a
ছবি: মুক্তসংবাদ প্রতিদিন
সাইফুল আলম, ঢাকা: ৮ দফা দাবির বাস্তবায়ন নিয়ে আজ ১৩ই এপ্রিল সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন কৃষি ডিপ্লোমা ছাত্র অধিকার আন্দোলনের শিক্ষার্থীবৃন্দরা। আজকের শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন কর্মসূচির মাধ্যমে ৪৮ ঘন্টার আলটিমেটাম দেয় এই শিক্ষার্থীরা। যদি দ্রুত সময়ের মধ্যে দাবিগুলো মানা না হয় তাহলে আরো কঠোর কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে বলে প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তারা।
বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশে। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কৃষি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বাংলাদেশের কৃষিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য, কৃষিতে দক্ষ জনশক্তি তৈরী করার জন্য বাংলাদেশে সরকারি ১৮ টি কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট সহ অসংখ্য বেসরকারি কৃষি কলেজ রয়েছে, যেখানে কৃষিতে ৪ বছরের ডিপ্লোমা কোর্সে অধ্যয়ন করা হয়। সরকারি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে মিলিয়ে প্রায় অর্ধলক্ষ শিক্ষার্থী রয়েছে, বর্তমানে এই বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীদের মাঝে চরম ক্ষোভ আর হতাশ বিরাজমান, কারন কৃষি ডিপ্লোমা শিক্ষার্থীগণ চরম বৈষম্যের স্বীকার।
কৃষি ডিপ্লোমা ছাত্র অধিকার আন্দোলনের ব্যানারে সারা বাংলাদেশের প্রতিটি সরকারি বেসরকারি কৃষি ডিপ্লোমা শিক্ষার্থীদের নিয়ে ০৮ দফা দাবি আদায়ে নিয়মতান্ত্রিক, শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে নামে। এই যৌক্তিক ০৮ দফা দাবি নিয়ে ২০০৮ সাল, ২০০৯ সাল, ২০১৬ সালে আন্দোলন সংগ্রাম হয়েছে। কিন্তু বারংবার দাবি যৌক্তিক বলে বিবেচনার আশ্বাস দিয়েও আজ পর্যন্ত কোন দাবি বাস্তবায়ন করা হয় নাই।
তাদের ০৮ দফা দাবির মধ্যে কৃষি ডিপ্লোমা শিক্ষার্থীদের উচ্চ শিক্ষার সুযোগ অর্থাৎ পলিটেকনিক ছাত্র/ছাত্রীদের ডুয়েট এর ন্যায় একটি স্বতন্ত্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা অন্যতম একটি দাবি। পৃথিবীর কোন দেশে উচ্চশিক্ষার জন্য আন্দোলন করতে হয় রাজপথে নামতে এমন এমন কোন দেশ আছে আমাদের জানা নেই, প্রিয় সাংবাদিক ভাইবোনদের কাছে প্রশ্ন রেখে গেলাম।
কৃষি ডিপ্লোমা শিক্ষার্থীগন যদি উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করে দক্ষ জনসম্পদ হিসেবে তৈরি হয় তাহলে সমস্যা কোথায়?
কয়েক যুগ এই যৌক্তিক বিষয় নিয়ে কৃষি ডিপ্লোমা শিক্ষার্থীদগন আন্দোলন সংগ্রাম করার পরেও যখন দাবিগুলোর বিষয়ে কোন এক অজানা কারনে, কোন একদল কুচক্রী মহলের ইন্ধনে বাস্তবায়ন না হওয়ার কারনে আমরা জুলাই বিপ্লবের স্পিরিট টা কাজে লাগিযে বৈষম্যের বিরুদ্ধে আবারো সোচ্চার হই। বর্তমান সরকার যাতে বিভ্রান্ত না হয় সেই জন্য আমরা প্রথমে নিয়মতান্ত্রিক ভাবে কয়েক মাস আগে মাননীয় শিক্ষা উপদেষ্টা, শিক্ষা সচিব, কৃষি উপদেষ্টা, কৃষি সচিব, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এর মহাপরিচালক সহ বিভিন্ন জেলা প্রশাসক বরাবর আমাদের দাবি সম্বলিত স্মারকলিপি জমা দিই। তারা আমাদের এই দাবিগুলো কে অধিকার বলে অবিহিত করেন এবং যৌক্তিক দাবি বলে দ্রুত বাস্তবায়নের আশ্বাস দেন।
কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক ভাবে সত্য যে আবারো কোন এক কুচক্রী মহলের ইন্ধনে যারা আমাদেরকে শিক্ষার একটি গন্ডিতে রেখে মজা পায়, যারা চায়না আমরা তাদের সমকক্ষ পর্যায়ে যাই ঐ সমস্ত মহলের কারণে আমাদের দাবিকে আবারো বাস্তবায়ন না করার কৌশল অবলম্বন করছে।
আমরা সেজন্য আবারো অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস পরিক্ষা বর্জন কর্মসূচি গ্রহণ করি এবং সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ ভাবে আমাদের কর্মসূচি পালন করি। কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হলো তারা আমাদের দাবি আদায়ে পদক্ষেপ না নিয়ে বিভিন্ন ভাবে ছাত্রদের বদলি, ড্রপআউট সহ হুমকি ধমকি প্রদর্শন করছে যা ছাত্রদের সাথে অত্যন্ত সাংঘর্ষিক বিষয়।
আমরা আপনারা জাতির বিবেক সাংবাদিকদের মাধ্যমে তাদেরকে বলে দিতে চাই, জুলাই আন্দোলনকে ভূলে যাবেন না। বৈষম্যের বিরুদ্ধে কিভাবে আন্দোলন সংগ্রাম করে দাবি আদায় করতে হয় তা আমাদের জানা রয়েছে। আমরা এবার দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ঘরে ফিরবো না। প্রয়োজনে আরো কঠোর থেকে কঠোরতর কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে।
আমাদের ০৮ দফা দাবির প্রতিটি দাবিই অত্যন্ত যৌক্তিক। আপনাদের অবগতির জন্য নিম্নে ০৮ দফা দাবি গুলো পেশ করা হলো।
১। ডিপ্লোমা কৃষিবিদদের স্বতন্ত্র পাবলিক কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চ শিক্ষা গ্রহনের সুযোগ দিতে হবে।
২। উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা কে দ্বিতীয় শ্রেনীর কর্মচারী হিসেবে গেজেট করে প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে এবং প্রতিবছর নিয়োগের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে।
৩। কৃষি ডিপ্লোমা শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য শিক্ষক সংকট দূরীকরণ করতে হবে।
৪। কৃষি ডিপ্লোমা শিক্ষাকে ডি.এ.ই এর অধিনস্থ থেকে বের করে সম্পূর্ণভাবে কৃষি মন্ত্রণালয়ের আলাদা প্রতিষ্ঠান করতে হবে।
৫। সকল কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠানে সহকারি বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা পদটি শুধুমাত্র ডিপ্লোমা কৃষিবিদ দের জন্য সংরক্ষিত করতে হবে।
৬। ডিপ্লোমা কৃষিবিদ দের বেসরকারী চাকুরীর ক্ষেত্রে ন্যূনতম ১০ম গ্রেডের পে-স্কেলে বেতন দিতে হবে। ৭। কৃষি ডিপ্লোমা শিক্ষার্থীদের কে মাঠ সংযুক্তি ভাতা প্রদান করতে হবে (ইন্টার্নি)।
৮। উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা-দের চাকুরীতে প্রবেশের পর ৬ মাসের ফাউন্ডেশন ট্রেনিং এর ব্যবস্থা করতে হবে।
উপরোক্ত দাবিগুলো আদায় হলে কৃষিতে দক্ষ জনশক্তি তৈরী হবে। কৃষি ডিপ্লোমা শিক্ষার বৈষম্য গুলো দূর হবে। কৃষি ডিপ্লোমা শিক্ষার বৈষম্য দূর হলে বাংলাদেশের কৃষি অনন্য উচ্চতায় পৌছাবে বলে বিশ্বাস করি।
তাদের এই যৌক্তিক দাবিগুলো লেখনীর মাধ্যমে তুলে ধরা এবং বৈষম্যের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ার জন্য সাংবাদিকদের প্রতি উদাত্ত আহবান জানান কৃষি ডিপ্লোমা ছাত্র অধিকার আন্দোলন।
ছবি(ডানে): নওয়াব বাহাদুর সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম স্থপতি নওয়াব বাহাদুর সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী’র কর্মময় জীবন
