a
ছবি সংগৃহীত
রঙ বদল মাঝে মাঝে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে এবং বিভিন্ন পরিস্থিতিতে এর ভিন্ন ভিন্ন অর্থ বহন করে। মানুষের চরিত্র সহজে বদলায় না, যেমন কথায় বলেনা, "অঙ্গার শতধৌতেন মলিনত্ব ন মুঞ্জতি"। তবে কিছু পেশার প্রয়োজন অনুযায়ী তাদের প্রশিক্ষণ ও অনুপ্রেরণার মাধ্যমে গড়ে তোলা হয়, যেমন সেনাবাহিনী, পুলিশ, ডাক্তার বা আইনজীবী। প্রতিটি পেশার নিজস্ব নীতিমালা ও আচরণবিধি থাকে, যা তাদের প্রয়োজন মেটাতে সাহায্য করে।
সমাজের প্রতিটি পেশা সময় ও প্রয়োজনের সাথে পরিবর্তিত হয়। তবে একটি বিশেষ গুণ, অর্থাৎ জনগণ ও সমাজের প্রতি সেবা, তা কোনো পরিস্থিতিতেই পরিবর্তন হয় না। এমন কিছু পেশা আছে, যেমন সেনাবাহিনী, যেখানে মানুষের পূর্ণাঙ্গ আত্মত্যাগ ও দেশের জন্য প্রাণ দেওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে হয়। কঠোর প্রশিক্ষণ ও অনুপ্রেরণার মাধ্যমে তাদের এমনভাবে তৈরি করা হয় যে, তাদের নিজেদেরও বুঝতে অসুবিধা হয় কিভাবে তারা এমন রূপান্তরিত হয়েছে। সমাজের অন্য কোনো পেশায় এই ধরনের উৎসর্গের প্রয়োজন পড়ে না।
সেনাবাহিনীর চরিত্র গঠনে তাদের পেশাগত আচরণ এবং নৈতিকতাকে প্রাধান্য দেওয়া হয়, ইউনিফর্মকে নয়। যদিও বিশেষ উদ্দেশ্যে সেনাবাহিনীর ইউনিফর্ম পরিবর্তনের প্রয়োজন হতে পারে।
পুলিশ বিভাগও জাতির জন্য সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ, এবং এর সদস্যদের সেবার প্রতি আন্তরিক এবং দায়িত্বশীল হওয়া আবশ্যক। পুলিশকেও একটি ইউনিফর্ম পরিষেবা হিসেবে বিবেচনা করা হয়, যেখানে তাদের চরিত্র গঠন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পুলিশদের ইউনিফর্ম অবশ্যই আকর্ষণীয় এবং সাধারণ মানুষের কাছে একটি শক্তিশালী বার্তা প্রেরণ করতে সক্ষম হতে হবে।
ডাক্তার এবং আইনজীবীরাও পেশাদার এবং তাদের নিজস্ব আচরণবিধি ও নৈতিকতা আছে। তারা নিজেদের পেশাগত আচরণবিধি অনুযায়ী কাজ করে এবং তাদের ক্লায়েন্টদের প্রতি নৈতিকভাবে দায়বদ্ধ।
সমাজের প্রতিটি সদস্যের উচিত একটি সুনাগরিকের জন্য প্রয়োজনীয় আচরণবিধি মেনে চলা। একজন নাগরিক তার দায়িত্ব পালন করবেন আন্তরিকতার সঙ্গে। যারা সমাজের জন্য কাজ করেন, তারা ইউনিফর্ম পরুক বা না পরুক, তাদের সেবা অবশ্যই সৎ ও আন্তরিক হতে হবে। যারা ইউনিফর্ম পরেন, তাদের অবশ্যই আকর্ষণীয় এবং ইতিবাচক ছাপ ফেলার মতো হওয়া উচিত।
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ইউনিফর্ম অবশ্যই চমৎকার হওয়া উচিত। বর্তমানে তাদের ইউনিফর্ম যথেষ্ট ভালো হলেও প্রশাসন তা পরিবর্তন করার পরিকল্পনা করছে। এই পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা তখনই যুক্তিযুক্ত হবে যখন তাদের সেবায় প্রয়োজনীয় উন্নতি আনা হবে। কেবল ইউনিফর্ম বদলানো মানেই সংস্কার নয়। সংস্কারের অর্থ হলো সেবার মানোন্নয়ন। শুধুমাত্র ইউনিফর্ম বদলানো একপ্রকার হাস্যকর এবং অপ্রয়োজনীয় বলে মনে হয়।
সমাজে অনেকেই সময়ের পরিবর্তনের সাথে নিজের অবস্থান বদলে ফেলেন এবং নতুন পরিবেশের প্রতি অত্যন্ত আনুগত্য দেখিয়ে সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করেন। তারা সমাজের প্রকৃত ভণ্ড। এই রঙ বদলানো মানুষদের সম্পর্কে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।
এটি সমাজের একটি সাধারণ সমস্যা, যা চরিত্র গঠনের মাধ্যমে পরিবর্তন আনা সম্ভব। একটি জাতির চরিত্র গঠন একটি কঠিন কাজ, তবে এটি এখনই শুরু করা প্রয়োজন।
