a
সংগৃহীত ছবি
দল ও বঙ্গবন্ধু পরিবারের নাম ব্যবহার করে নিত্যনতুন দোকান, চাঁদাবাজি টেন্ডারবাজি তদবির ও কমিটি বাণিজ্য করাই লক্ষ্য, চাকরিজীবী লীগ খুলে বহিষ্কার হেলেনা জাহাঙ্গীর নামের আগে আওয়ামী লীগ যোগ করলেই আওয়ামী লীগ হয় না: বাহাউদ্দিন নাছিম।
সংগঠনের নামের আগে ‘লীগ’ ও বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্য কিংবা ‘মুক্তিযোদ্ধা’ নাম ব্যবহার করে আওয়ামী লীগের ক্ষমতার একযুগে ভুঁইফোড় সংগঠন গড়ে উঠেছে আট শতাধিক। ‘অনুমোদন’ বিহীন এসব রাজনৈতিক দোকান গড়ে তোলার মূল উদ্দেশ্য চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, তদবির ও কমিটি বাণিজ্য করা। এসব সংগঠনের নেতারা নানা সময়ে বিতর্কিত কর্মকান্ডে আলোচনায় এলেও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। ‘ধান্ধাবাজির’ এসব দোকানের নেতাদের কর্মকান্ডে বিব্রত আওয়ামী লীগ। এসব সংগঠনকে খোদ আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরই ‘রাজনৈতিক দোকান’ নামে অভিহিত করেছেন।
আর দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেছেন, নামের আগে লীগ যোগ করলেই আওয়ামী লীগ নয়। এদের সঙ্গে দলের কোনো সম্পর্ক নেই। ‘বাংলাদেশ চাকরিজীবী লীগ’ নামে একটি ধান্ধাবাজির দোকান খুলে আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক উপকমিটি থেকে বহিষ্কার হয়েছেন ব্যবসায়ী হেলেনা জাহাঙ্গীর। একই সঙ্গে তাকে কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যপদ থেকেও বহিষ্কার করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগ নেতারা জানিয়েছেন, দলীয় নেতাদের অবশেষে ঘুম ভাঙতে শুরু করেছে। নামের আগে ‘লীগ’ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অথবা বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যদের নাম ব্যবহার করতে দেওয়া হবে না। এমনকি প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়, কিংবা মুক্তিযোদ্ধা বা মুক্তিযুদ্ধ লাগিয়ে রাজনৈতিক দোকান খুলতে দেওয়া হবে না। যারাই এসব করবে এখন থেকে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে আওয়ামী লীগ। ইতিমধ্যে অ্যাকশন শুরু করেছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতারা।
‘বাংলাদেশ চাকরিজীবী লীগ’ নামের নতুন দোকান খুলে সারা দেশে জেলা-উপজেলা এমনকি বিদেশেও সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক মনোনয়ন দেওয়ার বিজ্ঞাপন দিয়ে আলোচনায় আসেন ব্যবসায়ী হেলেনা জাহাঙ্গীর। তিনি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় মহিলাবিষয়ক উপকমিটির সদস্য ছিলেন। একই সঙ্গে ছিলেন কুমিল্লা জেলা উত্তর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য। ‘চাকরিজীবী লীগ’ খোলাসহ নানা কর্মকান্ডের কারণে তাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক মেহের আফরোজ চুমকি গতকাল রাতে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, হেলেনা জাহাঙ্গীরকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তিনি সংগঠনবিরোধী নানা কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ায় আমরা এ ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি।