জন্ম ও বংশ পরিচয়ঃ
নওয়াব বাহাদুর সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী ১৮৬৩ সালের ২৯ ডিসেম্বর টাঙ্গাইল জেলার ধনবাড়ীর বিখ্যাত জমিদার পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন । তার আড়াইশ’ বছর পূর্বে নওয়াব বাহাদুর সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরীর প্রপিতামহ শাহ সৈয়দ খোদা বখ্শ বর্তমান টাঙ্গাইল জেলার ধনবাড়ীতে বসতি স্থাপন করেন। এ পরিবারের আদি পুরুষ হযরত শাহ আতীকুল্লাহ (রঃ) বাগদাদ থেকে দিল্লীতে আগমন করেন।
নওয়াব আল চৌধুরী শৈশবে গৃহশিক্ষকের নিকট আরবী, ফার্সী ও বাংলায় বিশেষ ব্যুৎপত্তি লাভ করেন। এরপর তাঁর আনুষ্ঠানিক লেখাপড়া শুরু হয় রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুলে এবং পরবর্তীতে কলকাতার বিখ্যাত সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে তিনি কৃতিত্বের সাথে এফ. এ পাস করেন।
নওয়াব আরী চৌধুরীর প্রথম স্ত্রী ছিলেন বগুড়ার বিখ্যাত জমিদার সৈয়দ আব্দুস সোবাহান আলী চৌধুরীর কন্যা আলতাফুন্নেসা চৌধুরানী। তাঁর মৃত্যুর পর তিনি দ্বিতীয় বিয়ে করেছিলেন ইতিহাসখ্যাত ঈসা খাঁর শেষ বংশধর সৈয়দা সাঈদা আখতার খাতুনকে। এই স্ত্রী নিঃসন্তান ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি সৈয়দ আবদুস সোবহান আলী চৌধুরীর অপর কন্যা সাকীনা খাতুন চৌধুরাণীকে বিয়ে করেন। প্রথম স্ত্রী আলতাফুন্নেসা চৌধুরাণীর এক ছেলে আলতাফ আলী চৌধুরী এবং এক মেয়ে উম্মে যাহ্বরা লতীফুন্নেসা চৌধুরাণী। তৃতীয় স্ত্রী সাকীনা খাতুন চৌধুরাণীর এক ছেলে হাসান আলী চৌধুরী ও এক মেয়ে উম্মে ফাতিমা হুমায়রা খাতুন।
নওয়াবজাদা হাসান আলী চৌধুরী ১৯৬২-৬৩ সালে পাকিস্তান আমলে শিল্পমন্ত্রী এবং পরবর্তীতে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭৮ সালে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ছিলেন জাতীয় সংসদের এক প্রবীণ ও বিচক্ষণ সংসদ সদস্য। আলতাফ আলী চৌধুরীর ছেলে মুহাম্মদ আলী চৌধুরী ১৯৫৩-৫৫ সালে খাজা নাজিম উদ্দিনের স্থলে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত হন। অপরপক্ষে, নওয়াবজাদা হাসান আলী চৌধুরী’র একমাত্র কন্যা সৈয়দ আশিকা আকবর ১৯৮১ সালে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি আমৃত্যু নওয়াব আলী খোদা বখ্শ ধনবাড়ী ওয়াকফ এস্টেটের মোতায়াল্লী ছিলেন। ২০২২ সালে ২৫ এপ্রিল ঢাকার নিজ বাস ভবনে ইন্তেকাল করেন।ধনবাড়ীতে ঐতিহাসিক জামে মসজিদের পার্শ্বে তাকে সমাহিত করা হয়। তাঁর স্বামী বর্তমানে নওয়াব আলী-হাসান আলী স্মৃতি সংসদের প্রেসিডেন্ট ও দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ট্রেজারার ও ভাইস-চ্যান্সেলর এবং আইটি বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ড. আকবর উদ্দিন আহমদ। তাঁদের দুই ছেলে- আবরার উদ্দিন আহমদ ও আফিফউদ্দিন আহমদ।
উল্লেখ্য, ছোট ছেলে আফিফউদ্দিন আহমদ নওয়াব আলী খোদা বখ্শ ধনবাড়ী ওয়াকফ এস্টেট ও জঙ্গলবাড়ী এস্টেটের মোতায়াল্লীর দায়িত্ব পালন করে আসছেন এবং তিন মেয়ে- আলমাস রহমান, স্বামী-কায়হান রহমান, আসফিয়া হোসেন, স্বামী-ফায়সাল হোসেন এবং আতকিয়া আজিম, স্বামী- ব্যারিস্টার হাসান আজিম।প্রত্যেকে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করে স্ব-স্ব পেশায় নিয়োজিত আছেন।
