকে এখন বাইডেনের মন্তব্য ঘিরে।
বাইডেনের সেসব মন্তব্যকে হালকা করে তুলে ধরে প্রকারন্তরে তাকে সমালোচনার হাত থেকে উদ্ধারে চেষ্টা করে যাচ্ছেন অনেক বিশ্বনেতা। নিচে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রনেতা ও বিশেষজ্ঞদের মতামত উল্লেখ করলে এর পরিস্কার ধারণা পাওয়া যাবে।
সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়, শনিবার পোল্যান্ডের রাজধানী ওয়ারশতে ইউক্রেনের শরণার্থীদের কাছে তাদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা শুনে বাইডেন পুতিনকে ‘কসাই’ আখ্যায়িত করেন। পোল্যান্ড সফরে গিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, ইউক্রেনে হামলার নির্দেশ দেওয়ায় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন আর ক্ষমতায় থাকতে পারেন না।
জো বাইডেনের এসব বক্তব্যের কড়া সমালোচনা করেছেন ক্ষুদ প্রবীণ মার্কিন কূটনীতিক রিচার্ড হাস। মার্কিন বৈদেশিক সম্পর্ক পরিষদের সভাপতি রিচার্ড হাস এক টুইট বার্তায় বলেন, 'বাইডেনের এই মন্তব্য একটি জটিল পরিস্থিতিতে আরও জটিল করবে এবং একটি বিপজ্জনক পরিস্থিতিকে আরও বিপজ্জনক করে তুলবে।'
অপরদিকে, একদিন পর রবিবার (২৭ মার্চ) পুতিনকে ক্ষমতাচ্যুত করার বক্তব্য নিয়ে সুর পাল্টিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র নিজেও। এ প্রসঙ্গে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন বলেন, রাশিয়ার বর্তমান শাসন ব্যবস্থায় পরিবর্তনে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো পরিকল্পনা নেই।
ইউক্রেনে হামলা করায় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ‘ক্ষমতায় থাকতে পারেন না’ বলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের করা মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে যুক্তরাজ্যও। যুক্তরাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী নাদিম জাহাবী বাইডেনের মন্তব্যের সমালোচনা করে বলেন, মন্তব্যটি ক্রেমলিনকে আরও শক্তিশালী করতে পারে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান রোববার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের মুখ ফসকে বের হয়ে যাওয়া বক্তব্যের ব্যাখা অব্যাহত রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র। ন্যাটোতে নিয়োজিত দেশটির দূত জুলিয়ান স্মিথ বলেছেন, বাইডেনের বক্তব্য ‘স্বাভাবিক মনুষ্য প্রতিক্রিয়া’।
ন্যাটোতে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের দূত জুলিয়ানের কাছে— পুতিন ক্ষমতায় থাকুক যুক্তরাষ্ট্র তেমনটি চায় কিনা, বক্তব্য পরিষ্কার করতে বললে তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট বাইডেনসহ সম্পূর্ণ প্রশাসন মনে করে, ইউক্রেনে যুদ্ধের মুহূর্তে্ আমরা পুতিনকে ক্ষমতায়ন করতে পারি না।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিরুদ্ধে বাইডেনের জ্বালাময়ী বক্তব্যকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট উত্তেজনা নিয়ে সতর্ক করেছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। গার্ডিয়ানের খবরে উল্লেখ করা হয়েছে, পুতিনকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বাইডেন যে বক্তব্য দিয়েছেন, ফরাসি প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ তা থেকে নিজেকে দূরে রেখেছেন।
