a
ফাইল ছবি
পশ্চিমা বিশ্ব গত ২০ বছরের যুদ্ধে যে ৫টি শিক্ষা পেয়েছে তা বিশদভাবে নীচে উল্লেখ করা হলো। এই সন্ত্রাসবাদ বিরোধী তথাকথিত লড়াইয়ে কোন ধরনের কৌশলে আসলে কাজ হয়েছে- আর কোনটিতে হয়নি, তা বিশ্লেষণের সময়ে এসেছে।
আফগানিস্তানে আল কায়েদাকে আশ্রয় দিয়েছিল যে তালেবান, তারা যখন আবার দেশটির ক্ষমতায় ফিরে এসেছে, তাতে কি এটা বলা যাবে যে, ১১ সেপ্টেম্বরের সকালে আমাদের জ্ঞান আসলে যতটা ছিল, এখন আমরা তার চেয়ে বেশি জানি?
নাইন ইলেভেনের হামলা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখন্ডে এ যাবতকালের সবচেয়ে ভয়ংকর সন্ত্রাসী হামলা। এ ঘটনার পর যখন দেশটি বিরাট এক ধাক্কা খেয়েছে, তখন অনেকেই বাকি বিশ্বকে দেখা শুরু করলেন একেবারে মোটা দাগের বিচারে- পৃথিবী দুই ভাগে বিভক্ত, ভালো লোক আর খারাপ লোক।
নাইন ইলেভেনের হামলার ঠিক নয়দিন পরই প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ ঘোষণা করলেন, “প্রত্যেক দেশ, প্রত্যেক অঞ্চলকে এখন একটা সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আপনারা হয় আমাদের সঙ্গে আছেন, অথবা আপনারা সন্ত্রাসীদের সঙ্গে আছেন।”
তথাকথিত ‘সন্ত্রাস বিরোধী যুদ্ধ’ ঘোষণা করা হলো। এই ঘোষণার পর প্রথমে আফগানিস্তান এবং তারপর ইরাকে আক্রমণ চালানো হলো। মধ্যপ্রাচ্যে ইসলামিক স্টেট গোষ্ঠীর উত্থান ঘটলো। ইরান সমর্থিত মিলিশিয়াদের বিস্তার ঘটলো। হাজার হাজার সৈনিক এবং তার চেয়ে আরও বহু গুণ বেসামরিক মানুষ নিহত হলো।
সন্ত্রাসবাদ নির্মূল হয়নি- বরং ইউরোপের প্রায় প্রত্যেকটি বড় দেশে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সন্ত্রাসবাদী হামলা হয়েছে।
তবে কিছু সাফল্যও আছে। এখনো পর্যন্ত নাইন ইলেভেনের সঙ্গে তুলনীয় ভয়ংকর কোনও হামলা হয়নি। আফগানিস্তানে আল-কায়েদার ঘাঁটি ধ্বংস হয়েছে। তাদের নেতাকে পাকিস্তানে খুঁজে বের করে হত্যা করা হয়েছে। আইসিস সিরিয়া এবং ইরাকের একটা বিরাট অঞ্চলে স্বঘোষিত খেলাফতের মাধ্যমে যে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল, তা ভেঙে দেওয়া হয়েছে।
নীচে যে তালিকা দেওয়া হয়েছে তা নিঃসন্দেহে তর্ক সাপেক্ষ এবং মোটেই পূর্ণাঙ্গ নয়। এখানে মধ্যপ্রাচ্য, আফগানিস্তান, ওয়াশিংটন এবং গুয়ানতানামো বে-তে গিয়ে সন্ত্রাস বিরোধী যুদ্ধের খবরাখবর সংগ্রহ করতে গিয়ে নিজের পর্যবেক্ষণে যা উঠে এসেছে, তার ভিত্তিতে এসব তৈরি করা হয়েছে।
১. গুরুত্বপূর্ণ গোয়েন্দা তথ্য শেয়ার করা
নাইন ইলেভেনের হামলার অনেক ক্লু ছিল, কিন্তু কেউই আসলে সময়মতো এসব বিন্দুকে সংযুক্ত করে একটা পূর্ণাঙ্গ ছবি পাওয়ার চেষ্টা করেনি। নাইন ইলেভেনের হামলার আগে যুক্তরাষ্ট্রের দুটি প্রধান গুপ্তচর সংস্থা, এফবিআই এবং সিআইএ, উভয়েই জানতো যেকোনও একটা হামলার ষড়যন্ত্রের আভাস পাওয়া যাচ্ছে।