চরিত্র গঠনের কোনো শর্টকাট পদ্ধতি নেই। এটি একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া এবং নতুন বাংলাদেশ গড়তে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে আন্তরিক হতে হবে। শুধুমাত্র রঙ বদলে সমাজের উন্নতি সম্ভব নয়।
লেখক: কর্নেল আকরাম
সম্পাদক, মিলিটারি হিস্ট্রি জার্নাল ও আইন ও ইতিহাসের অধ্যাপক।
ছবি সংগৃহীত
নিউজ ডেস্ক: সাধারণ স্বার্থ বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলার ক্ষেত্রে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং এটি বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের উন্নয়নের জন্য পথ নির্দেশ প্রদান করে। কোনো জাতি একা টিকে থাকতে পারে না; বরং অন্য দেশগুলোর সহযোগিতা ও সমর্থনের প্রয়োজন হয়। আন্ত:রাষ্ট্র সম্পর্কের ক্ষেত্রে এটি একটি সাধারণ চর্চা। আধুনিক যুগে কোনো রাষ্ট্রই অন্য রাষ্ট্রের সমর্থন ছাড়া টিকে থাকতে পারে না। অন্য দেশের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন এখন একটি বাস্তবতা, যা নির্ভর করে সংশ্লিষ্ট দেশের প্রয়োজনের ওপর।
দুই দেশের সাধারণ স্বার্থ পারস্পরিক যোগাযোগ বাড়াতে এবং সম্পর্ক উন্নত করতে সরাসরি কাজ করে। বাংলাদেশ এবং পাকিস্তান উভয়ই ভ্রাতৃপ্রতীম দেশ, যাদের মধ্যে বিশ্বাস, ইতিহাস এবং সংস্কৃতি বিশেষভাবে মিল রয়েছে। বর্তমানে উভয় দেশই বিদ্যমান সম্পর্ককে বহুমাত্রিক দৃষ্টিভঙ্গিতে আরও উন্নত করার তাগিদ অনুভব করছে। উভয় দেশের মানুষের উন্নয়নের জন্য একে অপরকে সমর্থন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই সম্পর্কের ভিত্তি হওয়া উচিত মানুষে মানুষে সম্পর্ক, সরকার থেকে সরকারের মধ্যে সম্পর্ক নয়।
সরকারি সম্পর্ক সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বদলে যায়, কিন্তু মানুষের মধ্যে সম্পর্ক দীর্ঘস্থায়ী হয় এবং দুই ভ্রাতৃপ্রতীম দেশের মধ্যে স্থায়ী বন্ধন তৈরি করে। উভয় দেশের জনগণ নিকট ভবিষ্যতে ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সম্পর্ক উন্নয়নের গভীর আগ্রহ প্রকাশ করছে।
মানুষের সম্পর্ক গড়ে তুলতে গভীর এবং দূরদর্শী নীতিমালা প্রণয়ন ও আন্তরিকতার প্রয়োজন। এটি এমন এক আদর্শ সম্পর্ক, যা আমরা বহুদিন ধরে আকাঙ্ক্ষা করে আসছি। কিন্তু কিছু স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর কারণে এটি বাস্তবায়িত হয়নি, যদিও দুই দেশের জনগণ সর্বদা এর পক্ষে ছিল।
২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট বিপ্লব পুরো চিত্র বদলে দিয়েছে এবং আমাদের স্বাধীনতার পর থেকে তৈরি হওয়া কৃত্রিম বাধাগুলো সফলভাবে ধ্বংস করেছে। এখন আমরা এমন একটি কার্যকর পররাষ্ট্রনীতি গ্রহণ করতে সম্পূর্ণ স্বাধীন, যা সব দিক থেকে আমাদের জন্য উপযুক্ত।
সাধারণ স্বার্থের ক্ষেত্রগুলো দ্রুত চিহ্নিত করা উচিত, সময় নষ্ট না করে। সম্পর্কের মূল ভিত্তি হওয়া উচিত স্থায়ী ভ্রাতৃত্বপূর্ণ বন্ধন গড়ে তোলার প্রচেষ্টা।
শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক বিনিময়: শিক্ষা ও সংস্কৃতি হতে পারে আদর্শ ক্ষেত্র। উভয় দেশের সরকারকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রদান উৎসাহিত করা উচিত। দুই দেশের গবেষকদের বিভিন্ন সাধারণ স্বার্থের ক্ষেত্রে গবেষণা পরিচালনায় পৃষ্ঠপোষকতা করা উচিত। লেখক এবং বুদ্ধিজীবীদের নিয়মিত সফর পরিচালনা করা প্রয়োজন।
মিডিয়া ও সংবাদপত্র: মিডিয়া এবং সংবাদপত্র পাকিস্তানের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক গড়ে তুলতে চমৎকার ভূমিকা রাখতে পারে। উভয় দেশের সংবাদ মাধ্যমের লোকজনের নিয়মিত সফর বিনিময় এবং এটি যথাযথ গুরুত্ব দেওয়া উচিত।
