a
ফাইল ছবি
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রতীক বরাদ্দ না হলেও নির্বাচনী আচরণ বিধিমালা অনুযায়ী প্রতীক বরাদ্দের আগে আনুষ্ঠানিক প্রচারণার নিয়ম নেই। তবু ভিন্ন কৌশলে মাঠে নেমেছেন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রার্থীরা। উঠান বৈঠক, ঘরোয়া বৈঠক বা সামাজিক-সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রচারণা চলছে।
আওয়ামী লীগ দলীয় মেয়র প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াত আইভী নারায়ণগঞ্জ বন্দরের নবীগঞ্জ এলাকার কদমরসূল দরগাহ জিয়ারত করেন। সেখানে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও তার সমর্থকরা ভিড় করেন। নৌকার পক্ষে স্লোগান দিয়ে মিছিল করেছেন নেতাকর্মীরা।
অন্যদিকে বিভিন্ন মসজিদে নামাজ আদায়ের মাধ্যমে প্রচারণা চালিয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার।
গতকাল শুক্রবার বিকালে নারায়ণগঞ্জ বন্দরের নবীগঞ্জ এলাকার কদমরসূল দরগাহ জিয়ারতে যান আওয়ামী লীগ দলীয় মেয়র প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াত আইভী। যাবার সময় এবং জিয়ারত শেষে ফেরার পথে নৌকার পক্ষে স্লোগান দিয়ে মিছিল করেছেন নেতাকর্মীরা। অনেকে আগে থেকেই সেখানে ফুল নিয়ে আইভীর জন্য অপেক্ষায় করছিলেন। তারা ফুল ছিটিয়ে আইভীকে বরণ করে নেন।
উল্লেখ্য, নাসিক নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনের আচরণবিধির ৫ ধারায় অনুযায়ী কোনো প্রার্থী বা তাহার পক্ষে কোনো রাজনৈতিক দল, অন্য কোনো ব্যক্তি, সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান প্রতীক বরাদ্দের পূর্বে কোনো প্রকার নির্বাচনী প্রচার শুরু করতে পারবে না।
সেখানে এই বিধির ব্যত্যয় ঘটেছে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে জেলা আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান দীপু বলেন, ডা. আইভী এ অঞ্চলের সবচেয়ে জনপ্রিয় একজন মানুষ। তিনি কোনো এলাকায় গেলে এমনিতেই শত শত মানুষ তার পেছনে হাঁটতে থাকেন। সাধারণ মানুষকে তো আর আটকে রাখা যায় না।
শুক্রবার দিনভর নগরীর বিভিন্ন মসজিদে নামাজ আদায়ের মাধ্যমে প্রচারণা চালিয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার। এ সময় তৈমুর আলম খন্দকারকে পেয়ে মুসল্লিরা ছাড়াও ওই সব এলাকার শত শত মানুষ ছুটে আসেন তাকে এক নজর দেখেতে।
জানা গেছে, শুক্রবার দুপুরে অ্যাডভোকেট তৈমুর জুমার নামাজ আদায় করেন নগরীর ১৩নং ওয়ার্ডের আমলাপাড়া বড় মসজিদে। নামাজ শেষে তিনি সেখানে সাধারণ মানুষের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। এরপর আসরের নামাজ আদায় করেন নগরীর ১১নং ওয়ার্ডের তল্লা বড় মসজিদে এবং মাগরিবের নামাজ আদায় করেন ১৮নং ওয়ার্ডের নোল্লাপাড়া বড় মসজিদে।
এ সময় তৈমুর আলম গণমাধ্যমের কাছে বলেন, গত ১৬ ডিসেম্বর জেলা ও মহানগর বিএনপির পক্ষ থেকে স্মরণকালের বিশাল বিজয় র্যালি হয়েছে। কিন্তু নির্বাচন কমিশনের অনুরোধে আমি আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে সেই র্যালিতে যাইনি। অথচ ওই দিনই আওয়ামী লীগের প্রার্থী নৌকার পক্ষে করা সমাবেশে অংশ নিয়েছেন, শহরে মিছিল করেছেন।
তিনি বলেন, আজ (শুক্রবার) নৌকার প্রার্থী বন্দরের কদমরসুল দরগায় গিয়েছেন এবং সেখানে শত শত লোক নিয়ে মিছিল করছেন। প্রতীক বরাদ্দের আগেই নির্বাচন কমিশন দ্বিমুখী আচরণ শুরু করেছেন।