কিন্তু এই দুটি সংস্থা, যার একটি স্বদেশে এবং আরেকটি বিদেশে গুপ্তচরবৃত্তি চালায়, পরস্পরের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় লিপ্ত ছিল। যার ফলে তারা যা জানতো, তা নিজেদের মধ্যেই রেখে দিয়েছিল, অন্য সংস্থাকে জানতে দেয়নি। নাইন ইলেভেনের হামলার পর যুক্তরাষ্ট্রে যে কমিশন গঠিত হয়, তারা এসব ভুল পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিশ্লেষণ করেছে এবং এরপর গোয়েন্দা তথ্য শেয়ার করার ক্ষেত্রে অনেক উন্নতি ঘটেছে।
২০০৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ায় ন্যাশনাল কাউন্টার টেররিজম সেন্টারে (এনসিটিসি) দেখানো হয়েছিল ১৭টি ভিন্ন ভিন্ন মার্কিন সংস্থার সংগ্রহ করা গোয়েন্দা তথ্য কিভাবে প্রতিদিনই এক জায়গায় রাখা হচ্ছে।
ব্রিটেনও একইভাবে নিজস্ব ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে: জয়েন্ট টেররিজম অ্যানালিসিস সেন্টার (জেটিএসি)। লন্ডনের এমব্যাংকমেন্টের এক অফিস ভবনে এমআই-ফাইভ, এমআই-সিক্স, প্রতিরক্ষা, পরিবহন, স্বাস্থ্য এবং অন্যান্য ক্ষেত্রের কয়েক ডজন বিশ্লেষক নিয়মিত এক সঙ্গে বসেন। তারা যুক্তরাজ্যের মানুষের জন্য স্বদেশে এবং বিদেশে যেসব হুমকি আছে, সেগুলো প্রতিনিয়ত পর্যালোচনা করেন।
কিন্তু এই ব্যবস্থা একেবারে নিখুঁত নয়। জয়েন্ট টেররিজম অ্যানালিসিস সেন্টার (জেটিএসি) প্রতিষ্ঠিত হওয়ার দুই বছর পরই আল-কায়েদা ২০০৫ সালের ৭ জুলাই ব্রিটিশ নাগরিকদের ব্যবহার করে লন্ডনে বোমা হামলা চালালো। এই হামলায় নিহত হয়েছিল ৫০ জনের বেশি।
পরের বছর মধ্য আকাশে কয়েকটি এয়ারলাইনার উড়িয়ে দেওয়ার আরেকটি বড় ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল, কিন্তু পাকিস্তানের সহায়তায় সেটি বানচাল করে দেওয়া সম্ভব হয়। কিন্তু এরপরও ২০১৭ সালে ব্রিটেনে বেশ কয়েকটি সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে, যার মধ্যে ম্যানচেস্টারের হামলা ছিল অন্যতম।
কাজেই ভালো গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ এবং শেয়ার করার পরও এরকম হামলা বন্ধ করা যায় না, যদি কোন বিষয়টি অগ্রাধিকার পাবে সে বিষয়ে ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
২০১৫ সালে প্যারিসে যে হামলা হয়েছিল, এটি তার একটি উদাহরণ। ওই হামলায় নিহত হয়েছিল ১৩০ জন। এ ঘটনার বিচার এখন চলছে।
ইউরোপীয় বিভিন্ন দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো একে অন্যের সঙ্গে গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান না করার কারণেই মূলত এই হামলা হতে পেরেছিল।
২. কোন মিশনের লক্ষ্য স্থির করা এবং এ থেকে বিচ্যূত না হওয়া:
আফগানিস্তানে কেন তালেবানের শাসন ফিরে এলো, তার জন্য যেসব কারণের কথা উল্লেখ করা হয়, তার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে এটি: ২০০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ইরাকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ। এই সিদ্ধান্তটি ছিল বিপর্যয় সৃষ্টিকারী, এর ফলে আফগানিস্তানে যা ঘটছিল, তা থেকে সবার দৃষ্টি অন্যদিকে সরে গিয়েছিল।
