a
ছবি: মুক্তসংবাদ প্রতিদিন
আরাফাত আলম, মুক্তসংবাদ প্রতিদিন, ঢাকা: গতকাল ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ইং, জাতীয় ঐক্য সমন্বয় পরিষদ আয়োজিত মতবিনিময় সভা মালিবাগ চৌধুরী পাড়া পার্টি অফিসে অনুষ্ঠিত হয়।
ঐক্য সমন্বয় পরিষদের মিডিয়া উইং চীফ ও ডেমোক্রেটিক পার্টির চেয়ারম্যান শেখ মোস্তাফিজুর রহমানের সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সাবেক ধর্ম ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী, বিএলডিপি'র চেয়ারম্যান এম. নাজিমউদ্দীন আল আজাদ।
মাননীয় প্রধান অতিথি তার বক্তব্যে বলেন, আজ পুরো জাতি অস্থিরতার মাঝে দিনাতিপাত করছে। দেশের আইন-শৃংখলা অবনতি, দ্রব্য মূ্ল্যের উর্ধ্বগতি এবং রমজান মাসে মানুষের দূর্ভোগ লাগবে সরকার কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ না করতে পারলে সামনে দেশের পরিস্থিতি আরো সংকটময় হবে। আমরা সকল দল মিলে প্রফেসর ড. ইউনুসকে ক্ষমতায় বসিয়েছি কিন্তু এই অর্ন্তবর্তী সরকার জনগণের আশা-আকাংখার প্রতিফলন আশানুরূপ ঘটাতে সক্ষম হননি। আমরা এই সরকারকে প্রয়োজনে আরো সময় দিতে চাই, যাতে তারা দ্রুত সময়ে দেশের গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার করে দেশে আবারও গণতান্ত্রিকধারা নিশ্চিত হয়।
বাংলাদেশ স্বাধীন পার্টির চেয়ারম্যান মীর্জা আজম তার মূল্যবান বক্তব্যে সদ্য ঘোষিত জাতীয় নাগরিক পার্টি সম্পর্কে বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা অনেক ভালো কথা বললেও রাষ্ট্র সম্পর্কে জাতীয় নাগরিক পার্টিতে (এনসিপি) তেমন কোনো রাজনৈতিক দর্শন লক্ষ্য করা যায়নি। তাদের রাজনৈতিক দল গঠনও অনেকটা একপেশে। বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান ও স্বৈরাচার হটাতে সর্বশ্রেণি মানুষের অংশগ্রহণ করা মানুষদের রাজনৈতিক মাঠে নেমে তারা সব ভুলে গেছেন। সুতরাং তারা অনেক বড় বড় কথা বলে সারাদেশে ঢাকঢোল পিটিয়ে জনসমাগোম করলেও সঠিক রাজনৈতিক দর্শন না থাকায় দেশের মানুষের আশা-আকাংখা পূরণে কতটুকু পূরণ করতে পারবে তা ভবিষ্যতে কথা বলবে। আমি তাদের শুরুটা খুব একটা ভালো কিছু দেখতে পারছিনা। এক্ষেত্রে আমাদের মতো ছোট বড় দলগুলো একজোট হয়ে ভবিষ্যতে এদেশের সর্বশ্রেণি মানুষের সেবার মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে এবং সবাইকে সম্পৃক্ত করতে হবে।
জাতীয় মুক্তিদলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোহা. খোরশেদ আলম তার বক্তব্যে বলেন, এদেশে পতিত স্বৈচারচার সরকারগুলো বার বার রাষ্ট্রের কাঠামোগুলো ধ্বংস করে ফেলেছে এবং অর্থনৈতিক কাঠামোও প্রায় ভঙ্গুর পর্যায়ে। সেখান থেকে উত্তোরণে গনতন্ত্রকামী সবাইকে দলমত উর্ধ্বে উঠে নতুন করে প্রিয় বাংলাদেশকে মেরামত করতে হবে। জাতীয় মুক্তিদলের মহাসচিব জনাব মুহাম্মদ আবদুল আহাদ নূর ‘জাতীয় ঐক্য সমন্বয় পরিষদ’ আগামী দিনগুলোতে জরুরীভিত্তিতে যেসব কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা অত্যাবশ্যকীয় তা লিখিতভাবে উপস্থাপন করেন।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মাঝে বক্তব্য প্রদান করেন বাংলাদেশ জনতা পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাক সরকার, এডভোকেট ছারোয়ার মিয়া, এস,এম আমানুল্লাহ প্রমুখ।
সংগৃহীত ছবি
‘আমাদের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে শপথ নিতে হবে, প্রয়োজনে আবার যুদ্ধে যেতে হবে। এ যুদ্ধ হবে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বিনির্মাণ ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার’- বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাবেক সহ-সভাপতি (ভিপি) নুরুল হক নুর।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে শনিবার (২৭ মার্চ) দুপুরে ভাসানী অনুসারী পরিষদ আয়োজিত এক প্রতিবাদ সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রতিবাদ সমাবেশে নুর বলেন, ‘এই মুহূর্তে দেশে সহিংস পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এ থেকে উত্তরণের জন্য দ্রুত মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বলব, সব রাজনৈতিক দল ও নেতাকর্মীকে নিয়ে আলোচনা করে দেশে শান্তি ফিরিয়ে আনুন। অন্যথায় দেশের যে পরিস্থিতি হয়, তার দায় আপনাকে নিতে হবে।’
