a স্বাধীনভাবে কথা বলার সুযোগ নেই সংসদে: জাতীয় পার্টির মহাসচিব
ঢাকা শুক্রবার, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩২, ১২ ডিসেম্বর, ২০২৫
https://www.msprotidin.com website logo

স্বাধীনভাবে কথা বলার সুযোগ নেই সংসদে: জাতীয় পার্টির মহাসচিব


মুক্তসংবাদ প্রতিদিন ডেস্ক::
মঙ্গলবার, ০৫ এপ্রিল, ২০২২, ০৩:৪২
স্বাধীনভাবে কথা বলার সুযোগ নেই সংসদে: জাতীয় পার্টির মহাসচিব

ফাইল ছবি

জাতীয় পার্টির (জাপা) মহাসচিব ও কিশোরগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য মুজিবুল হক চুন্নু বলেছেন, যতক্ষণ সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ থাকবে ততক্ষণ সংসদ সদস্যদের স্বাধীন কথা বলার সুযোগ নেই। বাজেটে সংসদ সদস্যদের কোনো অংশগ্রহণ নেই। স্বাধীনভাবে (কথা) বলার সুযোগ নেই।

মঙ্গলবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ নিয়ে আলোচনা হয়। এসময় একটি বিল পাসের ওপর আলোচনাকালে বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরাও এসব মন্তব্য করেন।

মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, সংসদের কি খুব একটা ক্ষমতা আছে? যিনি সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা তার হাতেই সকল ক্ষমতা। দলের সিদ্ধান্তের বাইরে কারো কিছু বলার ক্ষমতা আছে? সদস্য পদ কি থাকবে? এ সময় বিএনপির সাংসদ রুমিন ফারহানাও একই প্রশ্ন তোলেন।

প্রসঙ্গত: সংবিধানের ৭০ অনুূচ্ছেদ অনুযায়ী কোনো সংসদ সদস্য দলের সিদ্ধান্তের বাইরে ভোট দিতে পারেন না। এতে বলা আছে, কোনো রাজনৈতিক দলের প্রার্থী রূপে মনোনীত হয়ে কোনো ব্যক্তি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলে সংসদে ওই দলের বিপক্ষে ভোটদান করলে সংসদে তার আসন শূন্য হবে। সূত্র: বিডি প্রতিদিন

মুক্তসংবাদ প্রতিদিন / কে. আলম

২০ দফা দাবি নিয়ে আত্মপ্রকাশ করলো "জনতার বাংলাদেশ পার্টি"


সাইফুল আলম, বিশেষ প্রতিনিধি, মুক্তসংবাদ প্রতিদিন
বৃহস্পতিবার, ১৩ মার্চ, ২০২৫, ০৭:৪৬
২০ দফা দাবি নিয়ে আত্মপ্রকাশ করলো জনতার বাংলাদেশ পার্টি

ছবি: মুক্তসংবাদ প্রতিদিন

 

সাইফুল আলম, ঢাকা:  তারুণ্যের শক্তিতে আইনজীবীদের উদ্যোগে- জনতার বাংলাদেশ পার্টি হোক নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে - এই স্লোগানকে সামনে রেখে এবং বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের কল্যাণ বয়ে আনার জন্য ২০ দফা দাবি নিয়ে আত্মপ্রকাশ করলো নতুন রাজনৈতিক দল "জনতার বাংলাদেশ পার্টি"।

দলের সভাপতি - এ্যাডভোকেট সফিকুল ইসলাম সবুজ খানের সভাপতিত্বে আইনজীবীদের উদ্যোগে বাংলাদেশের নতুন রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ হয় আজ ১৩ই মার্চ ২০২৫, জাতীয় প্রেসক্লাব, ঢাকার আব্দুস সালাম হলে। দলের সাধারণ সম্পাদকের সঞ্চালনায় এবং সাংগঠনিক সম্পাদক জাহিদুর রহমান এর বলিষ্ঠ ও গঠনমূলক বক্তব্যের মাধ্যমে শুরু হওয়া এই অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন দলের সিনিয়র নেতৃবৃন্দরা এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ।

