a
ফাইল ছবি
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) নির্বাচনে আজ সকাল ৮টায় ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে এবং এ ভোট চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। এই নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী। তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে লড়ছেন বিএনপি হতে অব্যাহতি পাওয়া স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার।
একটানা ১৭ দিন প্রচার-প্রচারণা শেষে আজ নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। আগামী পাঁচ বছরের জন্য কে বন্দরনগরীর মেয়র হবেন, তা নির্ধারণ হবে আজ।
জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ জানান, আমাদের ৯ জন ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশের ৩০টি টিম মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে। ইতিমধ্যে আমরা আরও ৩০ জন ম্যাজিস্ট্রেট পেয়েছি। পাশাপাশি আমাদের পুলিশের প্রায় ৭৬টি টিম রয়েছে। র্যাবের ৬৫টি টিম রয়েছে। বিজিবির ২০টি দল মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে। এর বাইরে আমাদের আরও ছয় জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কাজ করছে।
জেলা প্রশাসক আরো বলেন, বহিরাগত কেউ নারায়ণগঞ্জে নেই। কিংবা সরকারি দলের কেউ প্রশাসনের সহায়তা পাচ্ছে না।
নাসিকের এবারের নির্বাচনে মেয়র পদে ৭জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১৪৮ জন ও সংরক্ষিত মহিলা আসনে ৩৪ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
এই সিটিতে মোট ভোটার ৫ লাখ ১৭ হাজার ৩৬১ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৫৯ হাজার ৮৪৬ জন। মহিলা ভোটার ২ লাখ ৫৭ হাজার ৫১১ জন।
ছবি: মুক্তসংবাদ প্রতিদিন
আরাফাত আলম, বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা: বাংলাদেশ লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির চেয়ারম্যান ও জাতীয় ঐক্য সমন্বয় পরিষদের প্রধান সমন্বয়কারী, সাবেক মন্ত্রী এম. নাজিম উদ্দিন আল-আজাদ ১৭ মার্চ, সোমবার, জাতীয় প্রেসক্লাবে জহুর হোসেন চৌধুরী হলে জাতীয় ঐক্য সমন্বয় পরিষদ-এর উদ্যোগে সাংবাদিক সম্মেলনে নিম্নোক্ত ১৯ দফা দাবি তুলে ধরেন। দাবিসমূহ:
১। জুলাই-আগস্ট ২০২৪ গণহত্যাসহ সকল গুম, নির্যাতন, শাপলা চত্বরে খুন ও বিডিআর হত্যা এবং ভোটাধিকার হরণের বিচার দ্রæত সম্পন্ন করতে হবে। ফ্যাসিস্ট ও তাদের দোসরদেরও বিচার করতে হবে এবং রাজনীতি করা থেকে বিরতসহ তাদেরকে অবিলম্বে গ্রেফতার করতে হবে।
২। সকল প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পূর্ণ করে জাতীয় নির্বাচন করতে হবে যৌতিক সময়ের মধ্যে।
৩। জাতীয় ঐক্যমতের সরকার চাই, দ্বি-কক্ষবিশিষ্ট সংসদ চাই, ঔপনিবেশিক শাসন ব্যবস্থার পরিবর্তন চাই, শাসক ও শোষকের অবসান চাই।
৪। অত:পর গণপরিষদ নির্বাচন করে গণপরিষদ সদস্যদের ভোটে সংবিধান সংশোধন করতে রাষ্ট্রিয় ব্যবস্থাপনায় মৌলিক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে জুলাই-আগষ্ট গণ অভ্যুত্থানের চেতনা সমৃদ্ধ নতুন সংবিধান পণয়ন করার দাবি জানাই। যেন আর কোন ফ্যাসিবাদ ও স্বৈরাচার সৃষ্টি হতে না পারে এবং নির্বাচন কমিশনের উপর রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধ হয়। যাতে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করা যায় সেই ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।