এসময় নুর আরও বলেন, ‘গতকাল থেকে বায়তুল মোকাররম মসজিদ প্রাঙ্গণ, যাত্রাবাড়ী, চট্টগ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ দেশের বিভিন্ন জায়গার রাজপথ রক্তে রঞ্জিত হয়েছে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে গতকাল জাতিকে লাশ উপহার দিয়েছে। আমরা সরকারকে ধিক্কার জানাই। ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ দিয়ে বায়তুল মোকাররমে কী তাণ্ডব চালিয়েছে আপনারা দেখেছেন। একই তাণ্ডব চালানো হয়েছে চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে।’
এসময় কয়েক দিন ধরে বিভিন্ন বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলোর ওপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ হামলা চালিয়েছে উল্লেখ করে নুর বলেন, ‘নারীদের লাঞ্ছিত করা হয়েছে। তারা সাংবাদিকদের ওপরও আক্রমণ চালিয়েছে।’
ছবি সংগৃহীত
নিউজ ডেস্ক: বিডিআর বিদ্রোহে সংঘটিত বর্বরতম হত্যাযজ্ঞ তদন্তের জন্য গঠিত জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশন গতকাল রোববার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায়।
পিলখানায় তৎকালীন বিডিআর সদর দপ্তরে নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দলগতভাবে আওয়ামী লীগের সম্পৃক্ততা পেয়েছে জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশন। তারা বলছে, এ ঘটনার মূল সমন্বয়কারী ছিলেন তৎকালীন সংসদ সদস্য শেখ ফজলে নূর তাপস। পুরো ঘটনাটি সংঘটিত করার ক্ষেত্রে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘গ্রিন সিগন্যাল’ ছিল। এছাড়া এই ঘটনায় ভারতেরও সম্পৃক্ততা পেয়েছে কমিশন।
ঢাকার পিলখানায় নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনা তদন্তে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদনে এসব বিষয় উঠে এসেছে। ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিডিআরের (বর্তমানে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ—বিজিবি) সদর দপ্তরে নৃশংস এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ১১ মাস ধরে তদন্ত করে প্রতিবেদন তৈরি করে এই কমিশন।
তদন্ত কমিশন গতকাল রোববার বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে তাদের প্রতিবেদন জমা দেয়। এ সময় সেখানে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান, প্রধান উপদেষ্টার প্রতিরক্ষা ও জাতীয় সংহতি উন্নয়নবিষয়ক বিশেষ সহকারী লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) আবদুল হাফিজ ও স্বরাষ্ট্রসচিব নাসিমুল গনি উপস্থিত ছিলেন। পরে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে প্রতিবেদনের বিষয়ে গণমাধ্যমে জানায়।
প্রধান উপদেষ্টার কাছে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর সন্ধ্যায় সায়েন্স ল্যাবরেটরির বিআরআইসিএম নতুন ভবনে সংবাদ সম্মেলন করে তদন্ত কমিশন। কমিশনের সভাপতি মেজর জেনারেল (অব.) আ ল ম ফজলুর রহমান সংবাদ সম্মেলনে তদন্ত প্রতিবেদনের বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেন।
কমিশনের সভাপতি বলেন, সেনাবাহিনীকে দুর্বল করতে ও ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে বিডিআর হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটানো হয়েছে। এ ঘটনার সঙ্গে শেখ হাসিনাসহ ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতা এবং পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। এছাড়া বিডিআর সদস্যদের মধ্যেও বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ক্ষোভ ছিল বলেও কমিশনপ্রধান জানান।
পিলখানায় সেই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বিডিআরের তৎকালীন মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদসহ ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তা নিহত হন। সব মিলিয়ে তখন পিলখানায় নিহত হন ৭৪ জন। সেদিন পিলখানায় থাকা সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তাদের পরিবারের সদস্যরাও নৃশংসতার শিকার হন।