দলীয় সূত্র মতে, আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন হচ্ছে, যুবলীগ, মহিলা লীগ, কৃষক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, যুব মহিলা লীগ, তাঁতী লীগ, আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ ও মৎস্যজীবী লীগ। এ ছাড়া ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন হচ্ছে, জাতীয় শ্রমিক লীগ ও ছাত্রলীগ। মহিলা শ্রমিক লীগ ও স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ আওয়ামী লীগের ‘নীতিগত’ অনুমোদিত সংগঠন। এর বাইরে আওয়ামী লীগের সহযোগী কিংবা ভ্রাতৃপ্রতিম কোনো সংগঠন নেই। সূত্র মতে, দল ক্ষমতায় এলেই ওরা গড়ে তোলে নিত্যনতুন লীগ। নামসর্বস্ব এসব সংগঠনের পেছনে ‘লীগ’ শব্দ জুড়ে তো দিচ্ছেই, বঙ্গবন্ধু, বঙ্গমাতা, শেখ রাসেল ও বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যের নামও জুড়ে দেওয়া হচ্ছে। এমনকি মুক্তিযোদ্ধাদের নাম ব্যবহার করেও জানান দিচ্ছে অনেক সংগঠন। এসব সংগঠনের বেশির ভাগ উপস্থিতি দেখা যায় রাজধানীতে।
জাতীয় প্রেস ক্লাব, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি, পাবলিক লাইব্রেরি, জাতীয় জাদুঘর মিলনায়তনসহ রাজধানীর বেশ কিছু মিলনায়তনে ওইসব ‘ভুঁইফোঁড়’ সংগঠনের উপস্থিতি। আওয়ামী লীগের কর্মসূচির সঙ্গে মিল রেখেও তাদের কর্মসূচি পালন করতে দেখা যায়।
সূত্র মতে, ২০০৮ সালের আগে বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, বঙ্গবন্ধু পরিষদ, আওয়ামী শিল্পী গোষ্ঠী এবং আমরা সূর্যমুখীসহ হাতে গোনা ৪-৫টি সংগঠন ছাড়া তেমন কোনো সংগঠন বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগের কথা বলতে দেখা যায়নি। আওয়ামী লীগের গত এক যুগে শিশু লীগ থেকে শুরু করে নাপিত লীগ, চাকরিজীবী লীগসহ বিভিন্ন নামে প্রায় আট শতাধিক ভুঁইফোঁড় সংগঠন গড়ে উঠেছে। লীগ শব্দ ব্যবহার করে এমন সংগঠনের মধ্যেই রয়েছে- ‘বাংলাদেশ ইলেকট্রিক লীগ’ ‘নাপিত লীগ’, ‘ফকির লীগ’ ‘জননেত্রী লীগ’, ‘প্রবীণ লীগ’, জনসেবা লীগ, ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ তরুণ জনতা লীগ’ ‘ডিজিটাল লীগ’ নাগরিক লীগ’ পর্যটন লীগ, তরিকত লীগ, আওয়ামী অভিভাবক লীগ, দর্জি লীগ, তরুণ লীগ, রিকশা মালিক-শ্রমিক ঐক্য লীগ, যুব হকার্স লীগ, নৌকার মাঝি শ্রমিক লীগ, ক্ষুদ্র মৎস্যজীবী লীগ, আওয়ামী ক্ষুদ্র মৎস্যজীবী লীগ, ছিন্নমূল হকার্স লীগ, ছিন্নমূল মৎস্যজীবী লীগ, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী লীগ, তৃণমূল লীগ, স্বাধীনতা লীগ, হোটেল শ্রমিক লীগ, সেলুন মালিক লীগ, হকার্স লীগ, চালক লীগ, প্রচার ও প্রকাশনা লীগ, বঙ্গবন্ধু গণতান্ত্রিক লীগ, জননেত্রী শেখ হাসিনা কেন্দ্রীয় লীগ, আওয়ামী মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম লীগ, আওয়ামী পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধা লীগ, আওয়ামী পরিবহন শ্রমিক লীগ, আওয়ামী নৌকার মাঝি শ্রমিক লীগ, সমবায় লীগ, হারবাল লীগ, দেশীয় চিকিৎসক লীগ, পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধা লীগ, পরিবহন শ্রমিক লীগ, বঙ্গবন্ধু হোমিওপ্যাথি লীগ, আওয়ামী সজীব ওয়াজেদ লীগ, অভিভাবক সচেতনতা লীগ, বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগ প্রভৃতি। এসব সংগঠনের সঙ্গে আওয়ামী লীগের ন্যূনতম সম্পর্ক না থাকলেও সংগঠনের নেতারা সচিবালয় থেকে শুরু করে বিভিন্ন অফিসে গিয়ে ভিজিটিং কার্ড ব্যবহার করে নিজেকে বড় ‘আওয়ামী লীগার’ দাবি করে অপকর্ম করে বেড়াচ্ছেন। কেউ কেউ জেলা-উপজেলায় কমিটি অনুমোদন দেওয়ার জন্য মোটা অংকের চাঁদাবাজিও করছেন।