৫। সরকার শুধুমাত্র কয়েকটি দলের সাথেই সংলাপ করে সংলাপ হয়ে গেছে বলে জাতীকে জানিয়ে যাচ্ছে। জাতীয় জণমত জরিপে যাছাইয়ের মাধ্যম ছাড়া হতে পারে না। এটি একটি চুড়ান্ত পদক্ষেপ নয় বলেও জাতি মনে করে। সরকারের নিকট আমাদের স্পষ্ট বক্তব্য হলো দেশের সকল রাজনৈতিক দলগুলোর সামাজিক সংগঠন, নাগরিক সংগঠন ও নাগরিক, পেশাজীবিসহ সকল পর্যায়ের স্টেক হোল্ডারদের সংগে আলোচনা করে সকল জাতীয় গুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিলে প্রকৃপক্ষে জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হবে বলে আমাদের নিকট প্রতীয়মান হয়। এটাই বাস্তবতা এবং এটাই সময়ের দাবি। আমাদের জানা মতে, দেশে ১৫০-১৬০ টির মতো রাজনৈতিক দল রয়েছে। ২০২৩ সালে নির্বাচন কমিশনকে ৯৩টি দল নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছে, সে সকল দলের সংগে সংলাপ করতে হবে অন্যথায় এ সংলাপও সিদ্ধান্তসমূহ অর্থবহ হবে না।
আমাদের জানা মতে দেশে ফ্যাসিবাদ ও তাদের দোসর ছাড়া প্রায় ৯৩টির মতো রাজনৈতিক দল রয়েছে। যাদের নিবন্ধন নেওয়ার জন্য নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে রেজিস্ট্রেশনের জন্য প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
৬। অবিলম্বে মানুষের নিত্য প্রয়োজনীয় চাউল, তেল, পানি-বিদ্যুৎ-গ্যাস- জ্বালানী তেলসহ সকল দাহ্য পদার্থের দাম কমাতে হবে। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। ব্যবসায় সিন্ডিকেট ভেঙ্গে দিয়ে জনমনে স্বস্তি আনতে হবে। মূদ্রাস্ফীতি কমাতে হবে। ব্যাংকিং খাত শক্তিশালী করতে হবে। অর্থনৈতিক মুক্তি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে। নাগরিকদের কর্মসংসংস্থান সৃষ্টি করতে পারলেই প্রকৃত গণতন্ত্রের পথে যাওয়া সহজ হবে। ব্যবসা-বান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। অর্থনৈতিক সচল করাসহ সকল ধরনের চাঁদাবজি বন্ধ করতে হবে।
৭। সরকারের উপদেষ্টাদের আরো তৎপর ও শক্তিশালী হতে হবে।
৮। সরকারের দেশ চালাতে যদি সমস্যা মনে করেন বা তাদের নিকট যদি ভার মনে হয় তাহলে আমাদের স্পষ্ট বক্তব্য হলো প্রয়োজনে পূর্ণাঙ্গ ক্যাবিনেট করে জাতীয় সরকার বা বিকল্প সরকার গঠন করতে হবে। যাতে করে শক্তিশালীভাবে দেশ পরিচালিত হয় এবং ছাত্র জনতার গণ আন্দোলনের চেতনাকে ধারণ করতে হবে। আমরা চাই এই সরকার যাতে ব্যর্থ না হয়ে সফলতা অর্জন করে। এ বিষয়ে গণভোট (জবভবৎবহফঁস) জনগণের মতামত নেওয়া যেতে পারে।
৯। দেশের ভাবমূর্তি তুলে ধরতে কূটনৈতিক মিশনে ফ্যাসিস্টদের দোসরদের প্রত্যাহার করে দেশ প্রেমিক যোগ্যদের নিয়োগ দিতে হবে। বিশেষত: ভারতে বসে ফ্যাসিস্ট স্বৈরাচার হাসিনা দেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। ভারতের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে দেশপ্রেমিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
১০। প্রশাসনের সকল স্তরে ফ্যাসিস্ট ও তাদের দোসরদের প্রত্যাহার করে বা বরখাস্ত করে দেশপ্রেমিক যোগ্যদের নিয়োগ অবিলম্বে কার্যকর করতে হবে।