রাজনৈতিক দর্শনঃ
১৯০৫ সালের বঙ্গ-ভঙ্গ আন্দোলন থেকে নওয়াব আলী চৌধুরী রাজনীতিতে সক্রিয় হন। তিনি একাধারে একজন খাঁটি মুসলমান, বাঙ্গালি এবং সর্বভারতীয় ছিলেন। তাঁর সমসাময়িক সমমনা ও বিরোধী রাজনীতিকদের মধ্যে একমাত্র তিনিই ছিলেন স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের অধিকারী।
১৯০৫ সালের ১৬ অক্টোবর হিন্দু জাতীয়তাবাদের প্রবক্তাদের প্রবল বাঁধার মুখেও বঙ্গ-ভঙ্গ কার্যকর হয়ে পূ্ববঙ্গ ও আসাম নামক একটি মুসলিম প্রধান প্রদেশ জন্ম লাভ করলে নওয়াব আলী চৌধুরী একটা সর্বভারতীয় মুসলিম রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান গঠন করার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেন। তিনি মুসলমানদের অনগ্রসতার জন্য অশিক্ষাকে মূলতঃ দায়ী বলে মনে করতেন।
১৯০৫ সালে যেদিন বঙ্গভঙ্গ কার্যকর হয়, সেদিনই ঢাকার নর্থব্রুক হলে তাঁর ও ঢাকার নবাব স্যার সলিমুল্লাহর উদ্যোগে ‘প্রাদেশিক রাজনৈতিক সংগঠন গঠিত হয়। এ সংগঠনের মূল উদ্দেশ্য ছিল মুসলিম সমাজকে শিক্ষামন্ত্রে উজ্জীবিত করে নিখিল ভারত মুসলিম লীগ গঠনের ভিত রচনা করা। এরপূর্বে ১৮৮৬ সালে মুসলমানদের শিক্ষাদীক্ষায় উজ্জীবিত করার লক্ষে আলীগড়ে স্যার সৈয়দ আহম ‘অল ইন্ডিয়া এডুকেশনাল কনফারেন্স’ গঠন করেছিলেন। ১৮৯৯ সালের ডিসেম্বর মাসে স্যার সৈয়দ আমির আলীর সভাপতিত্বে কলকাতায় এর প্রথম অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। আবার তাঁরই সভাপতিত্বে ১৯০৩ সালে ১৫ ফেব্রুয়ারি ‘ক্যালকাটা মোহামেডান ইউনিয়ন’-এর বার্ষিক অধিবেশনে এর বঙ্গীয় শাখা সমিতির অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। ১৯০৬ সালের ১৪ এবং ১৫ এপ্রিল নওয়াব আলী চৌধুরী, নবাব সলিমুল্লাহ প্রমুখের সহযোগিতায় ঢাকায় এর শাখা প্রতিষ্ঠিত হয়।
নবাব সলিমুল্লাহ ও নওয়াব আলী চৌধুরী যথাক্রমে এর সভাপতি ও সম্পাদক নির্বাচিত হন। কংগ্রেসের বিরোধীতার সত্ত্বেও সমিতি কর্তৃক উত্থাপিত শিক্ষা বিষয়ক বেশ কিছু প্রস্তাব সরকার কর্তৃক গৃহীত ও বাস্তবায়িত হয়। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- অনেকগুলো মুসলিম হোস্টেল স্থাপন, ছাত্রবৃত্তি বৃদ্ধি, পাঠ্যসূচী সংশোধন, নুতন মিডল মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা এবং মাদ্রাসায় ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি ইংরেজি, ইতিহাস, ভূগোল শিক্ষার ব্যবস্থা। ১৯১১ সালের ১২ ডিসেম্বর বঙ্গভঙ্গ রহিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত নতুন প্রদেশে মোট ৪টি অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। ১৯০৪ সালে প্রথম অধিবেশন রাজশাহীতে, ১৯০৮ সালে দ্বিতীয় অধিবেশন ময়মনসিংহে, ১৯১০ সালে অধিবেশন বগুড়ায় এবং ১৯১১ সালে অধিবেশন রংপুরে অনুষ্ঠিত হয়। ভারত বিভক্ত হওয়ার প্রায় ৩০ বছর এবং বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার প্রায় ৫০ বছর আগে ভারতীয় আইন সভায় তিনি সিলেট জেলাসহ পূর্ববঙ্গকে একটি স্বতন্ত্র প্রশাসনিক ইউনিটে পরিণত করার প্রস্তাব দেন।
তিনি বঙ্গভঙ্গ সম্পর্কে বলেন, ‘প্রদেশ করার জন্য যুদ্ধ করিয়াছি এবং যদিও সে সেষ্টা সফল হয় নাই, তথাপিও পূর্ববঙ্গে যাহারা আমাদের প্রতিপক্ষ ছিলেন, তাহারা পর্যন্ত স্বীকার করিবেন যে, আমরা যাহার জন্য চেষ্টা করিয়াছিলাম, তাহাই ঠিক এবং বঙ্গভঙ্গ রদ হওয়াতে ঐ প্রদেশের হিন্দু ও মুসলমান উভয় সম্প্রদায়েরই ক্ষতি হইয়াছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাঃ
১৯১১ সালের ১৯ আগষ্ট ঢাকার কার্জন হলে ল্যান্সলট হেয়ারের বিদায় এবং চার্লস বেইলীর শুভাগমন উপলক্ষে সংবর্ধনা সভার পৃথক দুটি মানপত্রে নওয়াব সলিমুল্লাহ ও নওয়াব বাহাদুর সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি জানান। ১৯১২ সালে ৩১ জানুয়ারি লর্ড হার্ডিঞ্জ ঢাকায় অবস্থানকালে নবাব সলিমুল্লাহ ও নওয়াব আলী চৌধুরীসহ ১৯ সদস্যবিশিষ্ট একটি প্রতিনিধি দল তার সাথে সাক্ষাৎ করে বঙ্গ-ভঙ্গ রদের ফলে মুসলমানদের যে ক্ষতি হচ্ছে সেসব তুলে ধরেন। এ সময় তাঁরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি জানালে লর্ড হার্ডিঞ্জ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আশ্বাস দিয়ে চলে যান। এলক্ষ্যে ২৭ মে, ১৩ সদস্যবিশিষ্ট নাথান কমিটি গঠিত হলে নওয়াব আলী চৌধুরী এই কমিটিতে অন্যতম সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। এই কমিটির অধীনে ২৫টি সাব কমিটি গঠিত হলে তিনি ৬টি বিভাগের সদস্য নিযুক্ত হয়ে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন।
১৯১৪ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ আরম্ভ হলে আর্থিক সংকটের কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কাজ চাপা পড়ে যায়। সে সময নওয়াব আলী চৌধুরী ছিলেন ইমপিরিয়াল কাউন্সিলের সদস্য। তিনি বিষয়টি ১৯১৭ সালে ৭ মার্চ ইম্পিরিয়াল কাউন্সিলে পূণরায় উত্থাপন করেন এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে ১৯২০ সালে ১৮ মার্চ ভারতীয় আইনসভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিল অ্যাক্টে পরিণত হয়। ২৩ মার্চ তা গভর্ণর জেনারেলের অনুমোদন লাভ করে। লর্ড হার্ডিঞ্জ কর্তৃক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতির ৯ বছর পর ১৯২১ সালের জুলাই মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস যথারীতি শুরু হয়।
পরবর্তী বছর ১৯২২ সালে তিনি ছাত্র-ছাত্রীদের বৃত্তিবাবদ ১৬ হাজার টাকার একটি তহবিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রদান করেন। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাকালে অর্থাভাব দেখা দিলে সে যুগের এই দানশীল একাই নিজ জমিদারীর একাংশ বন্ধক রেখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিলে এককালীন ৩৫ হাজার টাকা প্রদান করেন।শিক্ষার ব্যাপারে তিনি এতোটাই আন্তরিক ছিলেন যে, তার সেই অভিজ্ঞতা ও মেধা কাজে লাগানোর জন্য যখন তিনি অবিভক্ত বাংলার প্রথম মুসলমান মন্ত্রী ছিলেন, তখন তাকে শিক্ষামন্ত্রীর দায়িত্বও প্রদান করা হয়।
১৯২৯ সালের ১৭ এপ্রিল ইন্তেকালের পূর্ব পর্যন্ত তিনি শিক্ষামন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন।এদেশের মানুষের শিক্ষা বিস্তারে নারীদের ভূমিকা কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা তাঁর কিছু উক্তির মাধ্যমে প্রকাশ পায়। তাঁর উক্তি ‘আমাদের বালিকাদের প্রশিক্ষণের পরই আমাদের বালকদের শিক্ষা অনেকাংশে নির্ভর করে। শিক্ষার প্রাথমিক স্কুল হলো বাড়ি। মায়েরা শিক্ষিত না হলে শিশুদের চরিত্র গঠনের আশা করা যায়না। এ বিষয়টি খুব গুরুত্বপূর্ণ।’ (১৯১৪ সালে ১১ এপ্রিল ঢাকায় বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি মুসলমান শিক্ষা সমিতির সভায়।)