২০১৯ সালের আগস্ট মাসে তাঁতী লীগের এক শোক সভায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এসব সংগঠনকে ‘রাজনৈতিক দোকান’ অভিহিত করে বলেছিলেন, এদেরকে প্রতিহত করতে হবে।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কৃষিবিদ আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ময়ূরের পেখম লাগালেই কাক কখনো ময়ূর হয় না, তেমনি নামের আগে ‘লীগ’ শব্দ যোগ করলেই আওয়ামী লীগ হয়ে যায় না। আওয়ামী লীগ একটা আদর্শ। এটাকে ধারণ করতে হয়। দলের গঠনতন্ত্রের বাইরে কোনো সংগঠনের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সম্পর্ক নেই।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আওয়ামী লীগ বিরোধী দলে থাকার সময় হাতে গোনা কয়েকটি সংগঠনকে পেয়েছি আমাদের পক্ষে কথা বলার জন্য। এখন গণমাধ্যমের কল্যাণে জানতে পারছি লীগ, বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযোদ্ধার শব্দ ব্যবহার করে রাজনৈতিক ধান্ধাবাজির দোকান। এসব চলতে দেওয়া যায় না। অ্যাকশন শুরু হয়েছে, চলমান থাকবে।
লেখক: রফিকুল ইসলাম রনি/সূত্র: বিডি প্রতিদিন
সংগৃহীত ছবি
ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা ভুঁইফোড় ‘লীগ’ ও ‘রাজনৈতিক দোকানদারদের’ বিরুদ্ধে শুদ্ধি অভিযান শুরু করেছে আওয়ামী লীগ। দলকে বিতর্কিত ও বিব্রতকর অবস্থার মুখে ফেলে দেওয়া এসব অবৈধ সংগঠনের কাউকেই ন্যূনতম ছাড় দেবেন না দলের নীতিনির্ধারকরা। খোঁজা হচ্ছে ভুঁইফোড় সংগঠনের পৃষ্ঠপোষকও।
নানা কর্মকান্ডে আলোচিত-সমালোচিত ‘চাকরিজীবী লীগ’ খুলে বসা হেলেনা জাহাঙ্গীর র্যাবের হাতে আটক হওয়ার পর আতঙ্কে রয়েছেন এসব সুযোগ সন্ধানী। অনেকেই গা-ঢাকা দিয়েছেন। কেউ কেউ নিজের ফেসবুক আইডি ডিঅ্যাকটিভ করে গা-বাঁচানোর চেষ্টা করছেন। এর মধ্যেই গতরাতে গ্রেফতার হয়েছেন বাংলাদেশ জননেত্রী শেখ হাসিনা পরিষদ সভাপতি মনির ওরফে দরজি মনির।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘যারাই নামের আগে ‘লীগ’ কিংবা ‘মুক্তিযোদ্ধা’ অথবা জাতির পিতার পরিবারের সদস্যদের নাম ব্যবহার করছে কেউই অনুমোদিত নয়। এরা ধান্দাবাজ, প্রতারক, সুবিধাবাদী ও ভুঁইফোড়। ইতিমধ্যে বিতর্কিত আড়াই শ রাজনৈতিক দোকানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশনা দিয়েছি। ব্যবস্থা গ্রহণ শুরু হয়েছে।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ভাষ্যমতে, দল যখন ক্ষমতায় না থাকে তখন তাদের দেখা মেলে না। ক্ষমতায় এলেই ওরা গড়ে তোলে নিত্যনতুন লীগ। সুবিধাভোগীরা গত এক যুগে আওয়ামী লীগের নাম ভাঙিয়ে গড়ে তুলেছে নতুন নতুন সংগঠন। এর মধ্যে ঢাকা নগরীতেই পাঁচ শতাধিক সংগঠন রয়েছে আওয়ামী লীগ, বঙ্গবন্ধু এবং মুক্তিযোদ্ধার নাম ব্যবহার করে। এ ছাড়াও জেলা-উপজেলা এমনকি ইউনিয়ন পর্যায়েও রয়েছে এদের সংগঠন। আওয়ামী লীগের অনুমোদন করা সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন থাকার পরও নিত্যনতুন লীগ গড়ে ওঠাকে বিস্ময়কর সুবিধাবাদী অবস্থান বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, ধান্দাবাজি আর চাঁদাবাজির মতলবেই সরকারি দলের নাম ভাঙিয়ে এরা গজিয়ে ওঠে। এখন এসব ভুঁইফোড় সংগঠনের নেতাদের বিরুদ্ধে অ্যাকশনে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। শুধু ভুঁইফোড় সংগঠনের নেতাই নয়, কারা এসব কথিত ভুঁইফোড় সংগঠনগুলোকে পৃষ্ঠপোষকতা, মদদ কিংবা নেপথ্যে থেকে উৎসাহিত করছে, তাদের ব্যাপারেও খোঁজ-খবর নিতে শুরু করেছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নীতিনির্ধারক নেতারা। ‘লীগ’ শব্দ ব্যবহার করে সর্বশেষ সংযোজন ছিল নানা কর্মকান্ডে বিতর্কিত হেলেনা জাহাঙ্গীরের চাকরিজীবী লীগ।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কৃষিবিদ আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘গঠনতন্ত্রের বাইরে অননুমোদিত দোকান খুলে অবৈধ কর্মকান্ডের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর অ্যাকশন শুরু হয়েছে। এসব অপকর্মের সঙ্গে জড়িতরা যত বড় ক্ষমতাধর ব্যক্তি বা নেতাই হোন না কেন, এবার কাউকেই আর ছাড় দেওয়া হবে না। এদের পৃষ্ঠপোষকদেরও খোঁজা হচ্ছে। দলের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।’
আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রে স্বীকৃত আটটি সহযোগী ও দুটি ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন। সহযোগী সংগঠনগুলো হচ্ছে যুবলীগ, কৃষক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ, যুব মহিলা লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, তাঁতী লীগ এবং মৎস্যজীবী লীগ। ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন হলো ছাত্রলীগ ও জাতীয় শ্রমিক লীগ। গঠনতন্ত্রে না থাকলেও মহিলা শ্রমিক লীগ, চিকিৎসকদের পেশাজীবী সংগঠন স্বাধীনতা চিকিৎসা পরিষদের কর্মকান্ডে আওয়ামী লীগের ‘সায়’ রয়েছে। এ ছাড়াও বঙ্গবন্ধু পরিষদ ও শেখ রাসেল শিশু-কিশোর পরিষদ, মোটর চালক লীগ, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের মতো কিছু সংগঠনের কর্মকান্ডে আওয়ামী লীগ ধারণ করে। কারণ হিসেবে দলটির একাধিক নেতা জানিয়েছেন, বঙ্গবন্ধু পরিষদ ও শেখ রাসেল শিশু-কিশোর পরিষদের মতো কিছু সংগঠন পঁচাত্তরের পর বৈরী পরিবেশে রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন উপেক্ষা করে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ প্রচার করেছে। এ কারণে ধারণ করে আওয়ামী লীগ।
আওয়ামী লীগের প্রবীণ বেশ কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর দেশে অনেকেই আওয়ামী লীগের নাম মুখে নিতে চায়নি। সে সময়ে সংগঠন হিসেবে বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, বঙ্গবন্ধু পরিষদ এবং আমরা সূর্যমুখীসহ হাতে গোনা ৪-৫টি সংগঠন ছিল যারা বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগের কথা বলত।
বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের ব্যানারে সে সময়ে দেশের প্রখ্যাত শিল্পী, অভিনেতা, অভিনেত্রী ও নির্মাতারা মানববন্ধন, মোমবাতি প্রজ্বালন করে বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচার দাবি করেছেন। রাজাকারের বিচার দাবি করেছেন। কিন্তু ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর এসব সংগঠন বাড়তে থাকে। গত দুই মেয়াদে বাড়ার পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। দলীয় ও সরকারি বৈধ কোনো অনুমোদন না থাকলেও এ সংগঠনের নেতাদের দৌরাত্ম্য এতই বেড়ে চলেছে যে, দলীয় অনেক নেতাকে পর্যন্ত তারা তোয়াক্কা করেন না। বিষয়টি আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকদের ভাবিয়ে তুলছে। দীর্ঘদিন পর হলেও আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকদের ঘুম ভাঙতে শুরু করেছে। অ্যাকশন শুরু হয়েছে ধান্দাবাজির এসব দোকানের বিরুদ্ধে।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘দলের সংকটকালে কাউকে পাওয়া যায়নি। ক্ষমতার এক যুগে গজিয়ে ওঠা সুযোগ সন্ধানী ও ভুঁইফোড় এসব সংগঠনের নেতাদের নানা বিতর্কিত কর্মকান্ডের কারণে মূল দল আওয়ামী লীগকে প্রায়ই বিভিন্ন ধরনের বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হচ্ছে। অথচ আওয়ামী লীগে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী এসব দলের কোনো অস্তিত্ব নেই কিংবা মূল দলের আনুষ্ঠানিক কোনো স্বীকৃতি নেই। ধান্দাবাজদের অপতৎপরতা বন্ধে আওয়ামী লীগ কাজ শুরু করেছে।’
গত তিন দশকে দেখা গেছে, মূল দলের সঙ্গে মিল রেখে নানা সংগঠন খুলে চাঁদাবাজি বা সরকারি সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করে এরা। বিএনপি ক্ষমতায় থাকলে ‘জাতীয়তাবাদী’ বা ‘জিয়া’ তকমা লাগিয়ে গজিয়ে ওঠে এসব সংগঠন। আর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে ‘বঙ্গবন্ধু’, ‘মুক্তিযুদ্ধ’ বা ‘আওয়ামী’ শব্দ ব্যবহার করে গঠন করা হয় নানা সংগঠন।
জানা গেছে, এসব ভুঁইফোড় সংগঠন গজিয়ে উঠতে সুযোগ করে দিয়েছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কিছু নেতা, বর্তমান ও সাবেক এমপি-মন্ত্রী। তাদের ‘রাজনৈতিক বেকারত্ব’ কাটাতে দলীয় প্রধানের দৃষ্টি আকর্ষণে বা বিরোধী পক্ষকে কটাক্ষ করতে ‘শব্দবোমা’ ফাটাতেই এসব ভুঁইফোড় সংগঠনকে প্রথমে পৃষ্ঠপোষকতা করতেন। তাদের কেউ কেউ মিডিয়ার ‘খোরাক’ দিতে চটকদার কথার পাশাপাশি দল ও সরকারের বিরুদ্ধেও কথা বলতেন। আওয়ামী লীগের প্রথম মেয়াদে কেন্দ্রের কয়েকজন নেতা এসব ‘দোকানে’র নামে অনুষ্ঠান আয়োজন করিয়ে সরকারের সমালোচনায় মুখর ছিলেন। তখন এসব নেতার মুখ বন্ধ করতে কয়েকজনকে মন্ত্রিত্বও দেওয়া হয়েছিল। আবার অনেকেই দলের গুরুত্বপূর্ণ পদও পেয়েছেন। আবার কয়েকজন নেতা সক্রিয় হয়েছেন। কেউ মন্ত্রিত্ব পাননি, আবার কেউ কেউ মন্ত্রিসভায় আছেন। মূলত রাজনীতির যেসব বিষয় নিয়ে বিতর্ক হয়, সেগুলো নিয়ে আলোচনা বা সেমিনারের আয়োজন করে এসব সংগঠনের উদ্যোক্তা।