সংস্কৃতি: সংস্কৃতি এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র যেখানে উভয় দেশ একত্রে কাজ করতে পারে। উভয় দেশের মধ্যে ঘন ঘন সাংস্কৃতিক সফর শুরু করা উচিত। সাংস্কৃতিক কার্যক্রমের বিনিময় দুই দেশের মধ্যে দ্রুত বন্ধন তৈরি করতে সহায়ক।
স্বাস্থ্য: স্বাস্থ্য খাতেও উভয় দেশ একত্রে কাজ করে মানসম্পন্ন চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে পারে। উভয় দেশে আধুনিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল যৌথভাবে প্রতিষ্ঠা করা যেতে পারে।
ক্রীড়া ও পর্যটন: ক্রীড়া ও পর্যটনের ক্ষেত্রেও যথাযথ গুরুত্ব দেওয়া উচিত। ঐতিহাসিক স্থানগুলোর শিক্ষামূলক দলভিত্তিক সফর যত দ্রুত সম্ভব শুরু করা উচিত।
বাণিজ্য ও শিল্প: বাণিজ্য ও শিল্প একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র। উভয় দেশের জনগণ ব্যাপক বাণিজ্য কার্যক্রমের মাধ্যমে উপকৃত হতে পারে। জুট ও টেক্সটাইল শিল্পে যৌথ উদ্যোগ গ্রহণ করা যেতে পারে।
প্রশাসন, বিচার ও পুলিশিং: উভয় দেশ নিজেদের প্রশাসনিক, বিচারিক এবং পুলিশিং অভিজ্ঞতা শেয়ার করে এসব ক্ষেত্রের উন্নয়নে কাজ করতে পারে।
জল সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও সমুদ্র: জল সম্পদ ব্যবস্থাপনা এবং সমুদ্র সম্পদ শেয়ারিং উভয় দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র হতে পারে। নিরাপদ সমুদ্র নিশ্চিত করতে যৌথ শিপিং লাইন এবং জাহাজ নির্মাণ উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে।
সর্বোপরি উভয় দেশের সাধারণ মানুষের জীবনমান উন্নয়নের জন্য আন্তরিকভাবে এগিয়ে আসা উচিত। যে কোনো প্রাকৃতিক বা মানবসৃষ্ট বিপর্যয়ের মুখোমুখি হতে দুই দেশের জনগণের মানসিক প্রস্তুতি থাকা জরুরি। সর্বোপরি, উভয় দেশের জনগণকে যে কোনো সাধারণ শত্রুর বিরুদ্ধে একসঙ্গে লড়াই করার জন্য সবসময় প্রস্তুত থাকতে হবে।
আসুন, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের জনগণের মধ্যে একে অপরের প্রয়োজনে সত্যিকারের ভ্রাতৃপ্রতীম বন্ধুত্ব গড়ে তুলি।
লেখক : সম্পাদক, মিলিটারি হিস্ট্রি জার্নাল ও আইন ও ইতিহাসের অধ্যাপক।
ফাইল ছবি । পোপ ফ্রান্সিস
চলমান ইসরায়েলের নারকীয় হত্যাকান্ডকে "অগ্রহণযোগ্য" বলে মন্তব্য করেছেন পোপ ফ্রান্সিস। ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি বর্বর হামলা নিয়ে এই প্রথমবার মুখ খুললেন পোপ ফ্রান্সিস। ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়ার সূত্রে জানা যায়, সেন্ট পিটার্স স্কয়ারে সাপ্তাহিক ভাষণে বিশেষত শিশুদের মৃত্যুর বিষয়টি উল্লেখ করে বলেন, "তারা ভবিষ্যৎ গড়তে চায় না, বরং এটি ধ্বংস করতে চায়"।
তিনি আরো বলেন, গাজায় সম্প্রতি ইসরায়েলের হামলায় শিশুসহ অনেক নিরীহ মানুষ মারা গেছেন, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আমি শান্তি বজায় রাখতে এবং অস্ত্রের ঝনঝনানির অবসান ঘটাতে এর সঙ্গে জড়িতদের কাছে আবেদন জানাচ্ছি।
আজ রবিবার (১৬ মে) ফিলিস্তিনির গাজা উপত্যকায় চালানো বিমান হামলা অন্তত ১৩ শিশুসহ ৩৩ জন ফিলিস্তিনি নাগরিককে হত্যা করা হয়েছে। এছাড়া মাত্র ১ঘন্টা আল্টিমেটাম দিয়ে গুড়িয়ে দেয়া হয়েছে এপি ও আল জাজিরার ভবন।
গত ৭ দিন টানা এই হামলায় এখন পর্যন্ত ১৮১ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। তার মধ্যে অন্তত ৫২ জন শিশু। আহত হয়েছে হাজারের বেশি মানুষ। গ্রেফতার করা হয়েছে অগনিত নর-নারীকে।