নতুন এই দলের সভাপতি এ্যাডভোকেট সফিকুল ইসলাম সবুজ খান তার মূল বক্তব্যে বলেন, আজ জনতার বাংলাদেশ পার্টির জন্য একটি ঐতিহাসিক দিন। আজ আনুষ্ঠানিক বীজ রোপণ করা হলো। একদিন ফুলে ফুলে ছেয়ে যাবে পুরো দেশ। তার সৌরভ উপলব্ধি করবে মানুষ। তার মূল উদ্দেশ্য একটি সুস্থ, সুন্দর, মানবিক ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় আজন্ম বিপ্লবী ভূমিকায় থাকবে। এই দেশ সকলের, কৃষকের, শ্রমিকের, ছাত্র ও জনতার, শিক্ষক ও বুদ্ধিজীবীর সকল মানুষের বাংলাদেশ এই ধারণাটা স্মরণ করিয়ে দিতে চাই বাংলাদেশ হবে জনতার, কোন ফ্যাসিবাদের নয়। যখনই বাংলাদেশ রাজনৈতিক সংকটে পড়েছে '৭১ থেকে ২০২৪ এই ছাত্র-জনতা বাংলাদেশকে প্রকৃত বাংলাদেশে '৭১-এর চেতনা ফিরিয়ে দিতে জীবন দিয়েছে এবং ফ্যাসিবাদের কবল থেকে দেশকে মুক্ত করেছে।

আগামী প্রজন্ম কোন বাংলাদেশে বাস করবে? ক্ষমতার না জনতার, দিন দিন অনিরাপদ বদ্ধভূমিতে পরিণত হচ্ছে। ক্ষমতার মোহ ত্যাগ করে যতক্ষণ না জনতার কাতারে দাঁড়াবে ততক্ষণ দেশ উন্নত হবে না। সবাই চায় ক্ষমতা। আর জনতার বাংলাদেশ পার্টি চায় জনতা, জনতা ও মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি।

আজ পুলিশের গায়ে মানুষ হাত তোলে। পুলিশ জনতার না হয়ে ক্ষমতার হয়ে গিয়েছিল। পুলিশ হবে রাষ্ট্রের, কোন দলের নয়। পুলিশ হবে জনতার, নেতাদের নয়। পুলিশ আজ বিতর্কিত, প্রশ্নবিদ্ধ? সারা দেশে হাসিনার ছাত্রলীগের পুলিশ ছেয়ে আছে। বর্তমানে পুলিশ দর্শকের ভূমিকায় নিজেদের অবস্থান ও হাসিনার শোকে এখনও কেঁদে চলছে, তাই অপরাধীরা দেশটাকে অস্থির করে তুলছে। পুলিশ হয় দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করুক, অন্যথায় দ্রুত নিরপেক্ষ পুলিশ নিয়োগ দেওয়া হোক। দেশকে তো আর সন্ত্রাসীদের হাতে তুলে দেওয়া যায় না। জনতার বাংলাদেশ পার্টি রাজনীতিতে টাকার প্রভাবকে ঘৃণা করে, সততা, আদর্শ ও যোগ্যতাকে সম্মান করে।

রাজনীতি হয়ে উঠেছে অভিজ্ঞ ব্যবসায়ীদের দাবার খেলা। এই রাস্তা আমাদের বদলাতে হবে। কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ (Invest) করবে, মনোনয়ন নিবে, তারপর এমপি-এর পর হাজার হাজার কোটি টাকা উপার্জন করবে, এটা আর হতে দেওয়া যায় না। এই লোভের রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ণ থেকে আমাদের বেড়িয়ে আসতে হবে। এখনি ইসলামি রাষ্ট্র গঠনের শপথ নিতে হবে, অন্যথায় দেশ আরও পিছিয়ে যাবে। যে মানুষ আল্লাহকে ভয় পায় না, নবী-রাসুলের নিয়ম-কানুন মানে না সে কখনও আদর্শ নেতা হতে পারে না। তার দ্বারা নিজের লাভ হতে পারে কিন্তু দেশের লাভ হয় নাই। আমরা মানুষকে মূল্যায়ন না করে টাকাকে মূল্যায়ন করি। আর কত বছর গেলে আমরা ব্যক্তিত্ববান হবো? আমাদের চরিত্র ক্যানভাসারের মতো হয়ে গেছে।

আমরা আগামি নির্বাচনে যদি নিবন্ধন লাভ করি তাহলে ২০০ আসনে আইনজীবী প্রার্থী দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বাকি ১০০ আসন হবে অন্যান্য পেশাজীবীর। দেশের রাজনীতিতে নির্মূল হোক টাকার প্রভাব। সততা আর যোগ্যতা হোক প্রশংসিত। ফিরে আসুক সত্যের উদ্ভাসিত সূর্য ও
তারুণ্যের জয়গান।

