a
ফাইল ছবি
করোনাভাইরাস মহামারীর সময় গত ১ বছরে দেশে কোটিপতি আমানতকারীর ব্যাংক হিসাব বেড়েছে সাড়ে ১১ হাজারেরও অধিক, যা স্বাভাবিক সময়ের চেয়েও বেশি। গত মার্চ শেষে দেশের ব্যাংকগুলোতে কোটিপতি আমানতকারীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৪ হাজার ২৭২, যার মধ্যে ৭২ হাজার ৭৮০ জন বা ৭৭ শতাংশই বেড়েছে গত ১২ বছরে। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা যায়, করোনার প্রাদুর্ভাব শুরুর আগে গত বছরের মার্চ পর্যন্ত দেশে ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক কোটিপতি আমানতকারীর হিসাব সংখ্যা ছিল ৮২ হাজার ৬২৫ জন। চলতি বছরের মার্চ শেষে তা বেড়ে হয়েছে ৯৪ হাজার ২৭২ জন। ফলে করোনার গত ১ বছরে দেশে নতুন কোটিপতি আমানতকারী বেড়েছে ১১ হাজার ৬৪৭ জন। এর মধ্যে চলতি মাসের প্রথম তিন মাসে (জানুয়ারি-মার্চ) বেড়েছে ৩৮২ জন।
আর স্বাভাবিক সময়ে ২০১৯ সালের মার্চ থেকে ২০২০ সালের মার্চ পর্যন্ত দেশে কোটিপতি আমানতকারী বেড়েছিল মাত্র ছয় হাজার ৩৪৯ জন। আর ২০২০ সালের পুরো সময়ে বেড়েছিল এক হাজার ৫১ জন। এর মানে করোনাকালেই কোটিপতি আমানতকারীর হিসাবের প্রবৃদ্ধি হয়েছে সবচেয়ে বেশি।
অন্যদিকে ২০০৯ সালে দেশে কোটিপতি আমানতকারীর সংখ্যা ছিল মাত্র ২১ হাজার ৪৯২ জন। এ হিসাবে গত ১২ বছরে দেশে নতুন কোটিপতি বেড়েছে ৭২ হাজার ৭৮০ জন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে আরও দেখা যায়, গত মার্চ শেষে দেশে মোট আমানত হিসাব দাঁড়িয়েছে ১১ কোটি ৮৫ লাখ ৫২ হাজার ৩৩৭টি। এসব হিসাবের বিপরীতে আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৩ লাখ ৮৪ হাজার ৩২৫ কোটি টাকা। সূত্র: বিডি প্রতিদিন
ফাইল ছবি
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র জিএম আবুল কালাম আজাদ বলেছেন, স্বাধীনতার পর থেকে দেশের কোনো ব্যাংক বন্ধ হয়ে যায়নি। আগামীতেও কোনো ব্যাংক বন্ধ হয়ে যাবে না। এক্ষেত্রে ব্যাংকের আমানতের টাকা নিয়ে গ্রাহকদের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।’
রোববার (১৩ নভেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের সঙ্গে বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্টিন রাইজারের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠক শেষে আবুল কালাম আজাদ এ কথা বলেন।
তিনি গ্রাহকের উদ্দেশে বলেন, কোনো ব্যাংক আমানতের টাকা দিতে ব্যর্থ হলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে বাংলাদেশ ব্যাংক। গ্রাহকদের যে কোনো অভিযোগ ১৬২৩৬ নাম্বারে কল করে জানালেই হবে। অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা তদন্ত করবো।
তিনি বলেন, দেশে বিশ্বব্যাংকের চলমান যেসব প্রকল্প রয়েছে সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এ ব্যাপারে বিশ্বব্যাংক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে। এছাড়া নতুন প্রকল্পে বিনিয়োগের বিষয়ে বিশ্বব্যাংক আগ্রহ প্রকাশ করেছে। সূত্র: বিডি প্রতিদিন
ছবি সংগৃহীত
নিউজ ডেস্ক: একটি সমাজের জন্য সংস্কার গুরুত্বপূর্ণ এবং যখন সমাজ বিভিন্ন সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংকটে ভোগে, তখন তা অপরিহার্য হয়ে ওঠে। এই বহুমাত্রিক সমস্যাগুলো কাটিয়ে উঠতে সংস্কার অপরিহার্য। বাংলাদেশ সমাজ ১৯৭১ সালের ডিসেম্বর থেকে নানাবিধ সামাজিক-অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংকটে ভুগছে।
তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ উচ্চ আশা ও আকাঙ্ক্ষা নিয়ে স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করেছিল, কিন্তু অল্প কিছুদিনের মধ্যেই শেখ মুজিবের প্রথম সরকারের আচরণে তারা হতাশ হয়। সমাজে অস্থিরতা ও বিশৃঙ্খলা দেখা দেয় এবং সরকার শুরু থেকেই রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়। প্রথম বিরোধীতা আসে আওয়ামী লীগের ভিতর থেকেই। মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক সিরাজুল আলম খান ১৯৭২ সালের শুরুতেই শেখ মুজিবের নেতৃত্বকে প্রকাশ্যে চ্যালেঞ্জ জানান। তার নির্দেশেই জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) গঠিত হয়, এবং তাকেই এই র্যাডিকাল রাজনৈতিক দলের মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
মেজর জলিল এবং এ এস এম আব্দুর রবের নেতৃত্বে নতুন রাজনৈতিক দল জাসদ অল্প সময়ের মধ্যেই দেশের তরুণ বিপ্লবীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়। তারা বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার করে এবং শেখ মুজিব সরকারের প্রধান টার্গেটে পরিণত হয়। বলা হয়, শেখ মুজিব আমলে কয়েক হাজার জাসদ নেতা-কর্মী নিহত হয়, কিন্তু তবুও তারা রাজনীতি থেকে মুছে যায়নি, বরং ১৯৭৫ সালের আগস্টে শেখ মুজিব পতনের আগ পর্যন্ত সক্রিয় ছিল।
জাসদের ছাত্র সংগঠন দেশের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। তারা সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যেও একটি গোপন সংগঠন গড়ে তুলতে সক্ষম হয় এবং ১৯৭৫ সালের ৭ই নভেম্বর ‘সিপাহী-জনতা বিপ্লবে’ তাদের ভূমিকা ছিল। কর্নেল তাহেরের নেতৃত্বে বিপ্লবী সেনা গোষ্ঠী জিয়াউর রহমানকে ব্ল্যাকমেইল করার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু তা সফল হয়নি।
৭ই নভেম্বর ১৯৭৫ সালের সিপাহী-জনতা বিপ্লবের ফলেই জিয়াউর রহমান নেতৃত্বে আসেন, এবং সে সময় জাতির ক্রান্তিকালে তিনি নেতৃত্বদানের উপযুক্ততা প্রমাণ করেন। জিয়াউর রহমানই ছিলেন সেই নেতা, যিনি জাতিকে সঠিক পথে আনতে বহু সামাজিক-অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংস্কার বাস্তবায়ন করেন। তাকে যথার্থই আধুনিক বাংলাদেশের রূপকার এবং একজন প্রকৃত সংস্কারক হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
জিয়াউর রহমানের পতনের পর দেশের রাজনীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন আসে এবং জেনারেল এরশাদ একজন সামরিক শাসক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হন। যদিও তিনি বহু উন্নয়নমূলক ও সংস্কারমূলক কাজ করেন, তবুও তিনি বাংলাদেশের অন্যতম বিতর্কিত শাসক হিসেবে বিবেচিত হন।
বেগম খালেদা জিয়ার সরকার গণতান্ত্রিক চেতনার জন্য প্রসিদ্ধ হলেও, সামাজিক-অর্থনৈতিক খাতে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনতে পারেনি। তবে তার রাজনৈতিক ভূমিকা একটি প্রকৃত রাজনৈতিক সংস্কৃতির প্রতীক হিসেবে ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
গত পনেরো বছরের ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা শাসনামলে দেশ এক অন্ধকার যুগে প্রবেশ করে। দেশের সামাজিক-অর্থনৈতিক অবস্থা সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়ে যায় এবং সমাজ তার মেরুদণ্ড হারাতে বসে। বাংলাদেশ সমাজ তার স্বকীয়তা ও গৌরব হারিয়ে বিদেশি প্রভুদের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। সমাজ চরম দুর্নীতিতে নিমজ্জিত হয় এবং নৈতিক অবক্ষয়ের ধারালো প্রভাব স্পষ্টভাবে অনুভূত হয়। সংক্ষেপে, সমাজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যায়।