পুতিনকে নিয়ে বাইডেনের বক্তব্যকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট উত্তেজনার বিষয়ে ম্যাক্রোঁর প্রতিক্রিয়া জানতে চান সাংবাদিকরা। জবাবে ম্যাক্রোঁ বলেন, বাইডেনের মতো তিনি ওইসব শব্দগুলো ব্যবহার করবেন না।
ফরাসি প্রেসিডেন্ট বলেন, সব কিছু করা উচিত উত্তেজনা থামানোর জন্য, যাতে ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধ বন্ধ হয়। ম্যাক্রোঁ বলেন, তার লক্ষ্য প্রথমে যুদ্ধবিরতি এবং পরবর্তীতে সম্পূর্ণ সেনা প্রত্যাহার। এটা করতে হলে কথা কিংবা কাজের মাধ্যমে উত্তেজনা বাড়ানো উচিত নয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
জেরুজালেমে সফরে সাংবাদিকদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিনকেন বলেন, 'আমি মনে করি প্রেসিডেন্ট, হোয়াইট হাউজ গত রাতে এই বিষয়টি খুব সহজভাবে তুলে ধরেছেন। প্রেসিডেন্ট পুতিনকে ইউক্রেন বা অন্য কারো বিরুদ্ধে যুদ্ধ বা আগ্রাসন চালানোর ক্ষমতা দেওয়া যাবে না।'
ব্লিনকেন এসময় আরও বলেন, আপনারা জানেন এবং আমাদের কাছ থেকে বারবার বলতে শুনেছেন, রাশিয়ায় বা অন্য কোথাও, এই বিষয়ে শাসন ব্যবস্থা পরিবর্তনের পরিকল্পনা আমাদের নেই।
রাশিয়া ইউক্রেনে আক্রমণের পর আমেরিকা যেভাবে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে এবং আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ন্যাটোর সদস্যগুলোকে নিয়ে একাট্টা বেধে রাশিয়ার বিরুদ্ধে যেসব কৌশল অবলম্বন করেছেন তা অনেকটা সফল বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করলেও, সর্বশেষ বাইডেনের উপরেল্লিখিত মন্তব্য ও পাল্টা মন্তব্যে ইউক্রেনের যুদ্ধ ময়দান থেকে সবার কৌশল বাইডেনের মন্তব্য আড়াল করা।
লেখক: মোহা. খোরশেদ আলম, আন্তর্জাতিক কলাম লেখক, সম্পাদক, মুক্তসংবাদ প্রতিদিন
ফাইল ছবি । রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন
ইসলাম ধর্ম এবং রাশিয়ায় বসবাসকারী মুসমানদের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
তিনি বলেছেন, “ইসলাম শান্তির ধর্ম, এ ধর্মের অনুসারীরা ঐতিহ্যগতভাবে সুশৃঙ্খল এবং রাষ্ট্রীয় নিয়ম-নীতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল। মুসলিমরা খুবই সামাজিক এবং তাদের শিষ্টাচার ও পারিবারিক বন্ধন অটুট।”
পবিত্র ইদুল আজহায় মুসলিম নেতাদের শুভেচ্ছা জানিয়ে ইসলামের শান্তি বাণী প্রচার করায় তাদের ধন্যবাদ জানান। খবর আনাদোলু এজেন্সির।
ইউরোপীয় দেশগুলোর মধ্যে বর্তমানে সবচেয়ে বেশি ৩ কোটি মুসলমান বসবাস করছেন রাশিয়ায়। খ্রিস্টান প্রধান দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্ম বর্তমানে ইসলাম।
অপর এক পৃথক বিবৃতিতে রুশ প্রধানমন্ত্রী মিখাইল মিশুসতিনও মুসলিমদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, রাশিয়ার মুসলমানরা নিজ দেশের মূল্যবোধকে ধারণ করে এবং দেশের অগ্রগতিতে অবদান রাখছে। এ কারণে রাশিয়ায় দিন দিন দ্যূতি ছড়াচ্ছে এবং প্রসার ঘটছে ইসলামের।
ইদুল আজহা উপলক্ষে মস্কোর মেয়র সার্গে সোবিয়ানিনও পৃথক এক বাণীতে মুসলিমদের শুভেচ্ছা জানান।