আ ল ম ফজলুর রহমান বলেন, এ ঘটনার আদ্যোপান্ত তাঁরা বের করতে সক্ষম হয়েছেন। তাঁদের তদন্তে উঠে এসেছে—বিডিআর হত্যাকাণ্ডে কারা জড়িত, কারা আলামত নষ্ট করেছে, এর স্বরূপ কী, কেন এটা হলো, কারা দায়ী, কীভাবে প্রতিরোধ করা যেত অথবা প্রতিরোধ করা যেত কি যেত না। তিনি বলেন, তদন্তে এটাও উঠে এসেছে—কেন সেনাবাহিনী সামরিক পদক্ষেপ নিল না, কেন রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত হলো এবং কীভাবে ষড়যন্ত্র দানা বেঁধেছিল? পাশাপাশি এ ঘটনায় জড়িত সামরিক-বেসামরিক ব্যক্তিদের তথ্যও বের হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে কমিশনের প্রধান আ ল ম ফজলুর রহমান এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতার নাম জানান। তাঁরা হলেন ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও বিদেশে পলাতক শেখ ফজলে নূর তাপস, আওয়ামী লীগ নেতা শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মির্জা আজম, জাহাঙ্গীর কবির নানক ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন।
এর বাইরে শেখ হাসিনার সাবেক নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল মইন ইউ আহমেদ ও ডিজিএফআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক লে. জেনারেল (অব.) মোল্লা ফজলে আকবর।
কমিশনের প্রধান ফজলুর রহমান বলেন, তদন্তকাজ সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও ত্রুটিমুক্ত করার স্বার্থে সর্বোচ্চ পেশাদারত্ব বজায় রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা যখন কাজ শুরু করি, তখন ১৬ বছর আগের এই ঘটনার বহু আলামত ধ্বংস হয়ে গেছে। এই ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত অনেকে বিদেশে চলে গেছেন। আমরা দুটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে গেছি। সাক্ষীদের ডাকলাম, কারও কারও আট ঘণ্টা পর্যন্ত বক্তব্য শুনেছি। যতক্ষণ তিনি বলতে চেয়েছেন। যাঁরা তদন্তে জড়িত ছিলেন, তাঁদের সঙ্গে কথা বলেছি। তাঁদের তদন্তের রিপোর্ট সংগ্রহ করেছি, অন্যান্য উপাদান সংগ্রহ করেছি।’
ফজলুর রহমান বলেন, তদন্তে বিডিআর হত্যাকাণ্ডে বহিঃশক্তির সরাসরি সম্পৃক্ততা ও তৎকালীন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সরাসরি জড়িত থাকার শক্তিশালী প্রমাণ পাওয়া গেছে।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, রোববার বিকেলে প্রধান উপদেষ্টার কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর সেখানে কমিশনের সদস্য মেজর জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর কবির তালুকদার বলেছেন, এই ঘটনার কিছু বাহ্যিক ও প্রকৃত কারণ বের করেছে কমিশন। এই হত্যাকাণ্ড পরিকল্পিত এবং এর পেছনে প্রধান সমন্বয়কের ভূমিকা পালন করেছিলেন তৎকালীন সংসদ সদস্য শেখ ফজলে নূর তাপস। তিনি আরও বলেন, হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের রক্ষা করতে স্থানীয় আওয়ামী লীগ সরাসরি ভূমিকা রেখেছে। তারা ২০-২৫ জনের একটি মিছিল নিয়ে পিলখানায় ঢুকেছে এবং বের হওয়ার সময় সেই মিছিলে দুই শতাধিক মানুষ ছিল।
পরে তদন্ত কমিশনের সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্ন করা হয়—মিছিলকারী এই ব্যক্তিরা কারা ছিলেন? জবাবে কমিশনপ্রধান ফজলুর রহমান বলেন, ‘এরা ছিল আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ। এরা যে সংখ্যক ঢুকেছিল, তার চেয়ে অনেক বেশি সংখ্যক বের হয়েছিল। আমাদের ধারণা, এদের সঙ্গে অনেক কিলারও (হত্যাকারী) বের হয়ে গেছে।’
হত্যাকাণ্ডে আওয়ামী লীগের নেতারা কীভাবে সমন্বয় করেছেন—এমন প্রশ্নের জবাবে কমিশনপ্রধান বলেন, ‘এটা এক দিনে হয়নি, দীর্ঘ সময় ধরে হয়েছে। যেমন তাপস মসজিদে বসে মিটিং করেছে। বিভিন্ন ট্রেনিং গ্রাউন্ডে বসে মিটিং হয়েছে। একটা দীর্ঘ সময় ধরে ষড়যন্ত্রগুলো হয়েছে। সর্বশেষে গিয়ে এই হত্যাকাণ্ডটা হয়েছে।’