জনতার বাংলাদেশ টাকার রাজনীতি নয়, যোগ্যতার রাজনীতি করতে চায়, দেশের সেবা করতে চায়। মিথ্যার বদ্ধভূমিতে দাঁড়িয়ে সত্যের জয়গান করতে চায়।

জনতার বাংলাদেশ পার্টি ২০ দফা নিম্নরূপ :
১। যানজট নিরসন ।
২। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ ।
৩। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা ।
৪। কর্মসংস্থান সৃষ্টি ।
৫। মাদকদ্রব্য নির্মূল করা।
৬। সুশিক্ষা বা নৈতিক শিক্ষার প্রসার ।
৭। দেশের প্রান্তিক পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা ।
৮। দুর্নীতি রোধ।
৯। মানবাধিকার সুরক্ষা ও নাগরিক হিসাবে সর্বোচ্চ জীবনযাপন করা।
১০। বৈষম্যহীন সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা।
১১। নিরাপদ বাসযোগ্য ভূমি ।
১২। রাজনীতিতে টাকার প্রভাব ও পেশিশক্তি কমিয়ে মেধাবিদের অগ্রাধিকার ।
১৩। মানুষকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করা।
১৪ । কৃষিকে উৎসাহিত করা বা কৃষি বিপ্লব ঘটানো ।
১৫। ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ও সুস্থ মালিক সম্পর্ক বৃদ্ধি করা।
১৬। ইসলামি ব্যবস্থাকে অগ্রাধিকার দিয়ে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত ধর্মশিক্ষা বাধ্যতামূলক করা।
১৭। জনসংখ্যাকে প্রকৃত মানব সম্পদে রূপান্তরিত করা।
১৮। দেশকে উৎপাদনমুখী করা ।
১৯ । প্রশাসনকে শক্ত করে স্বনির্ভর বাংলাদেশ গড়া।
২০। দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব অক্ষুণ্ণ রাখা।

সভাপতি আরো বলেন, এই অসুস্থ সমাজকে ৭ মাসে বদলে দেওয়া যায়, যেটি যুগ যুগ ধরে নষ্ট হয়ে আছে। এই আইন- আদালত ও আইন-শৃঙ্খলার প্রতি কি মানুষের আস্থা থাকবে? মানুষ কোথায় যাবে?
জনতার বাংলাদেশ পার্টির স্লোগান ও উদ্দেশ্য :
২৬ মে ২০২১ সালে জনতার বাংলাদেশ পার্টির আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশ হয়। মূল উদ্দেশ্য ছিল মানুষ হিসাবে মানুষের সেবা করা, করোনা, বন্যায়, দুর্যোগে, বঞ্চিত ও শোষিত মানুষের পাশে থেকে সেবা ও কথা বলে আসছে। পরবর্তীতে দীর্ঘদিন ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলন করায়, দেশের মানুষের পক্ষে কথা বলায় পুলিশ অসংখ্যবার আমার উপর আক্রমণ করে। আমাকে ২ বার গ্রেফতার করে ও আমার বিরুদ্ধে ২২টি রাষ্ট্র বিরোধী মামলা দায়ের করা হয়। কিন্তু জনতার বাংলাদেশ সকল বাধাকে অতিক্রম করে অনলাইন, অফলাইনে মিছিলে সরকার বিরোধী প্রোগ্রামে সরব অবস্থানে নিজেকে জানান দিয়ে গেছে। এখন জুলাই-২০২৪ বিপ্লবের পরে ফ্যাসিবাদী সরকার বিদায় নেওয়ায় সকলের জন্য রাজনীতি করার একটি উন্মুক্ত প্লাটফার্ম তৈরি হয়েছে। তাই জনতার বাংলাদেশ পার্টি সেই প্লাটফর্ম থেকে সারা বাংলাদেশকে জানান দিচ্ছে এবং সুন্দর বাংলাদেশ গড়ার আহ্বান করছে।