১১। সংসদ সদস্যদের সংখ্যা ৫০০তে উন্নীত করতে হবে। দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট রাষ্ট্র ব্যবস্থায় উচ্চকক্ষে ২০০ জন সদস্য (সিনেটর) করতে হবে। এক্ষেত্রে আমাদের প্রস্তাবগুলো সংসদ সদস্যদের খরচ কমাতে হবে।
১২। শিক্ষা কমিশন গঠন করতে হবে। যাতে থাকবে আলেম ওলামাসহ জ্ঞানী ব্যক্তিগন। ফ্যাসিস্টদের শিক্ষা ব্যবস্থা বাতিল করে দেশ ও জাতীর কল্যাণে ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষাসহ বিশ্ব মানের শিক্ষা ব্যবস্থা প্রনয়ন করতে হবে। জুলাই গনঅভ্যুথানকে আমরা ধারন করি, সম্মান করি এই চেতনা অব্যাহত থাকুক।
১৩। আন্দোলনে সকল শহীদদের ক্ষতিপুরন দিতে হবে। দ্রু তাদের ক্ষতিপুরনের ব্যবস্থা করতে হবে। সকল আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা এবং তাদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ব্যয় নির্বাহ করা। তাদের জন্য কর্ম সংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। সারা দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা সাফল্য ফিরিয়ে আনতে হবে।
১৪। আমরা বাংলাদেশ কে একটি উন্নত রাষ্ট্রে পরিনত করতে চাই। যা বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাড়াতে পারে। অর্থনৈতিক মুক্ত ও অর্থনৈতিক বৈষম্য নূন্যতম পর্যয়ে থাকে। রাজনীতি নয় রাজনীতি নয় জননীতিতে কাজ করতে হবে। সাম্য, ন্যায় বিচার ও সামাজিক মর্যাদা নিশ্চিত করতে হবে।
১৫। এছাড়াও আমরা জাতীয় ঐক্য ও গন মানুষের সরকার প্রতিষ্ঠার লক্ষে ও রাজনৈতিক সমাজিক ও পেশাদারকে ঐক্যবদ্ধ করে ঐক্যবব্ধ বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে জাতীয় ঐক্য সমন্বয় পরিষদ এর আরো পরিসর বৃদ্ধি করতে হবে।
১৬। কৃষক-শ্রমিক মেহনতী মানুষের অধিকার সংরক্ষণে সকল প্রকার জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নীতিমালা অনুসরণ করা হবে।
১৭। কুরআন ও সুন্নাহ পরিপন্থী কোনো আইন পাস করা যাবে না।
১৮। রাষ্ট্রীয় সকল মৌলিক প্রশ্নে জাতীয় ঐক্যমত্য বাংলাদেশী জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠাকরণ এবং উদার গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে গতানুগতিক রাজনৈতিক ধারা পরিবর্তন করা।
১৯। তেল, গ্যাস, কয়লা ইত্যাদি উৎসের পাশাপাশি পানিসম্পদ থেকে বিদ্যুতের উৎপাদন ব্যবস্থা করা, এছাড়া নিরাপদ পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করে জাতীয়ভাবে বিদ্যুৎ সমস্যা সমাধান করা। জনগণের গোচরীভুক্ত করে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সকল চুক্তি সম্পাদন করা।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টির চেয়ারম্যান, জাতীয়ঐক্য সমন্বয় পরিষদের সমন্বয়কারী ও মিডিয়া উইং চীপ শেখ মোস্তাফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে জাতীয় ঐক্য সমন্বয় পরিষদের প্রধান সমন্বয়কারী ও সাবেকমন্ত্রী এম. নাজিম উদ্দিন আল-আজাদ আরও বলেন, বর্তমানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আরও দৃঢ়ভাবে দেশকে পরিচালনা করতে অন্যান্য দলের ন্যায় তাদের সমন্বয় পরিষদের সকল দলের সার্বিক সহযোগিতা থাকবে। পাশাপাশি তিনি জাতীয় ভীত মজবুত করতে সরকারের গৃহীত বিভিন্ন সংস্কার কমিশন গঠন প্রক্রিয়াকে অভিনন্দন জানান। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, কমিশনগুলো যাতে দ্রুত সংস্কার সম্পন্ন করে দেশে সকল ধরণের নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন করা সহজতর হয়।