কিন্তু ২০২৪ সালের জুলাই বিপ্লবের মাধ্যমে সমাজ রক্ষা পায়। ড. ইউনূসের সরকার আমাদের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ বিবেচিত হয়েছে।
এখন পর্যন্ত বর্তমান সরকার বিভিন্ন সামাজিক-অর্থনৈতিক খাতে সন্তোষজনক অগ্রগতি অর্জন করেছে। সরকারের নেওয়া সংস্কারমূলক উদ্যোগগুলো জনগণের প্রশংসা পেয়েছে। তবে এগুলো খুব ধীর গতিতে হচ্ছে এবং এতে বিপ্লবী স্পৃহা ও চরিত্রের অভাব দেখা যাচ্ছে।
সরকার রাজনৈতিক দলগুলোকে জাতীয় ঐকমত্যের জন্য একত্র করতে অত্যন্ত বেশি সময় নিচ্ছে, যা অপ্রয়োজনীয় বিতর্কের জন্ম দিচ্ছে এবং বিষয়গুলোকে জটিল করে তুলছে।
নারী কমিশনের পক্ষ থেকে যেসব জনবিরোধী ও ইসলামবিরোধী প্রস্তাব এসেছে, তা সমাজে বড় প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। তারা কি কোনো গোপন এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে? সরকার এখনই এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে একটি নতুন কমিশন গঠনের ঘোষণা দিতে পারত। আমরা বিশ্বাস করার যথেষ্ট কারণ রাখি যে কোথাও না কোথাও কিছু একটা সমস্যা আছে।
আধুনিক পেশাদার সশস্ত্র বাহিনী গঠনের জন্য সামরিক খাতে প্রয়োজনীয় সংস্কার অপরিহার্য। বাছাই প্রক্রিয়া ও প্রশিক্ষণ পদ্ধতিগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, সঙ্গে আরও কিছু পরিবর্তন প্রয়োজন যা সেনাবাহিনীকে একটি প্রকৃত যুদ্ধক্ষম বাহিনীতে পরিণত করতে পারে।
অনির্দিষ্টকাল ধরে সামরিক বাহিনীর প্রশাসনিক ভূমিকা প্রশ্রয় দেওয়া উচিত নয়। এতে দীর্ঘমেয়াদে পেশাদারিত্বের ক্ষতি হয়। এখনো পর্যন্ত তরুণদের জন্য বাধ্যতামূলক সামরিক প্রশিক্ষণের কোনো অগ্রগতি দেখা যায়নি। সাম্প্রতিক সেনা সদর দফতরের একটি চিঠিকে অনেকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে ভারতীয় প্রভাবের নিদর্শন বলে মনে করছেন।
রাখাইন বাহিনী ও আরাকানের সাধারণ জনগণের জন্য একটি নিরাপদ ও মানবিক করিডোর দেওয়ার প্রস্তাব একটি জাতীয় ইস্যুতে পরিণত হয়েছে এবং এই বিষয়ে সরকার এককভাবে কোনো হঠকারী সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। সংবেদনশীল জাতীয় নিরাপত্তা ইস্যুতে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বসা উচিত। আমরা এমন এক বিদেশি নাগরিকের পরামর্শের ওপর পুরোপুরি নির্ভর করতে পারি না, যিনি বাংলাদেশের চেয়ে তার বর্তমান আবাসস্থল দেশকে বেশি প্রাধান্য দেন।
আমরা একটি দরিদ্র জাতি এবং এই অঞ্চলে নতুন ভূরাজনৈতিক সংকট তৈরির সামর্থ্য আমাদের নেই। ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক শক্তিগুলো এই এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের জন্য মুখোমুখি হবে এবং বাংলাদেশকে যেকোনো এক পক্ষ নিতে হবে। এতে দেশ আন্তর্জাতিক শক্তির দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়বে এবং তার ফলাফল হবে মারাত্মক।
সংবিধান সংস্কার কমিশন, যার নেতৃত্বে আরেক বিদেশি নাগরিক রয়েছেন, তিনি আমাদের সমাজে বহুত্ববাদ প্রতিষ্ঠার কথা বলছেন—এটা ভালোভাবে জেনেই যে বাংলাদেশের জনগণের আকাঙ্ক্ষা কী। জনগণ ভবিষ্যতের সংবিধানে কোনো ধর্মনিরপেক্ষ ভিত্তিক সংস্কার মেনে নেবে না। প্রয়োজনে জনগণ এমন জনবিরোধী পদক্ষেপের বিরুদ্ধে আবারো জেগে উঠবে। এ বিষয়ে সর্বশেষ কী হয়েছে তা জনগণের অজানা। এটি কি শুধু একটি বিলম্ব কৌশল? জাতির কাছে এটি স্পষ্ট নয়।
একটি ভালো সরকারের লক্ষণ হচ্ছে স্বচ্ছতা, কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই তা দৃশ্যমান নয়; বরং সরকারের কিছু সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হচ্ছে। আমরা ভবিষ্যতে আরও বেশি গতিশীলতা ও স্বচ্ছতা দেখতে চাই।