বাংলাদেশে আমাদের ইতিহাস মৃত্যুর '৭১-এ জীবন দিতে হয়েছে। বিভিন্ন ধাপে ধাপে জীবন দিতে হয়েছে, আর '২৪ সালেও হাজার হাজার ছাত্র-জনতার জীবন দিতে হয়েছে। বার বার আমরা মরে জেগে উঠি। দেশের প্রয়োজনে রেড়ে উঠি। এভাবে আর কত মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ হবে? প্রাণঘাতি শূন্যে নামিয়ে আনা উচিত। জনতার বাংলাদেশ আপনাকে স্পষ্ট বার্তা দিতে এসেছে, বাস্তবতা তুলে ধরবে, সত্য তুলে ধরবে, রাজনীতিতে টাকার প্রভাবকে নির্মূল করার চেষ্টা করবে, যতই কঠিন পরিস্থিতি হোক।

আইনজীবীরা সমাজের দর্পণ। A Natural Leader of Society সকল পেশার মানুষের অনুভূতি অনুধাবন করে আইনজীবীরা, মেধা আর যোগ্যতার বদৌলতে রাজনৈতিক হয়ে উঠছে পেশিশক্তি আর টাকার বাহার, এখন থেকে আর না। রাজনীতি হবে সৎ, একজন স্কুল শিক্ষকের জন্য, খেটে খাওয়া মানুষের জন্য, মেধাবিদের জন্য, সাংবাদিকদের জন্য, আইনজীবীদের জন্য ও আদর্শ ছাত্র নেতাদের জন্য । টাকার ছড়াছড়ি রাজনীতি বন্ধ হোক।

আমরা যদি সুযোগ পাই, বাংলার মাটিতে কোন ভাড়াটিয়া থাকবে না। আমি বাংলাদেশী, আমি সরকারকে ট্যাক্স দেই। আমার দেওয়া ভোটে সরকার হয়। তাহলে আমি ভাড়া থাকব কেন? আমরা যদি ক্ষমতায় যেতে পারি তাহলে প্রত্যেক পরিবারকে ধাপে ধাপে একটি করে ফ্ল্যাটের ব্যবস্থা করে দিব ইনশাল্লাহ। কেহ গৃহহীন থাকবে না। এ বিষয়ে সকলের সহযোগিতা কামনা করছি। গুলিস্তান থেকে রামপুরা, বাড্ডা, কুড়িল ফ্লাই ওভার পর্যন্ত মেট্রোরেল নির্মাণ করা, গুলিস্তান থেকে যাত্রাবাড়ী, শনির আখড়া, সাইনবোর্ড, কাঁচপুর পর্যন্ত ফ্লাই ওভার নির্মাণ করা। যদি আপনারা আমাদেরকে সুযোগ দেন।

মুক্তসংবাদ প্রতিদিন / কে. আলম

একটি জাতিকে তার সংস্কৃতি ধ্বংসের মাধ্যমেই দমন করা সম্ভব


কর্নেল(অব.) আকরাম, অধ্যাপক ও কলাম লেখক
বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৫, ১২:২২
একটি জাতিকে তার সংস্কৃতি ধ্বংসের মাধ্যমেই দমন করা সম্ভব

ছবি সংগৃহীত

 

বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা: একটি জাতির জন্য সংস্কৃতি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর একটি। এটি দীর্ঘকাল ধরে সমাজে চর্চার ফলাফল হিসেবে গড়ে ওঠে। কোনো একটি নির্দিষ্ট সমাজের জীবনধারার প্রতিফলনই হলো সংস্কৃতি, যা সময়ের ব্যবধানে গড়ে ওঠে। একটি জাতির সংস্কৃতি রাতারাতি গড়ে ওঠে না—বরং এটি দীর্ঘ সময় ধরে চর্চা ও অভ্যাসের মধ্য দিয়ে রূপ নেয়। আধুনিক সভ্যতার শুরু থেকে সমাজের যেমন, তেমনি জাতির মেরুদণ্ড হিসেবে সংস্কৃতি বিবেচিত হয়ে এসেছে। একটি জাতিকে তার সংস্কৃতি ধ্বংসের মাধ্যমে সহজেই দমন করা সম্ভব।