যুক্তরাষ্ট্র এবং ব্রিটেনের যেসব বিশেষ বাহিনী সাফল্যের সঙ্গে আল-কায়েদার সদস্যদের খুঁজে বের করে দমন করেছিল এবং আফগানিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে মিলে তালেবান বিদ্রোহীদের দৌড়ের ওপর রেখেছিল, তাদের সেখান থেকে প্রত্যাহার করে পাঠিয়ে দেওয়া হলো ইরাকে।
এটি তালেবান এবং অন্যান্যদের নতুন করে সংগঠিত হওয়ার এবং আরও বেশি শক্তি সঞ্চয় করে ফিরে আসার সুযোগ করে দিল। ২০০৩ সালের নভেম্বরে আফগানিস্তানের পাকতিয়া প্রদেশে যুক্তরাষ্ট্রের পদাতিক বাহিনীর একটি ঘাঁটি পরিদর্শনে দেখা যায়, আমেরিকানরাই তখন তাদের মিশনকে ‘অপারেশন ফরগটেন’ বলতে শুরু করে দিয়েছে।
এটা ভুলে যাওয়া খুব সহজ যে, আফগানিস্তানে মূল মিশনটা কিন্তু ছিল বেশ সোজাসাপ্টা এবং সেটা বেশ ভালোভাবেই সম্পন্ন হয়েছিল। তালেবান শাসকরা যখন নাইন-ইলেভেনের হামলার জন্য দায়ীদের হস্তান্তর করতে অস্বীকৃতি জানালো, যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানের নর্দার্ন এলায়েন্সের (তালেবান শাসন বিরোধী জোট) হাত মেলালো এবং সাফল্যের সঙ্গেই আফগানিস্তান থেকে তালেবান এবং আল কায়েদাকে বিতাড়িত করলো।
কিন্তু এর পরের বছরগুলোতে এই মিশন তার লক্ষ্য হারালো, এটির মনোযোগ বিক্ষিপ্ত হয়ে গেল নানা দিকে।
সে সময় বেশিরভাগ আফগানের জীবনযাত্রার অনেক উন্নতি হলেও ‘জাতি গঠনের’ নামে শত শত কোটি ডলার দুর্নীতি এবং অপচয়ের মাধ্যমে নষ্ট করা হলো।
৩. সতর্কতার সঙ্গে মিত্র বেছে নেয়া:
২০০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র যখন ইরাকের বিরুদ্ধে আক্রমণ চালায়, তখন ব্রিটেন তার ঘনিষ্ঠতম মিত্রের পেছন পেছন এই যুদ্ধে অংশ নেয়। এরপর ইরাকে দখলদারিত্বের সময় যুক্তরাষ্ট্র যত গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ব্রিটেনকে তা মানতে হয়েছে একজন ‘জুনিয়র পার্টনার’ হিসেবে।
ইরাকি সেনাবাহিনী ভেঙে না দেওয়ার কিংবা বাথ পার্টির সব সদস্যকে সরকারি পদে নিষিদ্ধ না করার যে জরুরি আবেদন জানানো হয়েছিল, তা উপেক্ষা করা হয়। এর ফল দাঁড়িয়েছিল মারাত্মক: কর্মহীন হয়ে যাওয়া ইরাকি সামরিক বাহিনী এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সদস্যরা এবং চরমপন্থী জিহাদীরা একজোট হয়ে গেল। এটাই পরে আইসিসে পরিণত হলো।
নাইন ইলেভেনের পর সবার মধ্যে যে আতংক তৈরি হয়েছিল- তার পরিণামে যুক্তরাষ্ট্র এবং ব্রিটিশ ইন্টেলিজেন্স সংস্থাগুলো এমন সব শাসকগোষ্ঠীর সঙ্গে একযোগে কাজ করা শুরু করলো, যাদের মানবাধিকারের রেকর্ড ভয়ংকর। এই ভুলের খেসারত পরে দিতে হয়েছে।
যেমন, ২০১১ সালে লিবিয়ায় কর্নেল গাদ্দাফিকে যখন উৎখাত করা হলো, তারপর সাংবাদিকরা এমন এক চিঠি খুঁজে পেলেন যেটি এমআই-সিক্সের এক সিনিয়র অফিসার লিখেছিলেন লিবিয়ার এক গোয়েন্দা কর্মকর্তার কাছে। এতে একজন ইসলামপন্থী ভিন্নমতাবলম্বীকে লিবিয়ায় ফেরত পাঠানো নিয়ে কথা হচ্ছিল, যাতে তাকে গ্রেফতার করে নির্যাতন চালানো যায়।
