a
ফাইল ছবি । যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ডোনাল্ড রামসফেল্ড
ইরাক ও আফগানিস্তান যুদ্ধে নেতৃত্ব দেওয়া যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ডোনাল্ড রামসফেল্ড মারা গেছেন। ৩০ জুন, বুধবার নিউ মেক্সিকোর তাওস এলাকায় তিনি মারা যান। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর।
রামসফেল্ড ইরাক যুদ্ধের হোতা হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তিনি সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের সময় দেশটির সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে ছিলেন।
২০০৩ সালে সাদ্দাম সরকারের বিরুদ্ধে গণবিধ্বংসী অস্ত্র মজুতের অভিযোগ তুলে ইরাকে হামলা চালায় মার্কিন বাহিনী। দেশটির তৎকালীন প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনকে অন্যায়ভাবে উৎখাত করে তাকে ফাঁসিতে ঝোলায় যুক্তরাষ্ট্র।
ইরাকে মার্কিন হামলার প্রতিবাদে যখন লাখ লাখ মানুষ বিক্ষোভ করেন, রামসফেল্ড তখন ইরাকে হামলার পক্ষে দৃঢ় অবস্থান নেন। তিনি ইরাকে হামলাকে প্রেসিডেন্ট বুশের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ হিসেবে অভিহিত করে প্রচার করেন।
গুয়ানতানামো বে ও আবু গারিব কারাগারে বন্দিদের ওপর নির্যাতন চালানোর পক্ষেও দৃঢ় অবস্থান নিয়েছিলেন রামসফেল্ড। আফগানিস্তানে তালেবানদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর বিষয়েও রামসফেল্ড গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
ডোনাল্ড রামসফেল্ড ইরাকে আমেরিকার যুদ্ধ সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য হবে বলে মন্তব্য করেছিলেন। ২০০২ সালে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, 'আমি বলতে পারব না যুক্তরাষ্ট্রের ইরাক যুদ্ধ পাঁচদিন, পাঁচ সপ্তাহ কিংবা পাঁচ বছর স্থায়ী হবে। কিন্তু এর থেকে বেশি দিন স্থায়ী হবে না সেটা আমি বলতে পারি।'
এখনও ইরাকে মার্কিন সেনারা অবস্থান করছে। দেশটিতে এখন পাঁচ হাজার ২০০ মার্কিন সেনা রয়েছেন। এর মধ্যে চলতি সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে দুই হাজার ২০০ সেনা প্রত্যাহার করা হবে জানানো হয়েছে।
রামসফেল্ড কারাবন্দিদের ২০ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদের নিয়ম তৈরি করেছিলেন। এই ২০ ঘণ্টার মধ্যে চারঘণ্টা কাপড় খুলে, ভয় দেখিয়ে ও কষ্টদায়ক অবস্থায় জিজ্ঞাসাবাদের নিয়ম ছিল। এই জিজ্ঞাসাবাদ পদ্ধতি নিয়ে পরবর্তীতে ব্যাপক সমালোচনা হলেও তা অব্যাহত ছিল।
রামসফেল্ডের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন ইরাক যুদ্ধের সময়কার মার্কিন প্রেসিডেন্ট বুশ। তিনি বলেন, তিনি রসিক এবং বড় হৃদযের ভালো মানুষ ছিলেন। প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে তিনি দৃষ্টান্ত তৈরি করেছিলেন। রামসফেল্ড যুক্তরাষ্ট্রকে আরও নিরাপদ ও উন্নত করেছেন।
অপরপক্ষে, এক টুইট বার্তায় কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির নাইট ফাস্ট এমেন্ডমেন্ট ইনস্টিটিউটের প্রধান ও সাবেক আমেরিকান নাগরিক স্বাধীনতা ইউনিয়নের উপআইন পরিচালক জামি জাফের বলেন, রামসফেল্ডের নির্দেশের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের কারাগারে শত শত হাজতি অপব্যবহার এবং নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। তাই রামসফেল্ড নিয়ে প্রত্যেক শোক আলাপের পূর্বে এসব নির্যাতনের বিষয়গুলোও উল্লেখ থাকা প্রয়োজন।
দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা বলেছেন, ফিলিস্তিনিদের সাথে ইসরায়েলিদের যে আচরণ করছে তা বর্ণবাদী যুগের দক্ষিণ আফ্রিকার সাথে মিল রয়েছে। ফ্রান্স ২৪ টেলিভিশনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ মন্তব্য করেছেন বলে জানায় আল জাজিরা।