এছাড়াও দেশে ৩৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপনে তিনি জমি ও আর্থিক সহায়তা প্রদান করেন। ১৯১০ সালে তিনি তাঁর নিজস্ব এলাকা ধনবাড়ীতেও ধনবাড়ী নওয়াব ইনষ্টিটিউট নামের একটি হাইস্কুল স্থাপন করেন। এছাড়া সোনাতলা, কোদালিয়া, গফরগাঁও, পিংনা, জঙ্গলবাড়ি, হযরতনগরসহ বিভিন্ন স্থানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপনে সহায়তা প্রদান করেন।
শিক্ষার প্রতি অতি অনুরাগী এই দানবীরের নামে দেরীতে হলেও তাঁর কাজের স্বীকৃতিস্বপরূপ ২০০৩ সালে ৯ জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় ভাইস-চ্যান্সেলর অধ্যাপক এস এম এ ফায়েজের সভাপতিত্বে সিন্ডিকেটের এক সভায় সর্বসম্মতিক্রমে নওয়াব আলী চৌধুরীর নামে সিনেট ভবন নামকরণ করা হয়। প্রাচ্যের অক্সফোর্ড বলে খ্যাত যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় তাঁর সীমাহীন অবদান, সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের পরতে পরতে তাঁর নাম অম্লান থাকবে, এটাই পরবর্তী প্রজন্মের নিকট প্রত্যাশা।
বাংলা ভাষা ও নওয়াব আলী চৌধুরীঃ
নওয়াব আলী চৌধুরী ১৯১১ সালে রংপুর অধিবেশনে মাতৃভাষা বাংলার স্বপক্ষে প্রথম সোচ্চার হয়ে বলেছিলেন, ‘বাংলা আমাদের মাতৃভাষা, মাতৃস্তনের ন্যায়, জন্মভূমির শান্তি নিকেতনের ন্যায় বাংলা ভাষা। বাংলা ভাষা আমাদের নিকট প্রিয়, কিন্তু হতভাগ্য আমরা, প্রিয় মাতৃভাষার উন্নতিকল্পে আমরা উদাসীন। অধ:পতন আমাদের হবে না-তো কার হবে?’
তৎকালীন প্রতিকূল পরিবেশের মধ্যে একজন জমিদার হয়ে বাংলা রাষ্ট্রভাষা প্রশ্নে তিনি আপোষহীন ভূমিকার স্বাক্ষর রাখেন। উর্দূ ও ইংরেজী ভাষার সমর্থক নওয়াব আব্দুল লতিফ, স্যার সৈয়দ আমির আলী ও নবাব সলিমুল্লাহর রাজনৈতিক অনুসারী হয়েও তিনি বাংলা ভাষার পক্ষে কথা বলেন।
১৯২১ সালে বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার জন্য লিখিত প্রস্তাব পেশ করেন নওয়াব বাহাদুর সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী। তখন ভারতের রাষ্ট্রভাষা কি হবে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠলে বাংলার অভিজাত মুসলমানরা উর্দুর পক্ষে এবং উচ্চবর্ণের হিন্দুরা হিন্দীর পক্ষে অভিমত ব্যক্ত করেন। ঠিক সে সময়ে নওয়াব আলী চৌধুরী লিখিত প্রস্তাবের মাধ্যমে বৃটিশ সরকারকে বলেছিলেন, ভারতের রাষ্ট্রভাষা যাই হোক, বাংলার রাষ্ট্রভাষা করতে হবে বাংলা-কে।
সাহিত্য সংস্কৃতিতে পৃষ্ঠপোষকতাঃ
নওয়াব আলী চৌধুরী সাহিত্যসেবীদের আর্থিক এবং অন্যান্য বিভিন্নভাবে সাহায্য সহযোগিতা করতেন। মহাকবি কায়কোবাদ, ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ, পন্ডিত রেয়াজউদ্দিন আহমদ আল মাশহাদী, কবি মোজাম্মেল হক প্রমুখ তাদের সাহিত্য প্রকাশনায় নওয়াব আলী চৌধুরীর দান ছিল অপরিসীম। ফলে উল্লেখিত লেখকগণ তাদের বিভিন্ন প্রকাশনায় নওয়াব আলী চৌধুরীর নামে উৎসর্গ করে তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।