পাশাপাশি জুলাই আগষ্টে ছাত্র জনতার গণ অভ্যু্ত্থানের মধ্যদিয়ে দীর্গ ১৬ বছর ধরে জগদ্দল পাথরের ন্যায় জাতির ঘাঁড়ের উপর জবরদস্তি চেপে বসে সম্পূর্ণ ফ্যাসিবাদ শাসনের মাধ্যমে এদেশের সকল রাজনৈতিক দলের কণ্ঠরোধ করে দেওয়া হয়েছিল। একইসাথে গণ অভ্যুত্থান প্রতিহত করতে ফ্যাসিবাদ সরকারের দলীয় মন্ত্রী, এমপি, ছাত্র ও শ্রমিক সংগঠনের নেতা কর্মিরা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কায়দায় ছাত্র জনতা তথা বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতা কর্মিদের ওপর গুলিবর্ষণ, হত্যা, গুম, নির্যাতন, আয়নাঘরে রেখে অমানবিক পরিস্থিতির মধ্যে তাদের মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করা হয়েছে। তাদের সঠিক বিচার করে যৌক্তিক সময়ের মধ্যে জাতীয় সরকার গঠন করে জনগনের প্রত্যাশিত অবাধ-নিরপক্ষ ও অংশগ্রহন মূলক জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সমন্বয় পরিষদের সকল দলের চেয়াম্যান, মহাসচিবসহ দলের কর্মী। উপস্থিত দলের চেয়ারপার্সনরা হলেন: জাতীয় মুক্তিদলের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা এটিএম মমতাজুল করিম, বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান সেকেন্দার আল মনি, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক আন্দোলনের চেয়ারম্যান এ. আর. এম. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, স্বাধীন পার্টির চেয়ারম্যান মির্জা আজম, ফেডারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির চেয়ারম্যান প্রফেসর এ আর খান, বাংলাদেশ জনতা পার্টির চেয়ারম্যান এসএম মোস্তাফিজু ররহমান, জাতীয় স্বাধীনতা পার্টির চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মিজু, অ্যাপ্লাইড ডেমোক্রেটিক পার্টির চেয়ারম্যান প্রিন্সিপাল এম আর করিম, বাংলাদেশ পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান মোঃ সিদ্দিকুর রহমান, বাংলাদেশ স্বাধীন পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোঃ জুয়েল সমট্রা চিসতী, সিটিজেন পার্টির চেয়ারম্যান ড. আসলাম আল মেহেদী,বাংলাদেশ ইসলামী সাম্যবাদী দল পার্টির চেয়ারম্যান মুফতি নুরুল আমিন, বি.আর.পি পার্টির চেয়ারম্যান মোঃ হারুন অর রশিদ হিরু, বাংলাদেশ মানবাধিকার আন্দোলন পার্টির সভাপতি চেয়রম্যান খাজা মহিবউল্লাহ শান্তিপুরী, স্বদেশ পার্টির চেয়ারম্যান মোঃ আনিছুর রহমান, মানবাধিকার ও পরিবেশ উন্নয়ন পার্টির চেয়ারম্যান অধ্যাপক খোরশেদ আলম প্রমুখ।
ছবি: মুক্তসংবাদ প্রতিদিন
