a
ছবি সংগৃহীত
সংকট জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং এটি ব্যক্তিগত ও জাতীয় জীবনে সমান গুরুত্বপূর্ণ। সংকট সমাধানের জন্য তার মূলসূত্র জানা অপরিহার্য। যদি সংকটের প্রকৃত কারণ বোঝা না যায়, তাহলে ব্যক্তিগত বা জাতীয়—কোনো ক্ষেত্রেই কার্যকর সমাধান সম্ভব নয়। বাংলাদেশ স্বাধীনতার পর থেকেই নানা সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংকটে ভুগছে।
আমাদের জাতীয় সংকটের শেকড় মূলত রাজনৈতিক নেতৃত্বের দুর্বলতায় নিহিত। দেশভাগের আগের সময়টিতে আমাদের ভাগ্য ভালো ছিল যে কিছু উজ্জ্বল মুসলিম নেতা পেয়েছিলাম, কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত দেশভাগের পর সঠিক নেতৃত্বের অভাব দেখা দেয়।
পাকিস্তান শুরু থেকেই তীব্র নেতৃত্ব সংকটে পড়েছিল। প্রথমত, প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর মৃত্যুর পর দেশটি গভীর সংকটে পড়ে। এরপর লিয়াকত আলী খানের হত্যার মাধ্যমে পাকিস্তান নেতৃত্বহীন হয়ে পড়ে। পাকিস্তানের সেই দুর্বল অবস্থার সুযোগ নিয়ে পূর্ব পাকিস্তান থেকে খাজা নাজিমুদ্দিন নেতৃত্বে এলেও তার মৃত্যুর পর সংকট আরও গভীর হয়। চৌধুরী মোহাম্মদ আলী (বগুড়া) এবং পরে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী পাকিস্তানের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন, কিন্তু রাজনৈতিক পরিস্থিতি ক্রমেই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় এবং ১৯৫৮ সালে সামরিক শাসন জারি হয়, যা ১৯৬৯ সালে আইয়ুব খানের পতনের মাধ্যমে শেষ হয়।
পূর্ব পাকিস্তান থেকে তিনজন প্রধানমন্ত্রী আসলেও আমাদের জনগণ তখনো রাজনৈতিক বৈষম্যের অভিযোগ তুলেছিল। যদিও পাকিস্তান তখন 'উন্নয়নের দশক' পার করছিল, কিন্তু একইসঙ্গে গণতান্ত্রিক চর্চা ধ্বংস হয়েছিল, যা জাতীয় ঐক্যের ব্যর্থতার মূল কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
দুর্বল নেতৃত্ব ও সামরিক শাসনের সুযোগ নিয়ে ভারত তার পূর্ব পাকিস্তানি এজেন্টদের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলে। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা ছিল ভারতীয় রাজনৈতিক সংযোগের একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ, যা স্বাধীনতার পর শেখ মুজিব নিজেই স্বীকার করেছিলেন।
নিঃসন্দেহে, বাংলাদেশের জন্ম ভারতীয় কৌশলগত রাজনীতির ফল। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ভারত পূর্ব পাকিস্তানে আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা শুরু করেছিল। যদিও আমরা একাত্তরে স্বাধীনতার জন্য প্রাণ দিয়েছি, কিন্তু শেষ পর্যন্ত ভারতীয় রাজনৈতিক ব্ল্যাকমেইলের শিকার হয়েছি। এখন ভারত ১৯৭১ সালের বিজয়কে তার নিজের জয় হিসেবে তুলে ধরতে চায়।
ভারত সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশকে শুরু থেকেই নিজের উপর নির্ভরশীল করার চেষ্টা করেছে। তাদের মূল লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশকে ভারতের উপনিবেশে পরিণত করা এবং আমাদের নেতৃত্ব তৈরির প্রতিষ্ঠানগুলো—বিশেষত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে দুর্বল করা। ভারত এতে সফল হয়েছে, আমাদের নেতৃত্বকে কার্যত শূন্যের কোঠায় নামিয়ে এনেছে।