১৮৯৫ সাল থেকে ১৯০৪ সাল পর্যন্ত নওয়াব আলী চৌধুরীর কর্মতৎপরতা ছিল প্রধানত সাহিত্য ও সাংস্কৃতিককেন্দ্রিক। ১৮৯৫ সালে ‘মিহির’ ও ‘সুধাকর’ পত্রিকা একত্রিত হয়ে সাপ্তাহিক ‘মিহির-সুধাকর’ নামে আত্বপ্রকাশ করে। তিনি এ পত্রিকার মালিক ছিলেন। এজন্য একটি প্রেস ক্রয় করে কলকাতাস্থ বাসভবনে স্থাপন করেন। ভাষা সৈনিক, সমাজসেবী, রাজনীতিবিদ, শিক্ষানুরাগী অনন্য জমিদার নওয়াব আলী চৌধুরী একজন সাহিত্যিকও ছিলেন। তাঁর রচিত গ্রন্থসমূহ-ঈদুল আজহা (১৮৯০), মৌলুদ শরীফ (১৯০৩), ভারনাকুলার এডুকেশন ইন বেঙ্গল (১৯০০) এবং প্রাইমারী এডুকেশন ইন রুরাল এরিয়াস (১৯০৬) প্রকাশিত হলে সকল মহলে প্রশংসিত হয়।
বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বসমূহঃ
নওয়াব বাহাদুল সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরীর সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ধর্মীয়, রাজনৈতিক তথা বিভিন্ন ক্ষেত্রে পরিধি এতটাই বিস্তৃত ছিল যে, অল্প পরিসরে তা উল্লেখ করা সম্ভবপর নয়।
নিম্নে উল্লেখযোগ্য বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বসমূহঃ
১। ময়মনসিংহ মিউনিসিপ্যালিটির কমিশনার।
২। ময়মনসিংহ ডিস্টিক্ট বোর্ডের মেম্বার।
৩। ১৯১৪ সালে আইন পরিষদের সদস্য।
৪। ১৯০৬-১১ সাল পর্যন্ত পূর্ববঙ্গ ও আসাম ব্যবস্থাপক পরিষদের সদস্য।
৫। ১৯২১-২৩ সালে ইন্ডিয়ান লেজিসলেটিভ কাউন্সিলের সদস্য।
৬। ১৯০৬ সালে ঢাকার শাহবাগে সর্বভারতীয় মুসলিম লীগ গঠনের সময় সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সেক্রেটারী জেনারেল।
৭। মুসলিম লীগের সর্বভারতীয় কমিটির সহ-সভাপতি।
৮। মুসলিম লীগের গঠনতন্ত্র প্রণয়নের জন্য ৩ সদস্য কমিটির অন্যতম সদস্য।
৯। ১৯০৭ সালে করাচিতে অনুষ্ঠিত মুসলিম লীগের প্রথম অধিবেশনে পূর্ব বাংলা ও আসামের পক্ষে প্রতিনিধিত্বকারী।
১০। ১৯১২ সালের ৩১ জানুয়ারি ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার বাস্তবায়নের দাবী নিয়ে দিল্লীতে সম্রাট পঞ্চম জর্জের সাথে সাক্ষাৎ।
১১। ১৯১২ সালের ৩ ও ৪ মার্চ মুসলিম লীগের অধিবেশনে ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব সাংগঠনিকভাবে পাসকরণ।
১২। ১৯১৬ সালে লাক্ষ্ণৌ অধিবেশনে ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় বাস্তবায়নের দাবী পুনঃউত্থাপন।
১৩। আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য।
১৪। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিটির সদস্যসহ প্রেসিডেন্সী কলেজের গভর্নিং বোর্ড, মুসলিম শিক্ষা সম্বন্ধীয় উপদেষ্ঠা কমিটি, পূর্ববঙ্গ ও আসামের মুসলমানদের বিবাহ রেজিষ্ট্রার ও কাজী নিয়োগ ও পরিদর্শনের স্থায়ী কমিটি, হাই মাদ্রাসা সংস্কার কমিটি, বঙ্গদেশ গ্রাম্য প্রাথমিক শিক্ষা কমিটি, পূর্ববঙ্গ ও আসাম সেন্ট্রাল টেক্সট বুক কমিটির সদস্য, সেন্ট্রাল ন্যাশনাল মোহামেহান এসোসিয়েশনের সভাপতিসহ ইংল্যান্ড প্রবাসী ভারতীয় ছাত্রদের সাহায্য সহায়তার জন্য যে শিক্ষাসভা ও পরামর্শসভা ছিল তার প্রাদেশিক শাখা কমিটির সদস্য, পূর্ববঙ্গ ও আসামের শিল্প ও চিকিৎসা কনফারেন্সের সদস্য, ইম্পিরিয়াল কনফারেন্সের সদস্য, ধর্ম বিষয়ে দান করার জন্য গঠিত ইম্পিরিয়াল কনফারেন্সের সদস্য এবং পূর্ববঙ্গ আসাম শিক্ষা বোর্ডের পাঠ্য তালিকা প্রণয়ন কমিটির একমাত্র মুসলমান সদস্য ছিলেন তিনি।
বিভিন্ন খেতাবসমূহঃ
১৮৯৬ সালে খান বাহাদুর, ১৯১১ সালে নওয়াব, ১৯১৮ সালে কম্পানিয়ন অব দি মোস্ট এমিনেন্ট অর্ডার অব দি ইন্ডিয়ান এম্পেয়ার (সি.আই.ই) এবং ১৯২৪ সালে নওয়াব বাহাদুর পদবী লাভ করেন।
ইন্তেকালঃ