এখন সহিংস জিহাদি কর্মকাণ্ড সবচেয়ে বাড়বাড়ন্ত আফ্রিকার সেই সব দেশে, যেখানে শাসনব্যবস্থা খুবই খারাপ, বা মোটেই নেই। সেখানে এদের দমনে কাদের সহযোগিতা নেওয়া হবে, সেটা পশ্চিমা দেশগুলোর জন্য এক বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
৪. মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা, নতুবা নৈতিক অবস্থান হারানো:
মধ্যপ্রাচ্যের মানুষ একটা কথা বারবার বলেছেন: “আমরা হয়তো মার্কিন পররাষ্ট্রনীতি পছন্দ করি না, কিন্তু তাদের দেশে আইনের শাসনকে আমরা সবসময় শ্রদ্ধা করি। তবে গুয়ানতানামো বে’র আগে পর্যন্ত।”
যুদ্ধক্ষেত্র থেকে সন্দেহভাজনদের, বা কোন কোন ক্ষেত্রে নিরপরাধ লোকজনকে ধরে আনা, যাদেরকে আসলে পুরস্কারের লোভে একধরণের বিক্রি করা হয়েছে- এরপর তাদেরকে ন্যাপি আর গগলস পরিয়ে অর্ধেক পৃথিবী ঘুরিয়ে কিউবার গুয়ানতানামো বে’র এক মার্কিন নৌ ঘাঁটিতে বন্দী করে রাখা- এটি যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমা বিশ্বের সুনামের অপূরণীয় ক্ষতি করেছে।
বিনা বিচারে লোকজনকে বন্দী করে রাখার মতো ঘটনা ঘটতো স্বৈরতান্ত্রিক দেশগুলোতে। আরবরা আশা করেনি যে আমেরিকাতেও এটা ঘটতে পারে।
এরপর যা ঘটেছিল, তা ছিল আরও মারাত্মক। সিআইএ এসব জায়গায় ওয়াটারবোর্ডিং (বন্দীদের মাথায় পানি ঢেলে তারা পানিতে ডুবে যাচ্ছে এমন এক অনুভূতি তৈরি করা) এবং আরও নানা রকম কৌশলে বন্দীদের ওপর নির্যাতন চালাচ্ছিল জিজ্ঞাসাবাদের সময়। ওবামা প্রশাসন এসে এসব বন্ধ করেছিল, কিন্তু ততদিনে ক্ষতি যা হওয়ার তা হয়ে গেছে।
৫. বেরিয়ে আসার পরিকল্পনা থাকা:
নাইন ইলেভেনের আগে পশ্চিমা দেশগুলো অন্য যেসব দেশে সামরিক হস্তক্ষেপ করেছে, তুলনামূলকভাবে সেগুলো ছিল অনেক দ্রুত এবং সহজ। সিয়েরা লিওন, কসোভো, বা এমনকি ১৯৯১ সালের ডেজার্ট স্টর্ম অভিযান- এই সবগুলো অভিযান শেষ করার একটা নির্দিষ্ট সীমা নির্ধারণ করা ছিল।
কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে আফগানিস্তান এবং ইরাকে যে আক্রমণ চালানো হলো, তার পরিণামে যে যুদ্ধ শুরু হলো, তাকে বলা হচ্ছিল ‘চিরকালের যুদ্ধ’। ২০০১ এবং ২০০৩ সালে যারা এই যুদ্ধ শুরু করেছিল, তারা কেউ ধারণা করতে পারেনি যে দুই দশক পরও এই যুদ্ধ চালিয়ে যেতে হবে।
সোজা কথায় বললে, পশ্চিমা দেশগুলো আসলে বুঝতেই পারেনি যে তার কীসের মধ্যে গিয়ে পড়ছে, এবং সেখান থেকে বেরিয়ে আসার কোন বাস্তবসম্মত পরিকল্পনাও ছিল না।
এতে কোনও সন্দেহ নেই যে, পশ্চিমা দেশগুলো যদি ২০০১ সালে আফগানিস্তান থেকে তালেবান এবং আল-কায়েদাকে হটিয়ে না দিত, তাহলে সেখান থেকে আরও অনেক আক্রমণ চালানো হতো। আফগানিস্তানে সন্ত্রাসবাদ বিরোধী মিশন ব্যর্থ হয়নি, তবে দেশ গঠনের কাজ কখনোই শেষ হয়নি।
আর এখন আফগানিস্তানের একটা ছবিই বেশিরভাগ মানুষের মনে গেঁথে থাকবে: সেটি হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের বিমান বাহিনীর সি-১৭ পরিবহন বিমানের সঙ্গে সঙ্গে রানওয়ে ধরে ছুটতে থাকা মরিয়া আফগানদের ছবি।