সাইফুল আলম, ঢাকা: আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবস-২০২৫ উপলক্ষ্যে রিসোর্স ইন্টিগ্রেশন সেন্টার (রিক) আজ ০৮ অক্টোবর, ২০২৫ তারিখে জাতীয় প্রেস ক্লাবের দ্বিতীয় তলায় তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে একটি র্যালী ও আলোচনা সভার আয়োজন করে। আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের মাননীয় সচিব জনাব মোঃ সাইদুর রহমান । বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন সমাজসেবা সেবা অধিদফতরের মহাপরিচালক জনাব মোঃ সাইদুর রহমান খান এবং নারী সংষ্কার কমিশনের সদস্য ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ড. হালিদা হানুম আখতার। এছাড়া বক্তাগণ জাতীয় পর্যায়ে প্রবীণ সুরক্ষা ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে প্রবীণদের নেতৃত্ব, অংশগ্রহণ ও অবদানের গুরুত্ব তুলে ধরেন ।
আলোচনা অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন রিসোর্স ইন্টিগ্রেশন সেন্টার (রিক) এর নির্বাহী পরিচালক জনাব আবুল হাসিব খান । প্রকল্প সমন্বয়কারী খন্দকার রিয়াজ হোসেন এর সঞ্চালনায় অনেক অতিথিবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।
বিশেষ অতিথি হিসাবে সমাজসেবা সেবা অধিদফতরের মহাপরিচালক জনাব মোঃ সাইদুর রহমান খান বলেন, প্রবীণদের আয় নিরাপত্তা, স্বাস্থ্যসেবায় অভিগম্যতা বাড়ানো ও উন্নয়নে প্রবীণ নারীর অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করার উদ্যোগ আমরা ইতিমধ্যেই নিয়েছি। প্রবীণদের সামাজিক সুরক্ষা ও উন্নয়নে আমরা সর্বোচ্চ কাজ করছি। যে সকল প্রবীণ সরকারি বয়স্ক ভাতার বাইরে আছেন তাদের জন্য আয়-উৎপাদন, ঋণ, স্বাস্থ্য সেবা ও সামাজিক সুরক্ষার জন্য বাস্তবমুখী কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এক্ষেত্রে সরকারি বরাদ্দ ধীরে ধীরে বাড়ছে। বাংলাদেশের প্রবীণরা সামাজিক সুরক্ষা খাতের অংশ হিসেবে বয়স্ক ভাতার আওতায় এসেছে। এই খাতে ক্রমবর্ধমান হারে বরাদ্দ বাড়ানোসহ উন্নয়ন কর্মকান্ডে প্রবীণদের অন্তর্ভুক্তির লক্ষ্যে সকল অংশীজনদের সাথে রিক একযোগে কাজ করে চলেছে। এই বিষয়ে সচেতনতাসহ অন্যান্য উদ্যোগ বাড়ানোর জন্য রিক বেশ সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে। এজন্য আমাদের অধিদপ্তর দিকে রিককে বিশেষ অভিনন্দন এবং শুভকামনা জানাচ্ছি।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের মাননীয় সচিব জনাব মোঃ সাইদুর রহমান বলেন, বাংলাদেশে প্রবীণদের কল্যাণে যে সকল নীতিমালা হয়েছে, যেমন- জাতীয় প্রবীণ নীতিমালা- ২০১৩, পিতামাতার ভরণপোষণ আইন-২০১৩, জাতীয় প্রবীণ কমিটি-২০১৭। এ সকল নীতিমালার সফল বাস্তবায়নের মাধ্যমে যাতে প্রবীণদের জীবনে বিস্তৃত সুফল বয়ে আনে সেই লক্ষ্যে রিক বিরামহীনভাবে কাজ করে যাচ্ছে। একইসাথে, প্রবীণদের জন্য সমন্বিত সামাজিক-অর্থনৈতিক সুযোগ প্রসারিত করা ও সর্বজনীন পেনশন স্কিমে যেন প্রবীণরা বাধাহীনভাবে যুক্ত হতে পারে তার জন্যও রিক কাজ করছে। এজন্য তারা ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য। আমাদের মন্ত্রণালয়ের থেকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা থাকবে এই বিষয়ে।
আজকের অনুষ্ঠানের সভাপতি, রিসোর্স ইন্টিগ্রেশন সেন্টার (রিক) এর নির্বাহী পরিচালক জনাব আবুল হাসিব খান বলেন- প্রবীণরা সমাজের এক অভিজ্ঞ জনগোষ্ঠী, যারা ইতিমধ্যেই সমাজে তাদের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে, এখন সমাজ ও রাষ্ট্রের বড় দায়িত্ব হলো- দেশের সার্বিক উন্নয়নে তাদের অভিজ্ঞতাকে যথাযথভাবে কাজে লাগানো। রিক মনে করে- প্রবীণ নারী-পুরুষসহ সকল বয়সীদের অংশগ্রহণে কেবলমাত্র একটি সম্মিলিত টেকসই সমাজ গড়ে তোলা সম্ভব, যার ফলশ্রুতিতে সমাজের অসহায় ও পিছিয়ে পড়া প্রবীণ জনগোষ্ঠী আর্থিক ও সামাজিকভাবে স্বচ্ছল থাকবে, সময়মত সুচিকিৎসা পাবে এবং সর্বোপরি তাদের সামাজিক সুরক্ষা ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার সফল বাস্তবায়ন ঘটবে।