রামাফোসা বলেন, ফিলিস্তিনিরা তাদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার চায়। তারা চায় তাদের নিজস্ব রাষ্ট্র। তারা তাদের নিজস্ব বিষয়গুলি পরিচালনা করতে এবং স্বাধীনতা অর্জন করতে সক্ষম হতে চায়। প্যালেস্টাইনিরা আর সীমাবদ্ধ থাকতে চায় না।
তিনি আরো বলেন, ইসরায়েলিরা যেভাবে ফিলিস্তিনিদের অধিকার অস্বীকার করে আসছে, যেভাবে তারা ফিলিস্তিনিদের এলাকায় বোমাবাজি করে যাচ্ছে- তাতে একে সহজেই কেউ বর্ণবাদী রাষ্ট্র হিসেবে চিহ্নিত করতে পারবে। ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরায়েলিরা কী আচরণ করছে তা বর্ণনা করার মতো আমার আর কোনও রেফারেন্স পয়েন্ট নেই।
অন্যদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট গাজায় দ্রুত যুদ্ধবিরতির পথে হাঁটার জন্য ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান জানালেও দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু হামলা অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার করেছে। যদিও দাবি করা হয় বাইডেন নেতানিয়াহুর ওপর চাপ প্রয়োগ করেছেন বলে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে হোয়াইট হাউজ।
এর আগে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনসহ আন্তর্জাতিক প্রভাবশালী নেতৃবৃন্দ গাজায় যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছিলেন। কিন্তু ইসরাইল হামাস নেতাদের হত্যার চেষ্টায় যুদ্ধবিরতির উদ্যোগ ভেস্তে যাচ্ছে। গাজায় ইসরাইল হামলা অব্যাহত রেখেছে। শিশু, নারী, সাংবাদিকসহ ২২০ জন নিহত হয়েছেন। এদিকে ফিলিস্তিনি-ইসরায়েল প্রসঙ্গে তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন একে অপরকে সমালোচনা করেছে। খবর বিবিসি ও আলজাজিরার
ফাইল ছবি
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মাদ জাওয়াদ জারিফ বলেছেন, ইরানের নাতাঞ্জ পরমাণু স্থাপনায় অন্তর্ঘাতমূলক হামলা যুদ্ধাপরাধের শামিল। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেছেন, এই হামলায় আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা বা আইএইএ’র তত্ত্বাবধানে থাকা একটি স্থাপনাকে টার্গেট করা হয়েছে।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সোমবার জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসকে লেখা এক চিঠিতে এ মন্তব্য করেন। জারিফ কয়েকটি টুইটার বার্তায় ওই চিঠির মূল বিষয়বস্তু উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, আইএইএ’র তত্ত্বাবধানে থাকা পরমাণু স্থাপনাটিতে হামলার ফলে সেখান থেকে পারমাণবিক নিঃসরণ ছড়িয়ে পড়তে পারত যা পরমাণু সন্ত্রাসবাদ ও যুদ্ধাপরাধের শামিল।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমেরিকা যদি এই অর্থহীন জুয়া খেলার ক্ষতিকর প্রভাব ঠেকাতে চায় তাহলে তাকে অবিলম্বে তেহরানের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে পরমাণু সমঝোতায় ফিরে আসতে হবে।
গুতেরেসকে লেখা চিঠিতে জারিফ আরও বলেন, আমেরিকা কার্যকরভাবে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করলে ইরানও তার প্রতিশ্রুতিতে ফিরে যাবে। তা না হলে নাতাঞ্জে যে হামলা হয়েছে তার জের ধরে ইরান তার পরমাণু কর্মসূচির গতি বহুগুণে বাড়িয়ে দেবে।
রবিবার সকালে ইরানের নাতাঞ্জ পরমাণু স্থাপনার বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থায় সমস্যা দেখা দেয়। ইরানের আণবিক শক্তি সংস্থার প্রধান আলী আকবর সালেহি এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, তার দেশের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ ব্যবস্থায় যে হামলা হয়েছে তা থেকে বোঝা যায় পরমাণু শিল্পে ইরানের সাফল্য অনেকের নিকট ভাল লাগছে না।
ইতিপূর্বে নাতাঞ্জ পরমাণু স্থাপনায় আমেরিকা ও ইসরায়েল যৌথভাবে সাইবার হামলা চালিয়েছিল।