তারা এমন এক দেশ ছেড়ে পালানোর চেষ্টা করছিল, যে দেশটিকে পশ্চিমা বিশ্ব বলতে গেলে প্রায় পরিত্যাগ করেছে বা প্রত্যাঘাত হয়েছে।
ছবি সংগৃহীত
গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে ফিলিস্তিনের গাজায় আগ্রাসন শুরু করে ইহুদিবাদী ইসরায়েল। এরপর থেকে দীর্ঘ সাড়ে ৫ মাসেরও বেশি সময় ধরে অবরুদ্ধ ওই উপত্যাকায় নির্বিচারে মানুষ হত্যা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। এতে প্রায় ৩০,০০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। এর মধ্যে অধিকাংশই নারী ও শিশু। এছাড়া আহত হয়েছে আরও প্রায় ৭০ হাজার ফিলিস্তিনি।
গাজায় ইসরায়েলের এই বর্বরতা এরই মধ্যে বিশ্বব্যাপী ‘গণহত্যা’ হিসেবে আখ্যা পেয়েছে। বিষয়টি নিয়ে জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক বিচার আদালতেও একটি মামলাও চলমান রয়েছে।
এরই পরিস্থিতিতে যুদ্ধবিরতির জন্য ইসরায়েলের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু তারপরও কোনও কিছুরই তোয়াক্কা করছে না ইহুদিবাদী দেশটি। আর তাদের জোরালো সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
এমতাবস্থায় গাজায় ‘গণহত্যার’ প্রতিবাদ জানিয়ে আমেরিকার ওয়াশিংটনে ইসরায়েলি দূতাবাসের বাইরে নিজের গায়ে আগুন ধরিয়ে দিয়েছেন মার্কিন বিমান বাহিনীর এক সদস্য। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে।
মার্কিন সিক্রেট সার্ভিস ডিসি ফায়ার ও ইএমএস-এর কর্মকর্তারা আগুন নেভানোর পর ওই ব্যক্তিকে স্থানীয় একটি হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছেন। মেট্রোপলিটন পুলিশ ডিপার্টমেন্টের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, ওই ব্যক্তির অবস্থা আশঙ্কাজনক।
ইন্টারনেটে সরাসরি সম্প্রচারিত একটি ভিডিওতে সামরিক পোশাক পরা মার্কিন বিমান বাহিনীর ওই সদস্য বলেন, “আমি আর গণহত্যার সঙ্গে নিজেকে জড়িত রাখতে চাই না।”
এরপর তিনি এক ধরনের স্বচ্ছ তরল জিনিস নিজের গায়ে ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন। এ সময় তিনি ‘ফ্রি প্যালেস্টাইন’ বলে চিৎকার করতে থাকেন। সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান, সিএনএন, এপি, ইউএসএ টুডে, রয়টার্স, সিবিএস নিউজ
ফাইল ছবি: বেগম খালেদা জিয়া
দেড় মাসের বেশি সময় ধরে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তার শারীরিক অবস্থা উন্নতি হয়নি বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য দ্রুত বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
এ অবস্থায় গত সোমবার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়ার সুযোগ চেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছে তার পরিবার। মতামতের জন্য আবেদন পাঠানো হয়েছে আইন মন্ত্রণালয়ে। এ বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত আজ জানানোর কথা রয়েছে। তার পরিবার মানবিক বিবেচনায় অনুমতি পাওয়ার প্রত্যাশা করছে।