নৌকার প্রার্থী সেলিনা হায়াত আইভীর গত ২ দিনের আচরণবিধি ভঙ্গের বিষয়টি নিয়ে কথা বললে নাসিক নির্বাচনের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা নির্বাচন অফিসার মতিয়ুর রহমান জানান, আইন সবার জন্য সমান। যদি এমনটা হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিষয়টা আমার জানা নেই, আমি খোঁজ নিয়ে দেখছি।
নারায়ণগঞ্জ নির্বাচন কমিশন কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে, এবারের নাসিক নির্বাচনে মোট ২৫৪ জন মনোনয়নপত্র সংগ্রহকারীদের মধ্যে থেকে ২১০ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এদের মধ্যে মেয়র পদে ৮, নারী কাউন্সিলর পদে ৩৬ ও সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১৬৬ জন ভোটের লড়াইয়ে নেমেছেন। সূত্র: যুগান্তর
ছবি: মুক্তসংবাদ প্রতিদিন
কর্নেল (অব.) আকরাম: বিজয় ও পরাজয় উভয়ই একটি জাতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবং তা জাতীয় ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে যায়। প্রতিটি জাতির ইতিহাসে বিজয় ও পরাজয় রয়েছে, যা জাতির গঠন ও অগ্রগতিতে ভিন্ন ভূমিকা পালন করে। কিছু জাতি তাদের সাফল্যের ইতিহাসে গর্বিত, আবার কিছু জাতি দুর্ভাগ্যবশত ব্যর্থতার ইতিহাসেই বেশি সমৃদ্ধ। মানব সভ্যতার উত্থান-পতন প্রকৃতির নিয়ম, যা আমরা এড়িয়ে যেতে পারি না।
আমাদের জাতীয় উত্থান-পতনের ইতিহাস বুঝতে হলে আমাদের অতীতের পৃষ্ঠাগুলোতে ফিরে যেতে হবে। ১৭৫৭ সালের পলাশীর যুদ্ধে নবাব সিরাজউদ্দৌলার বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকা সেনাবাহিনীকে মীরজাফর বিশ্বাসঘাতকতার মাধ্যমে পরাজয়ে পরিণত করে। আমাদের নিজেদের ভুলের কারণেই বিদেশি শক্তি এদেশে প্রবেশ করে এবং দুই শতাব্দী ধরে আমাদের শাসন করে। কিন্তু আমরা সেই পরাজয়ের ইতিহাসকে বদলে ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টির মাধ্যমে বিজয়ে রূপান্তর করি।
১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ এবং ঢাকাকে রাজধানী করে পূর্ববঙ্গ সৃষ্টি হওয়া ছিল বাংলা মুসলমানদের জন্য এক বিশাল বিজয়। কিন্তু এটি খুব দ্রুতই কলকাতার হিন্দু অভিজাতদের ষড়যন্ত্র ও বিচারপতি স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে ১৯১১ সালে বাতিল হয়ে যায়। এতে বাঙালি মুসলমানদের সম্ভাব্য সামাজিক উত্থান রুদ্ধ হয়। পরবর্তীতে পাকিস্তানের ভিতরেও বাঙালি মুসলমানদের জাতীয়তাবাদ আবার পরাজিত হয়।
পাকিস্তান জন্মের পর থেকেই ভারত পাকিস্তানকে ভাঙার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে তথাকথিত বাঙালি জাতীয়তাবাদ নতুন করে প্রাণ পায়। পাকিস্তানের অপরিপক্ব সামরিক-রাজনৈতিক নেতৃত্ব পূর্ব পাকিস্তানের জনগণকে কঠোর অবস্থান নিতে বাধ্য করে এবং ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের দিকে ঠেলে দেয়। পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ কখনোই যুদ্ধ চায়নি, এটি তাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয় ২৫শে মার্চ ১৯৭১।
আমরা যুদ্ধ করেছিলাম, কিন্তু বিজয় ছিনিয়ে নিয়েছিল বিদেশি শক্তি। পলাশীর ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটে ১৯৭১ সালে। আমরা বিজয় অর্জন করলেও তা পরাজয়ে রূপ নেয়। আজ চব্বিশ বছর পর আমরা বুঝতে পারছি, ১৯৭১ সালে আমরা কতটা বড় ভুল করেছি। আমরা নিজেরা যুদ্ধ করে বিজয় অর্জন করতে পারতাম, কিন্তু শত্রুর ফাঁদে পা দিয়ে চূড়ান্তভাবে হেরে গিয়েছিলাম।