অভিযোগ রয়েছে, ভুঁইফোড় সংগঠনের নেতারা তদবির করে মন্ত্রী-এমপিদের কাছ থেকে সুবিধা বাগানো, বিভিন্ন প্রকল্প হাতিয়ে নেওয়া, পদক বাণিজ্য, চাকরিতে নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতিতে তদবির করাসহ অসংখ্য কাজে লিপ্ত। এদের কেউ কেউ গোড়ার দিকে ঢাকা শহরে মেসে বাস করলেও কালক্রমে ভুঁইফোড় সংগঠন গড়ে তুলে বাড়ি-গাড়ির মালিক হয়েছেন। তারা আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় নেতা, সহযোগী সংগঠনের নেতা পরিচয় দিয়ে দাপিয়ে বেড়ান সচিবালয়সহ বিভিন্ন অফিস-আদালত। অন্যদিকে রাজধানীতে বিভিন্ন অনুষ্ঠান শেষে কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে ছবি তুলে তারা এলাকায় গিয়ে বিশাল বিশাল পোস্টার সাঁটিয়ে কেন্দ্রীয় নেতার পরিচয় দিচ্ছেন। আবার কেউ কেউ স্থানীয় অফিস-আদালতের টেন্ডারসহ নানা অনিয়মে জড়িয়ে পড়ছেন। অধিকাংশ ভুঁইফোড় সংগঠন ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউ দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় বললেও বাস্তবে কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায় না।
‘লীগ’ নামে শতাধিক সংগঠন : লীগ শব্দ ব্যবহার করে শতাধিক সংগঠন রয়েছে। এর মধ্যে ‘ওলামা লীগ’ নামে একটি ধর্মীয় সংগঠনের কর্মকান্ডে সরকারকে বারবার বিব্রত হতে হয়েছে। তবে এ সংগঠনের সঙ্গে সম্পর্ক না থাকার কথা বলেছেন দলটির নীতিনির্ধারকরা। কিন্তু বিতর্কিত কর্মকান্ডের কারণে সংগঠনটির বিরুদ্ধে দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি। ‘বঙ্গবন্ধু আওয়ামী পরিবার লীগ’ ‘কেন্দ্রীয় আল্লাহওয়ালা লীগ’ ‘মিডিয়া লীগ’ ‘বাংলাদেশ আওয়ামী সজীব ওয়াজেদ জয় লীগ’ ‘অভিভাবক লীগ’ ‘ইতিহাস চর্চা লীগ’ ‘অধিকার আদায় লীগ’ ‘বাংলাদেশ আওয়ামী শিশু লীগ’ ‘আওয়ামী তৃণমূল লীগ’ ‘উদ্যোক্তা লীগ’, ‘জননেত্রী শেখ হাসিনা কেন্দ্রীয় লীগ’ ‘আওয়ামী প্রচার লীগ’ ‘আওয়ামী সমবায় লীগ’ আওয়ামী তৃণমূল লীগ’ ‘আওয়ামী ছিন্নমূল হকার্স লীগ’ ‘আওয়ামী তরুণ লীগ’ ‘আওয়ামী রিকশা মালিক-শ্রমিক ঐক্য লীগ’ ‘আওয়ামী যুব হকার্স লীগ’ ‘আওয়ামী মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম লীগ’ ‘আওয়ামী পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধা লীগ’ ‘আওয়ামী পরিবহন শ্রমিক লীগ’ ‘আওয়ামী নৌকার মাঝি শ্রমিক লীগ’ ‘আওয়ামী ক্ষুদ্র মৎস্যজীবী লীগ’ ‘আওয়ামী যুব সাংস্কৃতিক জোট লীগ’, বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগ, ‘বঙ্গবন্ধু সংহতি লীগ’ ‘আওয়ামী ওলামা লীগ’ ‘বঙ্গবন্ধু লেখক লীগ’, ‘বঙ্গবন্ধু প্রজন্ম লীগ’ ‘বঙ্গবন্ধু বাস্তুহারা লীগ’, ‘বঙ্গবন্ধু লেখক লীগ’ বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগ, মুক্তিযোদ্ধা তরুণ লীগ, দেশীয় চিকিৎসক লীগ, ছিন্নমূল মৎস্যজীবী লীগ, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী লীগ, ডিজিটাল ছাত্রলীগ, ডিজিটাল আওয়ামী প্রজন্ম লীগ, ডিজিটাল আওয়ামী ওলামা লীগ, বাংলাদেশ আওয়ামী পর্যটন লীগ, তৃণমূল প্রজন্ম লীগ, সজীব ওয়াজেদ জয় গবেষণা লীগ, বাংলাদেশ তথ্যপ্রযুক্তি লীগ, আওয়ামী শিশু লীগ, আওয়ামী তৃণমূল লীগ, আওয়ামী তরুণ প্রজন্ম লীগ, আওয়ামী চাকরিজীবী লীগ, বাংলাদেশ জনসেবা লীগ, আওয়ামী শিশু-কিশোর লীগ, ‘বাংলাদেশ ইলেকট্রিক লীগ’, ‘নাপিত লীগ’, ‘ফকির লীগ’ ‘জননেত্রী লীগ’, ‘প্রবীণ লীগ’ ‘ডিজিটাল লীগ’ নাগরিক লীগ’ ‘আওয়ামী হারবাল লীগ, আওয়ামী অনলাইন লীগ, বিশ্ব আওয়ামী অনলাইন লীগ, উন্নয়ন প্রচার লীগ, বিশ্বমাতা উন্নয়ন লীগ, প্রবীণ হিতোষী লীগ, ৪০টি সংগঠনের সমন্বয়ে ‘সম্মিলিত আওয়ামী পরিষদ’, তরিকত লীগ, প্রতিবন্ধী উন্নয়ন লীগ, সেবক লীগ প্রভৃতি।