বাংলাদেশ সমাজ বহুদিন ধরেই ভারতের সাংস্কৃতিক আধিপত্যের লক্ষ্যে পরিণত হয়ে এসেছে এবং ভারত এতে অনেকাংশে সফল হয়েছে। তারা আমাদের ইসলামি বিশ্বাস ও মূল্যবোধভিত্তিক পুরোনো সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ধ্বংস করতে পেরেছে। ফলে আমরা আজ এমন একটি জাতিতে পরিণত হয়েছি যার দৃঢ় নিজস্ব মূল্যবোধ নেই, বরং তথাকথিত বাঙালি সংস্কৃতির অনুসারী, যার ভিত্তি মূলত হিন্দু চর্চায় প্রোথিত। এর ফলস্বরূপ, ১৯৭১ সালের স্বাধীনতার পর থেকেই বাংলাদেশের সমাজ বিভাজনের শিকার হয়েছে। দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠী মুসলমান, যারা কখনও এই তথাকথিত বাঙালি সংস্কৃতি—যেটিকে আওয়ামী লীগ সরকার শুরু থেকেই পৃষ্ঠপোষকতা করেছে—গ্রহণ করতে পারেনি।

যদি আমরা মধ্যযুগীয় ভারতের ইতিহাসের দিকে তাকাই, তাহলে দেখি ইসলাম সেই সময় সমাজে প্রভাব বিস্তার করেছিল এবং একটি নতুন জীবনধারার জন্ম দিয়েছিল। মুসলিম শাসনামলে সমাজে সাংস্কৃতিক বিভাজন থাকলেও শাসকদের পক্ষ থেকে কোনো হুমকি ছিল না। বরং সেই সময় হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতি বজায় ছিল। ইসলাম হিন্দু সমাজে শান্তিপূর্ণভাবে প্রবেশ করেছিল এবং কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ছাড়াই সমাজে প্রভাব বিস্তার করেছিল—হিন্দুধর্ম ধ্বংসের কোনো উদ্দেশ্য ইসলামি প্রবর্তকদের ছিল না।

কিন্তু মুসলিম শাসনের পতন, যা শুরু হয় ১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধে এবং শেষ হয় ১৮৫৭ সালে বাহাদুর শাহ জাফরের পতনের মাধ্যমে, সেই সময় ভারতীয় সমাজে দীর্ঘস্থায়ী সম্প্রীতির অবসান ঘটে। ব্রিটিশরা সহজে শাসন করার লক্ষ্যে বিভাজন ও শাসন নীতি গ্রহণ করে। এর ফলে ভারতীয় সমাজে বিভেদ সৃষ্টি হয়।

এই বিভাজনের সুযোগে হিন্দু সমাজ শাসকদের সমর্থন ও সুবিধা পায়, আর মুসলিম সমাজ অবহেলিত ও বঞ্চিত হয়ে পড়ে। রাজা রামমোহন রায় ও ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের মতো হিন্দু সমাজ সংস্কারকরা হিন্দুদের জাগরণে ভূমিকা রাখেন। অপরদিকে, মুসলিম সমাজ তখন নানা দিক থেকে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে।

মুসলিম সমাজকে রক্ষার লক্ষ্যে শাহ ওলিউল্লাহ, সৈয়দ আহমদ বেরেলভী, স্যার সৈয়দ আহমদ খান প্রভৃতি ব্যক্তিত্ব অবদান রাখেন। বাংলার মাটিতে হাজী শরিয়তুল্লাহ, পীর দুধু মিয়া ও তিতুমীর ইসলামি আদর্শের পথে মুসলমানদের ফিরিয়ে আনতে আন্দোলন করেন। সৈয়দ আমীর আলী ও ড. আল্লামা ইকবালের অবদান মুসলিম উম্মাহর জাগরণে স্মরণীয়। স্যার সলিমুল্লাহ ও মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ভারতের মুসলিম সমাজকে জাগ্রত করতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন।

শেরে বাংলা এ. কে. ফজলুল হক, মাওলানা আকরাম খান, আবদুল মনসুর আহমদের নিরলস প্রচেষ্টায় বাঙালি মুসলমানদের মাঝে হিন্দু বাঙালি সংস্কৃতি থেকে পৃথক এক নিজস্ব সংস্কৃতির চেতনা গড়ে ওঠে।

পাকিস্তান আমলে মুসলিম বাঙালি সংস্কৃতি বিকশিত হতে পারেনি, বরং ধর্মনিরপেক্ষ বাঙালি সংস্কৃতির উত্থান ঘটে এবং ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে তা তীব্র রূপ পায়। ভাষা আন্দোলনের ছদ্মাবরণে বাঙালি জাতীয়তাবাদের উত্থান ঘটে, যার মধ্য দিয়েই ভারতের সাংস্কৃতিক আধিপত্য আক্রমণাত্মক রূপ ধারণ করে।