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানায়, জাহাঙ্গীর কবির তালুকদার বলেছেন, পুরো ঘটনাটি সংঘটিত করার ক্ষেত্রে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘গ্রিন সিগন্যাল’ ছিল। তিনি এ ঘটনার দায় নিরূপণের ক্ষেত্রে বলেন, দায় তৎকালীন সরকারপ্রধান থেকে শুরু করে সেনাপ্রধানেরও। এই ঘটনাকে রাজনৈতিকভাবে সমাধানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পুলিশ, র্যাব ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোরও রয়েছে চরম ব্যর্থতা।
জাহাঙ্গীর কবির তালুকদার আরও বলেন, ওই ঘটনার সময় কিছু প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া এবং কয়েকজন সাংবাদিকের ভূমিকা ছিল অপেশাদার। ওই হত্যাকাণ্ডের সময় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় (তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাসভবন) যেসব বিডিআর সদস্যের সঙ্গে শেখ হাসিনা বৈঠক করেন, তাঁদের সঠিক নাম-পরিচয় ও তথ্য সংরক্ষণ করা হয়নি।
সংবাদ সম্মেলনে কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়, প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিল এবং বাংলাদেশের অস্থিতিশীলতা থেকে লাভবান হয়েছে।
কমিশনের সভাপতি আ ল ম ফজলুর রহমান বলেন, ওই ঘটনার সময় ৯২১ জনের মতো ভারতীয় বাংলাদেশে এসেছিল। তার মধ্যে ৬৭ জনের মতো লোকের কোনো হিসাব মিলছে না। তারা কোন দিক দিয়ে বের হয়ে গেছে, এটা ঠিক বলা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, ‘এই ব্যাপারেও আমরা সরকারকে সুপারিশ করেছি ওই ব্যক্তিরা কোথায়, কেন আসলো; সেটা খুঁজে বের করার জন্য। এ বিষয়ে ভারতের কাছে জানতে চাওয়ার জন্য আমরা সরকারকে পরামর্শ দিয়েছি।’
কেন এই ঘটনা ঘটল, সে প্রসঙ্গ টেনে সংবাদ সম্মেলনে কমিশনের সভাপতি আ ল ম ফজলুর রহমান বলেন, ‘ওই সময়কার সরকার তার ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করতে চেয়েছিল। প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করতে চেয়েছিল এবং সেনাবাহিনী ও বিজিবিকে দুর্বল করতে চেয়েছিল।’
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানায়, কমিশন তাদের প্রতিবেদনে বেশ কিছু সুপারিশ করেছে, যাতে করে ভবিষ্যতে বাহিনীগুলোয় এ ধরনের ঘটনা এড়ানো যায় এবং এ ঘটনার ভুক্তভোগীরা ন্যায়বিচার পান।
কমিশনের সদস্যের সাক্ষাৎকালে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘বিডিআর হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জাতি দীর্ঘদিন ধরে অন্ধকারে ছিল। আপনারা সত্য উদ্ঘাটনে যে ভূমিকা রেখেছেন, জাতি তা স্মরণে রাখবে। জাতির পক্ষ থেকে আপনাদের প্রতি ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ইতিহাসের এই ভয়াবহতম ঘটনা নিয়ে জাতির অনেক প্রশ্ন ছিল, এই কাজের মধ্য দিয়ে সেসব প্রশ্নের অবসান ঘটবে। এই প্রতিবেদনে শিক্ষণীয় বহু বিষয় এসেছে। জাতির জন্য মূল্যবান সম্পদ হয়ে থাকবে এটি।
মেজর জেনারেল (অব.) আ ল ম ফজলুর রহমানের নেতৃত্বাধীন এ কমিশনের সদস্যরা হলেন মেজর জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর কবির তালুকদার, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. সাইদুর রহমান, অবসরপ্রাপ্ত যুগ্ম সচিব মুন্সী আলাউদ্দিন আল আজাদ, অবসরপ্রাপ্ত ডিআইজি এম আকবর আলী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মো. শরীফুল ইসলাম, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক মো. শাহনেওয়াজ খান চন্দন।
কমিশনের সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, তদন্তে দেখা গেছে, ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে তৎকালীন সেনাপ্রধান সদর দপ্তর ছেড়ে চলে যাওয়ায় সময়মতো সেনা অভিযান পরিচালনা করা হয়নি, যা হত্যাকাণ্ডকে উৎসাহিত করেছিল। ভুক্তভোগী সেনা কর্মকর্তা এবং তাঁদের পরিবারের ওপর শারীরিক নির্যাতন ও লুটপাটের প্রমাণ পাওয়া গেছে। এমন ঘটনা ভবিষ্যতে যাতে না ঘটে, সেই লক্ষ্যে প্রশাসন ও বাহিনীর সংস্কারের জন্য বিস্তৃত সুপারিশ সরকারের কাছে দেওয়া হয়েছে। সূত্র: প্রথম আলো