বঙ্গবন্ধু, বঙ্গমাতা ও পরিবারের নামে যত সংগঠন: ‘বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও চেতনা গবেষণা পরিষদ, বঙ্গবন্ধু একাডেমি, বঙ্গবন্ধু যুব পরিষদ, বঙ্গবন্ধু ছাত্র পরিষদ, বঙ্গবন্ধু স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদ, বঙ্গবন্ধু আওয়ামী হকার্স ফেডারেশন, বঙ্গবন্ধুর চিন্তাধারা বাস্তবায়ন পরিষদ, বঙ্গবন্ধু ডিপ্লোমা প্রকৌশলী পরিষদ, বঙ্গবন্ধু নাগরিক সংহতি পরিষদ, বঙ্গবন্ধু গবেষণা পরিষদ, আমরা মুজিব সেনা, চেতনায় মুজিব, রাসেল মেমোরিয়াল একাডেমি, জননেত্রী পরিষদ, দেশরত্ন পরিষদ, বঙ্গমাতা পরিষদ, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব পরিষদ, বঙ্গবন্ধু যুব পরিষদ, বঙ্গবন্ধু বাস্তুহারা লীগ, বঙ্গবন্ধু আওয়ামী হকার্স ফেডারেশন, বঙ্গবন্ধু গ্রাম ডাক্তার পরিষদ, বঙ্গবন্ধু আদর্শ পরিষদ, বঙ্গবন্ধু আবৃত্তি পরিষদ, বঙ্গমাতা পরিষদ, আমরা মুজিব হবো প্রভৃতি। এ ছাড়াও ধান্দাবাজির দোকানের মধ্যে রয়েছে- নৌকা সমর্থক গোষ্ঠী, নৌকার নতুন প্রজন্ম, আমরা নবীন নৌকার প্রজন্ম, আওয়ামী শিশু যুবক সাংস্কৃতিক জোট, ঠিকানা বাংলাদেশ, জনতার প্রত্যাশা ইত্যাদি। সূত্র: বিডি প্রতিদিন
ফাইল ছবি
বাংলাদেশে শুধু নিজের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত নই, পাশাপাশি দূতাবাসসহ যারা এখানে কাজ করেন তাদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ।
রোববার (২৪ সেপ্টেম্বর) বেসরকারি টিভি চ্যানেল ২৪-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন।
পিটার হাস বলেন, যুক্তরাষ্ট্র অবাধ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থেই ভিসানীতি প্রয়োগ করে থাকে। কতজনের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে, তা গুরুত্বপূর্ণ নয়। আমরা নিরপেক্ষভাবে এই ভিসা নীতি প্রয়োগ করেছি। কারও পক্ষে কিংবা কারও বিপক্ষে নয়। তারা ক্ষমতাসীন দলের নাকি বিরোধী দলে, তারা সরকারের পক্ষে নাকি বিপক্ষে।
তিনি বলেন, সরকারি দল, বিরোধীদল ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পর আগামীতে বিচারবিভাগ এবং গণমাধ্যমও ভিসা নীতিতে যুক্ত হতে পারে। এসব কিছুই তাদের কর্মকাণ্ডের ওপর নির্ভর করবে। এখন দেখার বিষয় কতটা নিরপেক্ষভাবে প্রভাবমুক্ত হয়ে বিচারকার্য পরিচালিত হচ্ছে।
ভিসা নীতি কোনো স্বাধীন দেশের ওপর হস্তক্ষেপ নয় উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত বলেন, বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্র ও মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা যুক্তরাষ্ট্রের দায়িত্ব। প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে চায়ের দোকানদারও অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সবাই যখন একই জিনিস চাচ্ছে তখন আমাদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে তার বাস্তবায়ন করা। সবাই তার দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করবে, এটাই তাদের প্রত্যাশা।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে পিটার হাস আরও বলেন, মিয়ানমারে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত সেখানে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো ঠিক হবে না। সূত্র: ইত্তেফাক