ফাইল ছবি: শ্রীরাধা দত্ত
ভারত সরকার কখনই মার্কিন সরকারের কাছে গিয়ে বাংলাদেশ বা আওয়ামী লীগের হয়ে দেন-দরবার করবে না বলে মন্তব্য করেছেন ভারতের জিন্দাল স্কুল অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্সের অধ্যাপক এবং দক্ষিণ এশিয়া বিশ্লেষক প্রফেসর শ্রীরাধা দত্ত। বিবিসি বাংলাকে এক সাক্ষাতে তিনি এসব কথা বলেন।
যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞার হুমকির ইস্যুতে ভারত সরকার কি বাংলাদেশে সরকারের পাশে থাকবে? এ প্রশ্ন এখন নানা জায়গায় আলোচিত হচ্ছে। এ নিয়ে বিবিসি বাংলার এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, আমেরিকা র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পর সুরাহার জন্য বাংলাদেশ সরকার দিল্লির দ্বারস্থ হয়েছিল বলে খবর বেরিয়েছিল যা তারা অস্বীকার করেনি।
ভারত এখন যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ একটি কৌশলগত সহযোগী দেশ এবং কোয়াডের সদস্য। খুবই ঘনিষ্ঠ একটি প্রতিরক্ষা সহযোগিতা গড়ে উঠেছে দুই দেশের মধ্যে। তাছাড়া, ভারতের বাজারও আমেরিকান বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর জন্য খুবই লোভনীয়।
কিন্তু দিল্লি কি তাদের সেই কূটনৈতিক-অর্থনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে আওয়ামী লীগের ওপর চাপ কমাতে সাহায্য করবে? ভারতের জিন্দাল স্কুল অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্সের অধ্যাপক এবং দক্ষিণ এশিয়া বিশ্লেষক প্রফেসর শ্রীরাধা দত্ত বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ দিল্লির ওপর ভরসা করে এবং এখনও করবে, কিন্তু ভারতেরও কিছু সমস্যা রয়েছে। ভারত কি আমেরিকাকে বলবে বাংলাদেশ নিয়ে তোমরা যা করছো সেটি ঠিক নয়? আমার মনে হয়না ভারত তা করবে।’
বাংলাদেশ বা আওয়ামী লীগের হয়ে ভারত সরকার দেন-দরবার করবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এটা ঠিক যে কূটনীতি বিভিন্ন চ্যানেলে হয়, ভারত হয়ত ট্র্যাক টু বা ট্র্যাক থ্রি চ্যানেলে একথা তুলবে, কিন্তু ভারত সরকার কখনই মার্কিন সরকারের কাছে গিয়ে বাংলাদেশ বা আওয়ামী লীগের হয়ে দেন-দরবার করবে না।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের চাপ থাকলেও রোহিঙ্গা সংকটে নিয়েও ভারত মিয়ানমার সরকারের ওপর কখনই খোলাখুলিভাবে কোনো চাপাচাপি করেনি। তবে মিজ দত্ত স্বীকার করেন ভারত চায় আওয়ামী লীগের সরকার বাংলাদেশে থাকুক কারণ, তার মতে, নিরাপত্তা নিয়ে ভারতের উদ্বেগগুলো সবসময় শেখ হাসিনা আন্তরিকভাবে বিবেচনা করেছেন, যা নিয়ে দিল্লি কৃতজ্ঞ।’
এ কারণে, তিনি বলেন, ‘পরপর দুটো নির্বাচন নিয়ে বিস্তর প্রশ্ন উঠলেও ভারত চোখ বুজে ফলাফলকে মেনে নিয়েছে। এটা ঠিক যে ভারত আওয়ামী লীগকে অন্ধের মত সমর্থন করেছে...কিন্তু আমেরিকা এখন যেভাবে ক্ষেপে উঠেছে সেটা ভারতের জন্য চিন্তার জায়গা তো বটেই। মনে হচ্ছেনা আমেরিকানরা পেছোবে। সেখানে ভারত কী করতে পারবে তা নিয়ে আমি সন্দিহান।’
এর আগে র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা নিয়েও ভারত যে বাংলাদেশের হয়ে আমেরিকার সঙ্গে জোরালো কোনও দেন-দরবার করেছে তার কোনো নজির নেই বলে উল্লেখ করেন। সূত্র: ইত্তেফাক