আমাদের দুর্ভাগ্য যে, দূরদর্শী ও যোগ্য নেতৃত্ব এখনো আমরা পাইনি, ব্যতিক্রম শুধু জিয়াউর রহমান। তিনিই একমাত্র ব্যক্তি যিনি ভারতের আধিপত্যবাদী রাজনীতি বুঝতে পেরেছিলেন এবং একটি টেকসই রাজনৈতিক সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তার হত্যার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ-কেন্দ্রিক জাতীয় রাজনীতির অবসান ঘটে।
১৯৮১ সালের মে মাসে জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর থেকে আমরা নেতৃত্ব সংকটে ভুগছি। গত চার দশকে সমাজের জন্য যোগ্য নেতাদের তৈরি করতে আমরা ব্যর্থ হয়েছি, এমনকি বিএনপিও তেমন কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেয়নি।
বর্তমানে আমাদের জাতীয় জীবন এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যেখানে প্রকৃত পেশাদার নেতৃত্বের অভাব সর্বস্তরে দৃশ্যমান। গত সরকার কৌশলে সমাজের সব স্তর থেকে নেতৃত্ব বিকাশের পথ বন্ধ করে দিয়েছে। তাদের মূল লক্ষ্য ছিল আওয়ামী লীগকে দিয়ে একটি পারিবারিক শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা, যা শেখ হাসিনা অত্যন্ত সফলভাবে বাস্তবায়ন করেছেন জাতীয় স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে।
২০২৪ সালের জুলাই বিপ্লবের পর নতুন পরিবেশে আমরা নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছি। প্রথমত, এই বিপ্লবের কিছু অংশগ্রহণকারী বিপ্লবের চেতনাকে অগ্রাহ্য করছে। বিএনপি, জামায়াত, ইসলামী আন্দোলন এবং নবগঠিত এনসিপি (NCP) গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় বিষয়গুলোর—বিশেষ করে নির্বাচন ও সংস্কার প্রশ্নে ঐকমত্যে আসতে পারছে না।
তারা জাতীয় স্বার্থের পরিবর্তে দলীয় স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে, যা জনগণের আকাঙ্ক্ষার বিরুদ্ধে যাচ্ছে। অথচ জুলাই বিপ্লবে ছাত্ররা অসাধারণ ভূমিকা রেখেছে, যা ইতিহাস কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করবে।
তবে নেতৃত্বের জন্য শুধু আবেগ নয়, অভিজ্ঞতাও জরুরি। অল্পবয়সী ছাত্ররা এখনো রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য যথেষ্ট পরিপক্ব নয়। তাদের ধাপে ধাপে রাজনীতি, জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হবে। আমরা তাদের হাতে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব ছেড়ে দিতে পারি না, কারণ এটি কোনো পরীক্ষার বিষয় নয়। তাদের ধৈর্য ধরতে হবে এবং প্রকৃত নেতা হয়ে উঠতে হবে।
আমাদের সমাজের নেতৃত্ব সংকট দূর করতে হলে সুপরিকল্পিত নেতৃত্ব তৈরির কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু শেখ হাসিনা তার ভারতীয় প্রভুদের সহায়তায় ইচ্ছাকৃতভাবে এই প্রক্রিয়াকে ধ্বংস করেছেন।
জনপ্রশাসনের কোনো খাতই তিনি অক্ষত রাখেননি। যদি নেতৃত্ব বিকাশের জন্য জরুরি সংস্কার না করা হয়, তাহলে বাংলাদেশ তার সার্বভৌমত্ব ধরে রাখতে পারবে না। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা, প্রশাসন ও বিচারব্যবস্থা ধ্বংস করা হয়েছে, যা তাদের স্থানীয় দোসরদের সহায়তায় ভারত অত্যন্ত সফলভাবে বাস্তবায়ন করেছে।
যোগ্য ও মেধাবী মানুষ ছাড়া আমাদের পক্ষে এই বিশাল প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে টিকে থাকা অসম্ভব। ভারতের সমাজে মেধাবী ও দক্ষ মানুষের অভাব নেই। শুধু আবেগ ও বড় বড় কথা বলে এই সংকট থেকে উত্তরণ সম্ভব নয়।