এই মহান পুরুষ ১৭ এপ্রিল ১৯২৯, বাংলা ১৩৩৬ সালের ১লা বৈশাখে দার্জিলিং-এর ইডেন ক্যাসেলে ইন্তেকাল করেন। দার্জিলিং থেকে কলকাতা হয়ে তাঁর লাশ ধনবাড়ীতে আনা হয় এবং ৪ বৈশাখে তাঁর হাতে গড়া বিখ্যাত ধনবাড়ী নওয়াব জামে মসজিদের পার্শ্বে সমাহিত করা হয়। তিনি সারাজীবন শিক্ষা-দীক্ষায় পশ্চাৎপদ বাঙ্গালী মুসলমানদের সুশিক্ষিত করে গড়ে তোলার অনবদ্য প্রয়াস চালিয়ে গেছেন। তাঁর জীবনের শেষদিন পর্যন্ত এ জাতির সেবায় নিজেকে আত্বনিয়োগ করে গেছেন। সবশেষে নওয়াব পরিবারের আধ্যাত্বিক চেতনার বহিঃপ্রকাশের একটি বিরল দৃষ্টান্ত হল- এই মহা মণীষীর মৃত্যুর ৯৫ বছর পরও তাঁর অছিয়ত অনুযায়ী তাঁদের কবরের পাশে দিন-রাত ২৪ ঘন্টা কোরআন তেলাওয়াতের ব্যবস্থা এখনও জারি আছে।
লেখক:
মোহা: খোরশেদ আলম
সম্পাদক, মুক্তসংবাদ প্রতিদিন ও
সেক্রেটারী, নওয়াব আলী-হাসান আলী স্মৃতি সংসদ, ধনবাড়ী, টা্ঙ্গাইল।
ছবি সংগৃহীত
রাজধানীর বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজ ভবনে ভয়াবহ আগুনে ৪৬ জনের মৃত্যুর ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত চেয়ে রিট দায়ের করা হয়েছে। রিটে প্রকৃত দোষীদের খুঁজে বের করার নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে রিটে সরকারের গঠিত তদন্ত কমিটির রিপোর্ট আদালতে দাখিল করার নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।
রোববার (৩ মার্চ) সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইসরাত জাহান সান্ত্বনা জনস্বার্থে এ রিটটি দায়ের করেন। বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি কাজী জিনাত হকের হাইকোর্ট বেঞ্চে রিট আবেদনটির অনুমতি নেওয়া হয়েছে।
এদিকে রাজধানীর বেইলি রোডসহ সব আবাসিক স্থাপনায় রেস্টুরেন্ট বন্ধের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়েছে। একইসঙ্গে রিটে বেইলি রোডে অগ্নিকাণ্ডে প্রকৃত দায়ীদের গ্রেপ্তার ও আহত, নিহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। এছাড়া বেইলি রোডে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা তদন্তের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।
এদিন হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় অ্যাডভোকেট ইউনুছ আলী আকন্দ জনস্বার্থে এ রিট দায়ের করেন।
গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব, মন্ত্রিপরিষদ সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, পুলিশের আইজি, রাজউকের চেয়ারম্যান, ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়রসহ সংশ্লিষ্টদের রিটে বিবাদী করা হয়েছে। বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি কাজী জিনাত হকের হাইকোর্ট বেঞ্চে রিট আবেদনটি শুনানির জন্য উপস্থাপন করা হবে বলে জানিয়েছেন আইনজীবী।
উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর বেইল রোডে অবস্থিত গ্রিন কোজি কটেজ ভবনে লাগা আগুনে এখন পর্যন্ত ৪৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন আরও অন্তত ২০ জন। যাদের সবার অবস্থাই আশঙ্কাজনক।
জানা গেছে, ভবনের প্রথম তলায় ‘চায়ের চুমুক’ নামে একটি রেস্টুরেন্ট ছিল। সেখান থেকেই আগুনের সূত্রপাত। পরবর্রীতে সেটা পুরো ভবনে ছড়িয়ে পড়ে। ১ মাস আগে ভবনটির নিচ তলায় চায়ের চুমুক নামে রেস্টুরেন্টটি যাত্রা শুরু করে। সূত্র: ইত্তেফাক