সংস্কৃতি উন্নয়নের নামে ভারতের সাংস্কৃতিক আধিপত্য তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে সহজেই প্রবেশ করে তাদের নিজস্ব এজেন্টদের মাধ্যমে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা—বিশেষ করে বাংলা বিভাগের শিক্ষকগণ—বাঙালি জাতীয়তাবাদের মূল পথপ্রদর্শক হয়ে ওঠেন। আওয়ামী লীগ ও ন্যাপ (মোজাফফর) এর মাধ্যমে তারা ভারতের সহায়তায় বাংলাদেশ সৃষ্টিতে সফল হন। স্বাধীনতার পর তারা পূর্ণ স্বাধীনতা পায় ধর্মনিরপেক্ষ বাঙালি সংস্কৃতি প্রচারে। উদীচী ও ছায়ানট হয় তাদের প্রধান কর্মক্ষেত্র, যেখান থেকে তারা বাংলাদেশে এই সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠায় কাজ করে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউট “মঙ্গল শোভাযাত্রা”-র মাধ্যমে পহেলা বৈশাখ উদযাপনকে উৎসব হিসেবে সমাজে প্রচলন করে, যা আওয়ামী লীগ সরকারের সরাসরি পৃষ্ঠপোষকতায় সমাজে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। এটি ইসলামী মূল্যবোধের বিরুদ্ধে এক উন্মুক্ত হুমকি হিসেবে দেখা দিয়েছে, যা বাংলাদেশের ইসলামপ্রিয় মানুষের ভাবনাকে উপেক্ষা করে। হেফাজতে ইসলাম ও আরও ২/১টি দল ছাড়া কেউ এর বিরুদ্ধে কার্যকর অবস্থান নেয়নি এবং তারাও সফল হতে পারেনি।

ভারতের সাংস্কৃতিক আগ্রাসন শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী শাসনামলে চূড়ান্ত রূপ নেয়। ভারত তাদের অর্থায়িত এজেন্টদের মাধ্যমে বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও শিক্ষা ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করে। বাংলাদেশের মুসলমানরা এই সাংস্কৃতিক আধিপত্যের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে গিয়েছে এবং ভবিষ্যতে এ থেকে মুক্তি পাওয়ার আশা প্রায় হারিয়ে ফেলেছিল।

ঠিক তখনই, যখন জনগণ সব আশা ছেড়ে দিয়ে আল্লাহর রহমতের আশায় দিন গুনছিল, হঠাৎ এক ছাত্র-জনতার নেতৃত্বে গণ-অভ্যুত্থান ঘটে, যা এক বিপ্লবের রূপ নেয়। ২০২৪ সালের জুলাই বিপ্লব অনাকাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন এনে দেয় এবং শেখ হাসিনাকে দেশত্যাগে বাধ্য করে।

এইভাবে বাংলাদেশ জাতি মুক্ত হয় শেখ হাসিনার স্বৈরাচারী শাসন ও ভারতের রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক আধিপত্য থেকে। এখন বাংলাদেশের মানুষ এক নতুন স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে—এক নতুন বাংলাদেশের। আমরা এবারের নববর্ষ উদযাপন দেখে আশান্বিত। এর কৃতিত্ব বর্তমান সরকার ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের।

আমরা আশাবাদী যে, নিকট ভবিষ্যতে আরও ইতিবাচক পদক্ষেপ আমরা দেখতে পাব। সরকারের উচিত হবে মাটির সংস্কৃতিকে সযত্নে রক্ষা ও লালন করা।

জুলাই বিপ্লব ও পরবর্তী রাজনীতি রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর দায়িত্ব আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। জনগণ এখন পরিণত ও দূরদর্শী নেতৃত্ব প্রত্যাশা করছে। দলগুলো যেন বর্তমান সরকারকে প্রয়োজনীয় সংস্কার করতে সাহায্য করে এবং একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে সহায়তা করে—এটাই জাতির প্রত্যাশা।

মুক্তসংবাদ প্রতিদিন / কে. আলম
Share on Facebook

মুক্তসংবাদ প্রতিদিন এর সর্বশেষ

মুক্তসংবাদ প্রতিদিন এর জনপ্রিয়

সর্বশেষ - রাজনীতি