আমরা এখনো দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ নিতে পারিনি, অথচ নেতৃত্ব সংকট এখন সবচেয়ে জরুরি বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমাদের হাতে সময় খুবই কম। এখনই যদি নেতৃত্ব গঠনের ওপর গুরুত্ব না দিই, তাহলে জাতির ভবিষ্যৎ সংকটে পড়বে।
লেখক: ড. শেখ আকরাম আলী
কলাম লেখক ও আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক, মুক্তসংবাদ প্রতিদিন
ফাইল ছবি
আগামী সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পুরোনো বাণিজ্য মেলার মাঠে শান্তি সমাবেশ করবে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ।
সোমবার বিএনপির পক্ষ থেকে সারা দেশে জনসমাবেশ করার ঘোষণার পর আওয়ামী লীগ ঢাকায় এই শান্তি সমাবেশের ঘোষণা দেয়।
এর আগে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জরুরি সভা শেষে সংবাদ সম্মেলন করে আগামীকাল রোববার সারা দেশে বিক্ষোভ সমাবেশের ঘোষণা দেন। আওয়ামী লীগের এই কর্মসূচি ঘোষণার দুই ঘণ্টা পর বিএনপি সোমবার দেশের সব জেলা ও মহানগরে জনসমাবেশ কর্মসূচির ঘোষণা দেয়। দলটি বলেছে, আওয়ামী লীগ যেহেতু রোববার কর্মসূচি পালন করবে, তাই তারা সোমবার কর্মসূচি দিয়েছে।
আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, বিএনপির সোমবারের কর্মসূচি ঘোষণার পর ওই দিনই তারা (আওয়ামী লীগ) রাজধানীতে বড় জমায়েতের কথা ভাবছে। এ কারণেই বাণিজ্য মেলার মাঠে শান্তি সমাবেশ করার ঘোষণা দেয়। তাই রোববারের কর্মসূচিকে খুব বেশি গুরুত্ব দেওয়া হবে না। তবে স্থানীয়ভাবে এই কর্মসূচি পালনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘আমরা সোমবার আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার মাঠে বড় সমাবেশের আয়োজন করেছি। আগামীকাল রোববার থানা এলাকাগুলোতে বিক্ষোভ সমাবেশ করা হবে।’
ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক উইলিয়াম প্রলয় সমাদ্দারও একই কথা বলেছেন। তিনি বলেন, বাণিজ্য মেলার মাঠে সমাবেশ সফল করতে আগামীকাল তেজগাঁওয়ে বর্ধিত সভা ডাকা হয়েছে। সূত্র: প্রথম আলো
বিনা অভিজ্ঞতায় ব্র্যাক ব্যাংকে চাকরি, বেতন ৭০,০০০
বেসরকারি ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেড জনবল নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। ব্যাংকটি ইয়াং লিডারস প্রোগ্রামে তরুণ কর্মী নিয়োগ প্রদান করবে। আগ্রহী প্রার্থীদের অনলাইনে আবেদন করতে বলা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যাঁরা সদ্য স্নাতক পাস করেছেন, তাঁদের জন্য ব্র্যাক ব্যাংকের এই ইয়াং লিডারস প্রোগ্রাম। বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের স্বীকৃত যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যেকোনো বিষয়ে স্নাতক পাস হলেই আবেদন করা যাবে।
প্রার্থীদের বিশ্লেষণী সমস্যা সমাধানের দক্ষতা থাকতে হবে। বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় সাবলীল হতে হবে। হালনাগাদ প্রযুক্তিবিষয়ক জ্ঞান ও ব্যাংকিংয়ের ডিজিটাল রূপান্তরে অবদান রাখার জ্ঞান থাকতে হবে।
ইয়াং লিডারদের মাসিক বেতন সর্বসাকল্যে ৭০ হাজার টাকা। সফলভাবে উন্নয়ন কর্মসূচি শেষে ইয়াং লিডারদের প্রিন্সিপাল অফিসার হিসেবে পদোন্নতি প্রদান করা হবে।
আগ্রহী প্রার্থীদের ব্র্যাক ব্যাংকের ক্যারিয়ার–সংক্রান্ত ওয়েবসাইটে গিয়ে অনলাইনে আবেদন করতে হবে। আবেদনের শেষ সময় ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩। সূত্র: প্রথম আলো
ওয়েবসাইটের লিংক::shorturl.at/fkms2