০১ অক্টোবর, ২০২৫ জাতিসংঘের ৩৫তম আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবস। প্রতি বছর প্রবীণদের বৈশ্বিক প্রেক্ষিতকে সামনে রেখে সারা বিশ্বে আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবস পালিত হয়ে আসছে। এ বছরের প্রবীণ দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় হল: ‘জাতীয় ও আন্তর্জাতিক কর্মকান্ডে প্রবীণরা মূল চালিকাশক্তি: আমাদের আকাঙ্খা, আমাদের সমৃদ্ধি, আমাদের অধিকার'। বাংলাদেশসহ বিশ্বের সকল প্রবীণ জনগোষ্ঠী আজ এমন এক বৈশ্বিক পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে যেখানে উন্নয়নে তাদের ভূমিকাকে, এমনকি তাদের অধিকারকেও যথাযথভাবে মূল্যায়ন করা হচ্ছে না। এই পরিপ্রেক্ষিতে জাতিসংঘের এবারের প্রবীণ দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয়টি সময়োপযোগী। এতে করে বৈশ্বিকভাবে প্রবীণদের ভূমিকাকে স্বীকৃতিদান ও সহযোগিতা করা সম্ভব হবে। প্রবীণদের নিয়ে জাতিসংঘ ২০০২ সালের মাদ্রিদ ইন্টারন্যাশনাল প্ল্যান অব অ্যাকশন (এমআইপিএএ) সম্মেলন থেকে গৃহীত আন্তর্জাতিক কর্মপরিকল্পনার মাধ্যমে প্রবীণদের সার্বিক উন্নয়ন এবং অগ্রগতি পর্যালোচনা করে আসছে। ২০২৫ সালের এপ্রিল মাসে জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে ৮১টি রাষ্ট্র সম্মিলিতভাবে প্রবীণদের মানবাধিকারকে আন্তর্জাতিক আইনের অংশ হিসেবে প্রস্তাব গ্রহণ করে । বিশ্বের প্রায় ১.২ বিলিয়ন প্রবীণের জীবনে এই প্রস্তাবের প্রভাব পড়বে। বর্ধিষ্ণু প্রবীণ জনসংখ্যার অধিকার বিষয়ে সচেতনতা বাড়বে। অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে প্রবীণদের ভূমিকা স্বীকৃত হবে। শিক্ষা, কর্মসংস্থান ও সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থায় প্রবীণদের অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত হবে।
রিসোর্স ইন্টিগ্রেশন সেন্টার (রিক) বাংলাদেশে বিগত ৩৫ বছর ধরে প্রবীণদের জীবনমান উন্নয়ন ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করে যাচ্ছে। জাতীয়ভাবে প্রবীণ ইস্যুকে সরকারের নীতিমালায়, সুশীল সমাজের কর্মকান্ডে এবং পারিবারিক ও সামাজিক পরিসরে গুরুত্ব দিয়ে তুলে ধরার কাজে রিক সঞ্চালকের ভূমিকা পালন করে আসছে। একই সাথে জাতীয় কর্মকান্ডের সাথে আন্তর্জাতিক কর্মসূচির মেলবন্ধন ঘটিয়ে চলেছে। রিক নিজেদের প্রবীণ বিষয়ক কাজের পাশাপাশি আন্তর্জাতিকভাবে জাতিসংঘ ঘোষিত সকল দিবস যথাযথ মর্যাদার সাথে পালন করে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় দেশের শহর এবং গ্রামীণ প্রবীণদের নিয়ে আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবস উৎসাহ উদ্দীপনার সাথে পালন করে থাকে। রিকের সম্পৃক্ততার কারণে বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান এই প্রবীণ জনগোষ্ঠীর প্রতি আজ সরকারি-বেসরকারি সংস্থার নজরে এসেছে।