১৯৭১ সালের বিজয়কে ভারত তাদের নিজের অর্জন হিসেবে দেখেছে এবং গত ৫৩ বছরে, জিয়াউর রহমানের ছয় বছরের শাসনকাল ব্যতীত, বাংলাদেশকে তারা তাদের উপনিবেশ হিসেবে ব্যবহার করেছে। ২০২৪ সালের জুলাই বিপ্লবের পর তারা আরও স্পষ্টভাবে ঘোষণা করছে যে, ১৯৭১-এর বিজয় তাদেরই।
বিএনপির ভুল এবং সেনাপ্রধান মইনউদ্দিনের বিশ্বাসঘাতকতা, যিনি ইতিহাসের দ্বিতীয় মীরজাফর, ভারতের হাতে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় বসানোর সুযোগ করে দেয়। ফলে ২০০৮ সালের নির্বাচনের মাধ্যমে আবারও বিজয় পরাজয়ে পরিণত হয়। শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী শাসন দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে জাতিকে জিম্মি করে রেখেছিল এবং ভারত হয়ে ওঠে বাংলাদেশের প্রকৃত শাসক।
কিন্তু যখন জাতি সমস্ত আশার আলো নিভে যেতে দেখছিল, তখন ছাত্রদের নেতৃত্বে ৫ই আগস্ট ২০২৪ সালে এক বিস্ময়কর বিপ্লব ঘটে এবং আমরা দ্বিতীয় স্বাধীনতা অর্জন করি।
কিন্তু অতীতের তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকে আমরা শিক্ষা নিতে পারিনি। আমরা ৫ই আগস্টের বিজয়ের পর একটি জাতীয় বিপ্লবী সরকার গঠন করতে ব্যর্থ হয়েছি। জুলাই বিপ্লবের অংশীদারদের মধ্যে বিভক্তি জাতিকে হতাশায় ফেলেছে। আমরা কি সঠিক পথে এগোচ্ছি, নাকি আবারও ভুল পথে পা বাড়াচ্ছি—এ প্রশ্ন এখন সাধারণ মানুষের।
আমাদের এই বিজয় কি হাজারো প্রাণ ও সীমাহীন ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে, তা কি আবার পরাজয়ে পরিণত হবে?
আমরা, বাংলাদেশিরা, আর কোনো ষড়যন্ত্র সহ্য করবো না। দলীয় স্বার্থের জন্য জাতীয় স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিয়ে কেউ যদি বিদেশি শক্তির সহায়তা নিতে চায়, জনগণ তা প্রতিরোধ করবে। অতীতের ইতিহাস আর দেখতে চাই না। এই বিজয় চিরদিনের জন্য অটুট রাখতে হবে, আর সেই লক্ষ্যেই আমাদের প্রত্যেককে নিজ নিজ অবস্থান থেকে কাজ করতে হবে।
ফাইল ছবি
২০ বছর দীর্ঘ যুদ্ধের পর আফগানিস্তান ছেড়ে চলে যাচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো বাহিনী। দেশটি থেকে লোকজনকে সরিয়ে নেওয়ার অভিযানের বিষয়ে অবশেষে বক্তব্য দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম বিবিসির বরাতে জানা যায়, বাইডেন তার বক্তব্যে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র তালেবানের সঙ্গে ‘ক্রমাগত যোগাযোগ’ রাখছে।
তিনি আরো বলেন, এখন যে জঙ্গি গোষ্ঠী দেশটিকে নিয়ন্ত্রণ করছে, তাদের বলছি যে তারা যদি আমেরিকানদের উপর কোনো হামলা চালায় তাহলে তারা যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে "দ্রুত এবং জোরালো প্রতিক্রিয়া" পাবে। মার্কিন কর্মকর্তারা এখনো যে কোনও সন্ত্রাসী হামলার উপর নজরদারি করছেন।
এর আগে বুধবার ( ১৮ আগস্ট) বাইডেন এবিসিকে বলেছেন, ৩১ আগস্টেও মধ্যে সব মার্কিন নাগরিকদের সরিয়ে আনা সম্ভব না হলে প্রয়োজনে এই তারিখের পরেও মার্কিন সেনা আফগানিস্তানে অবস্থান করতে পারে।
পেন্টাগনের মুখপাত্র জন কির্বি বৃহস্পতিবার এক ব্রিফিংয়ে বলেছেন, আমেরিকা সময়সীমা পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেয়নি, তবে এধরণের সময় পরিবর্তনের জন্য তালেবানদের সঙ্গে আলোচনার প্রয়োজন হবে।