শনিবার রাজধানীর কাকরাইলে ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ (আইডিইবি) ভবনে এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, খালেদা জিয়া কয়েকটি মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি, তিনি কারাগারে ছিলেন। কিন্তু তার স্বজনদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী তার দণ্ডাদেশ স্থগিত করে বাসায় থেকে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। যাতে তিনি উন্নত চিকিৎসা পান সে ব্যবস্থা করা হয়েছে।
ইতিপূর্বে বিদেশে নিতে তার ভাই একটি আবেদন করেছিলেন। কিন্তু এখানে আইনি জটিলতা রয়েছে, তাই আমরা আমাদের পক্ষ থেকে আবেদনটি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। এরপরে কিছু করতে হলে আইন অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থায় যেতে হবে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত রোববার (আজ) জানিয়ে দেয়া হবে।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে স্থায়ীভাবে মুক্তি দিয়ে বিদেশে চিকিৎসা দেওয়ার অনুমতি চেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন তার ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার।
এর আগেও একাধিকবার আবেদন করেছিলেন তিনি। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত পাননি। পরিবারের একজন সদস্য বলেন, খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত। তার এখন যে অবস্থা, তাতে তাকে বাইরে নেওয়া খুব জরুরি। মানবিক বিবেচনায় বিদেশে চিকিৎসা নেওয়ার অনুমতি পাবেন বলে তারা আশা করেন।
তিনি আরও বলেন, মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শ অনুযায়ী তারা খোঁজ নিয়েছেন যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি ও সিঙ্গাপুরের হাসপাতালে এর উন্নত চিকিৎসা আছে। এরই মধ্যে ওই দেশগুলোয় খালেদা জিয়ার জন্য উপযুক্ত হাসপাতালের সন্ধান করছেন, যাতে তারা অনুমতি পাওয়া মাত্র অসুস্থ খালেদা জিয়াকে বাইরে নিতে পারেন।
এদিকে খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার বিষয়ে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রী আইনি ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তবে সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবীদের অনেকে মনে করেন, সরকার চাইলে আদালতে না গিয়ে তাকে বিদেশে পাঠানোর অনুমতি দিতে পারে।
এ বিষয়ে সুপ্রিমকোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক সম্প্রতি গণমাধ্যমকে বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার বিষয়ে আদালতের আলাদা অনুমতির কোনো প্রয়োজন নেই। কারণ তাকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে নির্বাহী আদেশে। তাকে (খালেদা জিয়া) জেলে গিয়ে আবেদন করতে হবে বলে যে ব্যাখ্যা দেওয়া হচ্ছে তা আইনের যৌক্তিক ব্যাখ্যা বলে আমার কাছে মনে হয় না। সূত্র: যুগান্তর